সঞ্জীবনী
মনের চিকিৎসায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
দুই যুগেরও বেশি সময় আগে শেরে বাংলানগরে গড়ে উঠেছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল। ১.৭৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই হাসপাতালে প্রায় চুয়াল্লিশ জন চিকিৎসক নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আছে বহির্বির্ভাগ এবং আন্তবিভাগসহ মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
শুরুর কথা
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা হয় বর্তমান পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৯৮১ সালে তৈরি হয় অরগানাইজেশন অব ট্রেনিং মেন্টাল হেলথ (ওটিএমএইচ)। তখনো এই হাসপাতাল সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একটি অংশ নিয়ে নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করত অরগানাইজেশন অব ট্রেনিং মেন্টাল হেলথ। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জায়গায় সরকারি অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাজ চলত।
১৯৮১ সালের শেষের দিকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতালে) স্থানান্তরিত হয় এটি। ১৯৮৮ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে থাকার সময় একে ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড রিসার্চ (আইএমএইচএআর) হিসেবে নামকরণ করা হয়।
পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হামিদ জানান, ‘১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত করা হয়। তবে বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগের সুবিধা তখন ছিল না। সেই সময় পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক হেদায়েতুল ইসলাম। তখন হাসপাতালটিকে বড় করে করার চিন্তা করা হয়। ১৯৯২ সালে হেদায়েতুল স্যার অবসর গ্রহণ করেন। তখন অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা বেগম এর হাল ধরেন। তাঁর কঠিন পরিশ্রমে বর্তমানের শেরে বাংলানগরের জায়গাটি বরাদ্দ নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে আনোয়ারা বেগম অবসর নেন।’
এরপর ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি অধিকতর উন্নত হয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। সেই সময় পরিচালক হন অধ্যাপক নাজমুল আহসান। তবে পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হামিদ আরো জানান, ‘১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এটা ঢাকা মেডিকেলেই ছিল। এরপর ২০০০ সালে সরকার নির্ধারিত নিজস্ব ১.৭৯ একর জমিতে ভবন তৈরি হলো।’
নতুন জায়গায় হাসপাতালটি প্রথমে কেবল আউটডোর হিসেবে চালু হয়। এরপর ২০০১ সালে সব কর্মকর্তা নিয়োগের পর আউটডোর এবং ইনডোর এবং জরুরি বিভাগ চালু হয়।
বর্তমানে সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি চলে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু ফান্ড দেয়।
চিকিৎসাসেবা
এখানে সব ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসা করা হয়। ছয়টি বিভাগ রয়েছে হাসপাতালটিতে। এডাল্ট সাইকিয়াট্রি বিভাগ, শিশু এবং এর বিকাশে সাইকিয়াট্রি বিভাগ, বয়স্কদের মানসিক রোগ ও কমিউনিটি মানসিক রোগ বিভাগ। গ্রামগঞ্জে গিয়ে হাসপাতাল থেকে স্যাটেলাইট সেন্টারের মাধ্যমে এ কমিউনিটি মানসিক রোগ বিভাগে করা হয়। তবে বর্তমানে এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজি বিভাগ।
এর পাশাপাশি রয়েছে সাহায্যকারী বিভাগ রেডিওলজি, এনেসথেসিওলজি, প্যাথলজি। আরেকটি বিভাগ রয়েছে, সমাজ কল্যাণ বিভাগ। তবে এটা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় রয়েছে। পাশাপাশি কিছুদিন ধরে সিআরআপি থেকে এসে অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা আমাদের সাহায্য করছেন নিয়মিত। বর্তমানে এখানে চিকিৎসক রয়েছে ৪৪ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৮৪ জন।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগ খোলা থাকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। ৬০ ভাগ পেয়িং (টাকা দিয়ে থাকতে হয়) বেড। ৪০ ভাগ নন পেয়িং বেড। পেয়িং বেড ২৭৫ টাকা, কেবিনের ভাড়া ৪২৫ টাকা। গরিব রোগীদের জন্য কমমূল্যে এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
ফ্রি বেড কম এ কথা জানিয়ে পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি মনে করি ফ্রি বেড বাড়ানো উচিত। অনেক রোগীই চিকিৎসা নিতে এসে ভর্তি না হতে পেরে ফিরে যান।’
বিশেষ বিভাগ
পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র। এখানে সপ্তাহে দুইদিন নিয়মিত রোগী দেখা হয়, সোম ও বুধবার । এই কেন্দ্রের বহির্বিভাগে শিশু মানসিক রোগ নিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
ইনস্টিটিউ
ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন মানসিক বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট, নার্স, শিক্ষক, ইমাম- সমাজের এসব বিভিন্ন স্তরের মানুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ঠিকানা
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
শেরে বাংলানগর, ১২০৭
মোবাইল : +৮৮-০১৭৩০-৩৩৩৭৮৯