ডায়াবেটিস রোগীদের কিডনি রোগের আশঙ্কা বেশি কেন?
ডায়াবেটিস এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে যেন। এই রোগটি শরীরের সব অঙ্গকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর এই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাদ যায় না কিডনিও।
ডায়াবেটিস রোগীদের কিডনি রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি কেন, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৩৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. শামীম আহমেদ। তিনি জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে নেফ্রোলজি বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি কেন? বাংলাদেশে ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগের পরিস্থিতি কেমন?
উত্তর : এখন বিশ্বের সব দেশেই ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ, অর্থাৎ ধীর গতির কিডনি রোগ হওয়ার প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। দেখা যাচ্ছে, ডায়ালাইসিসের রোগীর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ রোগী ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগে আক্রান্ত। এখন এটি ইপিডিমিক অবস্থায় রয়েছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উন্নয়নশীল দেশে ডায়াবেটিসটা এখন বেশি হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় হলো স্থূলতা। যাদেরই স্থূলতা, তাদেরই ডায়াবেটিস হচ্ছে। ডায়াবেটিসের সঙ্গে স্থূলতা, এটি কিন্তু একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত। ডায়াবেটিস থাকলেও কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১০০ ভাগের চার/পাঁচ ভাগ রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে কিডনি আক্রান্ত হচ্ছে। এটা একটা দিক। ডায়াবেটিস থাকার পরে কিডনি আক্রান্ত হচ্ছে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আরেকটি কী করছে, ডায়াবেটিস থাকলে কিডনি সংক্রমণ হচ্ছে। সেটা বেড়ে যাচ্ছে। এই সংক্রমণ সারানো খুব কঠিন কাজ। যখ্ন আসছে, আমরা ওষুধ দিচ্ছি, দুই সপ্তাহ, ইনজেকশন আকারে ওষুধ দিচ্ছি। দুই/তিন মাস পরে আবার তার সংক্রমণ হচ্ছে। বিশেষ করে যারা নারী, স্থূল, ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিস থাকলে হার্টেরও সমস্যা থাকে, ব্লাড প্রেশারও থাকে। আপনি জানেন, কিডনির রোগের জন্য কিন্তু রোগী মারা যায় না। মারা যায় কার্ডিওভাসকুলার রোগের কারণে। একশটি রোগীর যদি ডায়াবেটিস থাকে, প্রত্যেকটিতেই কিন্তু কিডনি ফেইলিউর হয় না। এর মধ্যে শতকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগ, এটিকে আমরা পাঁচ ভাগে ভাগ করি। আপনারা জানেন, ডায়াবেটিস হলে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। কিডনির কাজ বেশি করতে হয়। কিডনির আকার বেড়ে যায়।এটি হলো প্রথম পর্যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টা রোগী ভালো থাকে, আর ৫০টা রোগী পরের পর্যায়ে।
এর পরের পর্যায় হলো মাইক্রোঅ্যালবুমিন পর্যায়। আমরা যে সাধারণত পরীক্ষা করি, এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। এর জন্য বিশেষ মাইক্রোঅ্যালবুমিন পরীক্ষা রয়েছে। এই পর্যায়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে তার রক্তচাপ বাড়তে থাকে। এই পর্যায়ে তার যে কিডনির ধারাটা বেশি ছিল, সেটি কমে যায়। এই পর্যায়ে আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। অর্থাৎ তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তার প্রোটিন লিককে বন্ধ করতে হবে। এই তিনটি জিনিস আমরা যদি ফেইল করি, তাহলে এই পর্যায়ের পরের পর্যায়ে বেশি প্রোটিনইউরিয়া হবে, তার ক্রিয়েটিনিন বাড়তে শুরু করবে। এই ক্রিয়েটিনিন আস্তে আস্তে রেনাল ফেইলিউরের বা কিডনি অকার্যকরের দিকে যাবে।
একটি কিডনি ডায়াবেটিস থেকে ডায়ালাইসিস পর্যায়ে যেতে বলে যে ২০ থেকে ৩০ বা ৩৫ বছর লাগে।এখন প্রথম পর্যায় কিন্তু থেকে যদি প্রতিরোধ করি তাহলে রোগ ধীর গতিতে বাড়বে। হয়তো আমরা শেষের পর্যায়ে সম্পূর্ণ নাও যেতে পারি। সেই জন্য আমার মনে হয় প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা ভালো। প্রাথমিক পর্যায় কখন, যখন মাইক্রোঅ্যালবুমিন পর্যায়। তখন তো রোগী বোঝে না। ডায়াবেটিস রয়েছে, ওষুধও খাচ্ছে, তবে যদি মাইক্রোঅ্যালবুমিন পর্যায়ে যায়, এই রোগীকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তখন ডায়াবেটিস থাকলে হার্টের সমস্যা, নালিগুলো সরু হয়ে যায়। ডায়াবেটিস থাকলে সব অঙ্গ প্রতঙ্গেই ধরে। হাতে ধরে, চোখে ধরে, কিডনিতেও রয়েছে। আপনি দেখবেন ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা হয়ে গেছে। চোখে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। মস্তিষ্কের যে কার্যক্ষমতা সেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে কিডনিকে ভীষণভাবে আক্রান্ত করে। কিডনির জন্যই রোগীগুলো মারা যায়।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাদেরও কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : এই ক্ষেত্রে ধীর গতির হবে। ডায়াবেটিস হলে যদি নিয়মানুবর্তী জীবন যাপন করে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে, ব্যায়াম করে, ব্যথানাশক ওষুধ যদি না খায়, খাদ্যতালিকা নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে।