গর্ভকালীন ত্বক ও চুলের যত্নে করণীয়
একজন মা তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা, সময় দিয়ে সন্তানকে লালনপালন করেন। মাতৃত্বের যাত্রা শুরু হয় গর্ভাবস্থা থেকে। গর্ভাবস্থা প্রত্যেক নারীর জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি সময়। আর এই সময়ে দেখা দেয় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন। এর প্রভাব ত্বকেই বেশি দেখা যায়। আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের ত্বকের সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে।
ত্বকের ফাটা দাগ বা স্ট্রেচ মার্ক
৯০ শতাংশ নারীর দেখা যায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত ফাটা দাগ। যেহেতু বাড়তি ওজনের বিষয়টি রয়েছে, মা ও সন্তানের ওজন বাড়ার সঙ্গে ত্বক টান টান হতে থাকে আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোলাজেন, ইলাস্টিন। তাই গর্ভের শেষের দিকে অথবা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর স্ট্রেচমার্কগুলো সৌন্দর্যহানিকর হয়। এ দাগগুলো একবার হলে ত্বককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন। তাই যাঁরা পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা গর্ভাবস্থার শুরুতে লিপিড রেপ্লিনিশিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
এখন নানা রকম স্ট্রেচমার্ক ক্রিম পাওয়া যায়। এ ছাড়া নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, কোকো বাটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
গোসলের পর ও রাতে শোয়ার আগে পেট, ঊরু, কোমরে ক্রিম বা তেল ম্যাসাজ করতে হবে চক্রাকার গতিতে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক মসৃণ হয়, স্ট্রেচমার্কের ঝুঁকি কম থাকে। অ্যাস্থেটিক মেডিসিনের মাধ্যমে এই ফাটা দাগ অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, হাইফ্রিকোয়েন্সি আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় এই ক্ষেত্রে।
ত্বকের পিগমেন্টেশন
এ সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায়, ত্বকে সৃষ্টি হয় নানা ধরনের পিগমেন্টরি ডিজঅর্ডার। হঠাৎ করে মুখে, গলায় কালো বা বাদামি যে ছোপ দেখা দেয়। এর নাম হলো ‘মাস্ক অব প্রেগন্যান্সি’। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের জন্মের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এ দাগ চলে যায়। এ ক্ষেত্রে আরবুটিন ল্যাকটিক এসিডযুক্ত স্কিন লাইটেনিং ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডার্মাটোলোজিস্টরা। হাইড্রোকুইনন, রেটিনয়েড ব্যবহার একবারেই নিষেধ। অনেক ক্ষেত্রে মেছতা যদি দুই থেকে তিন মাস পর না যায়, তাহলে স্কিন রিজেনারেশন পিল, মাইক্রোনিডলিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব।
ত্বকের ব্রণ বা র্যাশ
গর্ভাবস্থায় ত্বকের তৈলগ্রন্থিগুলোর ক্ষমতা বাড়ার জন্য মুখে, ঘাড়ে, হাতে ব্রণ হয়। হরমোনের পরিবর্তন ও ঠিকমতো ত্বক পরিষ্কার না করা ব্রণের কারণ। তাই এ বিশেষ সময়টিতে সেবাম রেগুলেটর ক্লিঞ্জার ও ওয়াটার বেজড অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার মুখের জন্য ব্যবহার করলে সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। জিংক সালফারযুক্ত লোশন বা ইমালশনই যথেষ্ট ব্রণের চিকিৎসায়।
গর্ভাবস্থায় ত্বকের আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়। সেটি হলো প্রুরাইটিক আর্টিকোরিয়াল প্যাপুলাক্রান্ত প্লাক। পেট, নাভি, ঊরুতে লালচে র্যাশ হয়। এটি বেশ চুলকায়। এর চিকিৎসায় মাইল্ড টপিকাল স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এটি প্রসবের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়। তাই ভয়ের কিছু নেই।
চুলের পরিবর্তন
চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল পড়া এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন গর্ভবতী এবং যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাঁরা। খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি, নিজের প্রতি উদাসীনতা ইত্যাদি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আমাদের দেশে অধিকাংশ মা আয়রন ও ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতিতে ভোগেন। তাই মাদের নিজেদের প্রতি সচেতন হতে হবে।
আমরা অনেকেই জানি না, গর্ভাবস্থায় শরীরের যে পরিবর্তন হয়, তাকে টোটাল বডি রিজেনারেশন বলা হয়। তাই এ সময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, অ্যান্টিন্যাটাল চেকআপ, মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম ও ত্বকের যত্নের মাধ্যমে ত্বক থাকবে সুস্থ ও সজীব।