পায়ুপথের রোগের উপসর্গ কী?
পায়ুপথে বিভিন্ন রোগ হয়। পাইলস, ফিস্টুলা, ফিসার, প্রলেপস ইত্যাদি পায়ুপথের রোগ। পায়ুপথের রোগের অন্যতম উপসর্গ হলো মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া। এ ছাড়া রোগ অনুযায়ী বিভিন্ন উপসর্গ রয়েছে।
পায়ুপথের রোগের উপসর্গের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৩৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. রকিবুল মোহাম্মদ আনোয়ার। বর্তমানে তিনি রাহেটিড পেপসেলাইজড হাসপাতালের কলোরেক্টাল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অন্যান্য কী কী উপসর্গ হতে পারে, যদি পায়ুপথের রোগগুলো হয়?
উত্তর : এটা নির্ভর করবে রোগটি কী, তার ওপর। যদি ফিস্টুলা হয়, তাহলে জটিল লক্ষণ হয়, একটি ফোঁড়ার মতো হয়, ফোঁড়াটা বেশ একটু বড় হয়ে, এরপর হঠাৎ করে ফেটে যায়। যখন ফোঁড়াটা হয়, তখন প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বরও আসতে পারে। ফোঁড়াটা ফেটে গেলে তখন কিছুটা আরাম আসে। কিন্তু ফোঁড়াটা বাইরে শুধু ফাটে না, ভেতরেও ফেটে যায়। তখন একটি নালি তৈরি হয়। ট্র্যাক বলি। কখনো চলে যায় না। বন্ধ হতে পারে সময়ে সময়ে। লক্ষণ অনেক দিন ধরে থাকল না। এরপর হঠাৎ করে আবার মলের ময়লা ওই নালির অ্যাবসেস দিয়ে যেতে পারে, সেহেতু সেটা আবার ফোলা শুরু করে। হয়তো আগের মতো অত ফুলে না, কিন্তু আবার একই যে ফেটে বের হয়ে আসতে হয়। এ রকম চলতে থাকে। সুতরাং বাইরে একটি মুখ থাকে এবং ভেতরে একটি মুখ থাকে। এটি হলো ফিস্টুলা।
পাইলস থেকে রক্ত পড়ে। চার ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ডিগ্রি হলে ভেতরে থাকে, কিন্তু বের হয়ে আসে না। রক্ত পড়ে। দ্বিতীয় ডিগ্রি হলে বের হয়ে আসে পায়খানা করার সময়। আবার নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায়। তৃতীয় ডিগ্রি হলে বের হয়ে আসে, তবে পরে নিজেকে পুশ করে ঢুকিয়ে দিতে হয়। আর চার ডিগ্রি হলে বের হয়ে এলেও পুশ করলে বাইরে থাকে। এই পরের তিন ডিগ্রি যেগুলো, এগুলোতে রক্তপাত হতেও পারে, নাও হতে পারে। এগুলো হলো পাইলসের লক্ষণ।
ফিসারটা হলা খুব জটিল। হঠাৎ করে হয়তো কোষ্ঠকাঠিন্য হলো এবং জোর করে পায়খানা বের হয়ে আসাতে, পায়ুপথের ওখানে ছিঁড়ে যায়। ছিঁড়ে গেলে তো অবশ্যই প্রচণ্ড ব্যথা হবে। এবং একিউট (স্বল্পমেয়াদি) ফিসার যেটি, এখানে পায়খানা করতে গেলেই ব্যথা শুরু হয়, সেই ব্যথা অনেকক্ষণ ধরে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে কমে। আর এর যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়। ক্রনিক (দীর্ঘমেয়াদি) ফিসার হলে তখন অন্য রকম লক্ষণ হয়। লক্ষণ তত মারাত্মক হয় না। তবে দীর্ঘমেয়াদি হয়।
আর প্রলেপস হলো পায়ুপথ থেকে মলদ্বারটা বের হয়ে আসে। এতে দুই ধরনের অবস্থা দেখা দেয়। একটি হলো মেয়েদের। মেয়েদের যদি সন্তান জন্মদানের সময় কোনো আঘাত হয়, তাহলে তাদের প্রলেপস হতে পারে। আর শিশু বয়সে অপুষ্টি, ডায়রিয়া ইত্যাদি থেকেও সমস্যা হতে পারে। এগুলো বেনাইন।
তবে পায়ুপথের আবার ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া প্রদাহরোধী বাউয়েল ডিজিস হতে পারে।
যে ধরনের ক্যানসার সেটা যদি পায়ুপথে হয়, স্কোমারসেল করসিনোমা হয়, তাহলে এটি রেডিও, কেমোথেরাপিতেও শেষ হতে পারে। কিন্তু এডিনোকারসিনোমা যেটি হয়, এতে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপির পাশাপাশি অস্ত্রোপচার লাগে।
আর প্রদাহজনিত বাউল ডিজিস, যেমন টিউবার কলোসিস, এগুলো সারতে রোগ নির্ণয় করতে হয় এবং সঠিক চিকিৎসা করতে হয়।