কুসুমসহ ডিম খাওয়া কি হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো?
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে চাইলে জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুব জরুরি।
অনেকের ধারণা, কুসুমসহ ডিম খেলে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হয়। ধারণাটি কি আসলে ঠিক? আর হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে চাইলে কী ধরনের খাবার খাওয়া ভালো? হৃৎপিণ্ডের জন্য সঠিক খাবারের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন স্কয়ার হাসপাতালের পুষ্টিবিদ নুজহাত মঞ্জুর।
তিনি বলেন, ‘হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে চাইলে এবং হৃৎপিণ্ডের অসুখ থেকে রক্ষা পেতে চাইলে আমাদের প্রথমে জীবনযাপনের ধরন বদলাতে হবে। অর্থাৎ জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া, সেইসঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ করা, মানসিক চাপহীন জীবনযাপন করা, প্রতিদিন কিছু পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করা এবং সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখতে কাজ করে।’
জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও মেনে চলতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা কিছু হৃৎপিণ্ডবান্ধব খাবার গ্রহণ করলে কিন্তু কার্ডিওভাসকুলার রোগ তৈরির আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। এই হৃৎপিণ্ডবান্ধব খাবারগুলোর মধ্যে মাছ, ভূসি বা ভূসিসমেত খাবার, ফল ও সবজি থাকতে পারে। মাছের মধ্যে আপনি সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। যেমন : স্যামন, টুনা সারা দিন নিতে পারেন। এই মাছগুলো কিন্তু প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ। এগুলো হৃৎপিণ্ডের জন্য খুবই ভালো। তাই আপনার খাদ্যতালিকায় সপ্তাহে অন্তত দুদিন সামুদ্রিক মাছ রাখতে পারেন।’
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খেতে পারেন জানিয়ে এই পুষ্টিবিদ বলেন, যেমন : ওয়ালনাট, কাজুবাদাম ইত্যাদি খেতে পারে। এতে ভালো চর্বি রয়েছে। এটি কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
ফল হিসেবে আপনি স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, কমলা, পেঁপে ইত্যাদি খেতে পারেন জানিয়ে পুষ্টিবিদ নুজহাত মঞ্জুর বলেন, ‘এগুলো প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসসমৃদ্ধ ও আঁশসমৃদ্ধ। এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ সবজি খেতে পারেন। যেমন : ব্রকলি, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।’
পুষ্টিবিদ নুজহাত মঞ্জুর বলেন, এই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি কিন্তু খাদ্যতালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দিতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার সসেজ, খুব কড়া করে ভাজা খাবার, যেমন: ফ্রাইড চিকেন, ফ্রান্স ফ্রাইড বাদ দিতে হবে। এগুলো কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য তেমন উপকারী নয়। আর এই খাবারগুলো ভাজার কারণে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়। এটি ভালো কোলেস্টেরলকে কমিয়ে, খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। যেমন : গরুর মাংস, খাসির মাংস, বিভিন্ন ধরনের উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারও কিন্তু খাদ্যতালিকা থেকে কমিয়ে ফেলতে হবে।
কোলেস্টেরলের কথা ভেবে অনেকে ডিম কুসুমসহ খাবেন কি না, এ নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি প্রতিদিন একটি ডিম কুসুমসহ সিদ্ধ করে খেতে পারবেন। কারণ, একটি ডিমে যে পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, সেটি আমাদের দৈনিক চাহিদার তুলনায় কম। এ ছাড়া ডিমে কোলেস্টেরল ছাড়াও কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ভালো চর্বি রয়েছে। এগুলো আমাদের ভিটামিন শোষণ করতে সাহায্য করে। আর ডিম একটি আদর্শ প্রোটিন। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যাসেনসিয়াল অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এটি আমাদের কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।’
ডিমে প্রোটিন ছাড়াও বিভিন্ন পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি ক্যালসিয়াম ও আয়রনেরও ভালো উৎস। তাই প্রতিদিন একটি ডিম কুসুমসহ খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে অন্যান্য কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার, যেমন—বিভিন্ন লাল মাংস, মাখন, বিভিন্ন তেলযুক্ত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলার পরামর্শ তাঁর।