নারী যখন গর্ভবতী
একজন নারীর কাছে মা হওয়ার অনুভূতি অসাধারণ। শত কষ্টের মাঝেও একজন নারী তার গর্ভকালীন সময়ে এক ধরনের সুখের অনুভূতি নিয়ে সময় পার করে। গর্ভকালীন কিছু নিয়ম মেনে চললে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত হয়।
প্রথম তিন মাস
মাসিক বন্ধ হলে ডাক্তারের পরামর্শে প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে আপনি সন্তানসম্ভবা কি না তা নিশ্চিত করুন। শিশুর শরীরের গঠনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় এটি। কেননা হৃদ পিণ্ড, মস্তিস্ক, হাত –পা এ ধরনের অনেক অঙ্গপ্রতঙ্গই এই সময়টায় হয়ে থাকে।
করণীয়
এ সময় মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব হতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তখন বিশ্রাম নিতে হবে। খাবারে অরুচি হলেও পর্যাপ্ত খাবার খেতে হবে। ফলিক এসিড জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। ফলিক এসিড শিশুর মস্তিষ্ক সুগঠিত করতে সাহায্য করে। এ সময় দিনে কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে কোনো ফিটনেস ট্রেইনারের পরামর্শ অনুযায়ী।
তিন থেকে পাঁচ মাস
প্রথম তিন মাসের সময় বমি বমি ভাব, খাওয়ায় অরুচি এ ধরনের যেসব উপসর্গ থাকে এই সময় সেটি অনেকটা কমে আসে। তিন থেকে পাঁচ মাসের ভেতরে শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে পারবেন।
করণীয়
এ সময় একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। মায়ের শরীরের ওজন বেড়ে যায় তাই চলা ফেরায় সতর্কহতে হবে।চেষ্টা করুন আনন্দে থাকার।বিনোদনমূলক ব্যবস্থার জন্য গান শুনতে পারেন, ছবি দেখতে পারেন, বই পড়তে পারেন।
পাঁচ মাসের পর
এ সময় ভ্রুণের আকার দ্রুত বাড়তে থাকে। ভ্রুণের দৈর্ঘ্য ছয় সেন্টিমিটারের কাছাকাছি হয়। ওজনও বাড়তে থাকে।
করণীয়
এ সময় আরামদায়ক ঢিলেঢালা জামা-কাপড় পরবেন। ক্ষুধা বাড়তে পারে। বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাবেন, স্বাভাবিক ও সহজে হজমযোগ্য সুষম খাবার খাওয়াই শ্রেয়। তেলযুক্ত ভাজা পোড়া খাবার বর্জন করুন। শাকসবজি, ফলমূল বেশি খাবেন। ছোট মাছ, হাড় বেশি খাবেন যা এক সময় ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করবে। দুশ্চিন্তা না করে ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। জরায়ু দিয়ে রক্ত বা পানি এলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সাত থেকে নয় মাস
এ সময়টিকে গর্ভকালীন শেষ পর্যায় ধরা হয়।ভ্রুণ ১৯ ইঞ্চি থেকে ২১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। ভ্রুণের মাথা জরায়ুর নিচে চলে আসে।
করণীয়
এ সময় পায়ে পানি এসে ফুলে গেলে ভয় না পেয়ে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আরামদায়ক কাপড় ও জুতা পরুন। হাঁটাহাঁটি করতে পারেন কিন্তু ভারী কাজ করা যাবে না। রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নিন এবং আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের রক্তের সঙ্গে গ্রুপ ম্যাচিং করিয়ে নিন যেন প্রয়োজনে রক্ত সহজলভ্য হয়। আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রসবব্যথা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আপনার করণীয় নিশ্চিত করুন। কোথায় ডেলিভারি করাবেন এবং প্রয়োজনীয় কী কী ওষুধপত্র তৈরি রাখবেন এ বিষয়ে সাধারণত আপনার ডাক্তারই পরামর্শ দেবেন। তলপেটে ব্যথা, শক্ত হওয়া, কোমড় ব্যথা, বারবার ব্যথা ওঠা, রক্ত মিশ্রিত স্রাব বের হওয়া প্রসব বেদনার লক্ষণ। এ রকম হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরো কিছু করণীয়
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক কাজ করা যায় কিন্তু কাপড় কাচা, ঘরমোছা, ভারী জিনিস তোলা থেকে বিরত থাকুন। প্রথম তিন মাস এবং শেষ এক মাস ঝুঁকি বেশি হয় তখন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। প্রথম তিন মাস এবং শেষের এক মাস সহবাস না করা ভালো। গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেকআপ করাবেন (১৬, ২৮, ৩২ এবং ৩৬ সপ্তাহ)। সর্বোপরি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সন্তানসম্ভবা নারীর যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় গর্ভবতী নারীর নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত হয়।
ডা. সামছাদ জাহান শেলী : সহযোগী অধ্যাপক স্ত্রীরোগ, ধাত্রীবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিভাগ, বারডেম।