পানিতে ডুবে গেলে করণীয়
পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেশে খুব একটা বিরল নয়। প্রায়ই শোনা যায়, গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে কোনো শিশু বা কিশোর।
এ ছাড়া লঞ্চডুবি, নৌকাডুবিতে প্রবীণরা পানিতে ডুবে মারা গেছে, এমন খবরও প্রায়ই শোনা যায়।
মৃত্যুর কারণ
পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ হলো, শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া। পানি শ্বাসনালি ও ফুসফুসে ঢুকে যাওয়ার কারণেই এমনটি হয়। দুই থেকে তিন মিনিট শ্বাস বন্ধ হয়ে থাকলে মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি হয়, আর চার থেকে ছয় মিনিট যদি শ্বাস বন্ধ থাকে, তাহলে মৃত্যু ঘটে। শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হওয়া ছাড়াও প্রচুর পানি খাওয়ার কারণে রোগীর পেট ফুলে যায়।
কী করবেন
- পানিতে ডুবন্ত মানুষকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্ধার করতে হবে।
- যদি রোগীর শ্বাস এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে থাকে, বুঝতে হবে এটা খুব জরুরি অবস্থা, কেননা এ রোগীর আয়ু আর মাত্র চার মিনিট। অতএব, যখনই ঠাঁই পানিতে পৌঁছে যাবেন, সঙ্গে সঙ্গেই রোগীর মুখে মুখ রেখে শ্বাস দিতে শুরু করবেন।
- যদি ওপরের প্রক্রিয়া চলাকালীন ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ না করে অর্থাৎ শ্বাস ক্রিয়া চালু না হয়, তাহলে বুঝতে হবে শ্বাসনালি ও ফুসফুস সম্পূর্ণরূপে পানি দিয়ে পূর্ণ। এ অবস্থায় রোগীকে পাড়ে এনে শ্বাসনালি ও ফুসফুস থেকে পানি বের করতে হবে। প্রথমে রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে, পেট ধরে উঁচু করতে হবে, যাতে মাথা এবং বুক নিচের দিকে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে পিঠে চাপড় দিতে হবে। এতে ফুসফুস, শ্বাসনালি ও পাকস্থলীর পানি বের হয়ে আসবে। তারপর আবার কৃত্রিম পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস আরম্ভ না হয়।
- এবার ভেজা কাপড় খুলে নিয়ে রোগীকে আরামে শুইয়ে রাখতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন পা কিছুটা ওপরে এবং মাথা কিছুটা নিচের দিকে থাকে।
- এ সময় রোগীকে গরম দুধ, চা ইত্যাদি খেতে দেওয়া যায়।
- এরপর রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
কী করবেন না
- অপারদর্শী সাঁতারে কোনো লোক ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করতে যাবেন না, এতে করে দুজনের জীবনই বিপন্ন হতে পারে।
- রোগীর ফুসফুস ও শ্বাসনালি থেকে পানি বের করার জন্য খুব বেশি সময় নেবেন না।
- প্রাথমিক বিপদ কাটিয়ে ওঠার পর রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখবেন না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।