কোমর ব্যথা কাদের হয়?
কোমর ব্যথা একটি প্রচলিত স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতা। যাঁরা এই ব্যথায় ভোগেন, তাঁদের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকার পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। আজ ২৯ ডিসেম্বর, এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২২৫০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ চৌধুরী।
প্রশ্ন : একজন মানুষ কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হন কেন?
উত্তর : কোমর ব্যথায় মানুষ আক্রান্ত হন কেন—এটি বলার আগে আমি বলতে চাই, বিশ্বের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ লোক জীবনে যেকোনো সময়ে কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন। সাধারণত কোমর ব্যথা সম্বন্ধে আমাদের একটু ধারণা থাকলে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা মেকানিক্যাল (যান্ত্রিক) সমস্যার জন্য হয়।
আমরা যাঁরা চাকরি করি, টেবিলে বসে কাজ করি, তাঁরা দেখা যায় যে অনেকক্ষণ বসে থাকি। সাধারণত আমরা সোজা হয়ে বসি না। একটু সামনে ঝুঁকে বসে থাকি বা পেছনে হেলে থাকি। আসলে আমরা যাঁরা টেবিলে বসে কাজ করি, তাঁরা যেন সোজা হয়ে বসি—এ বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। পেছনে একটি সাপোর্ট দিতে হবে। পেছনে সাপোর্ট দিলে ব্যথা অনেক কম হবে। বালিশ বা কুশন দিয়ে পেছনে একটি সাপোর্ট রাখতে হবে; যেন মেরুদণ্ডটা সোজা থাকে। এ ছাড়া চেয়ার থেকে ওঠার সময় যদি আমরা হাতলের ওপর ভর দিয়ে উঠি, তখন কোমরের ওপর চাপ কম পড়বে।urgentPhoto
যাঁরা দিনমজুর, তাঁরা বেন্ডিং (বাঁকানো) হয়ে কাজ করেন বা ওজন তুলতে যান। তখন তাঁর মেরুদণ্ডকে ধরে রাখার পেশি, লিগামেন্ট—সেগুলোতে চাপ পড়ে। এ জন্য অনেক সময় কোমরে ব্যথা হয়। এ ছাড়া যাঁরা ঘরের কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকক্ষণ ঘর ঝাড়ু দিচ্ছেন বাঁকা হয়ে বা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকছেন অথবা ঘর পানি দিয়ে মুছছেন; সে ক্ষেত্রেও কোমর ব্যথা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন বেশি সময় না নিই। বাঁকা হয়ে কাজ যতটুকু কম করা যায়, ভালো। ওজন ওঠানোর সময় আমাদের আগে খেয়াল করতে হবে, আমরা যেন আগে বসে নিই এবং পরে ওজন তুলি। যাঁরা দিনমজুর নন, তাঁদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ কেজির বেশি ওজন ওঠালেই হয়তো কোমরের পেশিতে টান পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যথা হতে পারে।
প্রশ্ন : পিঁড়িতে বসে কাটাকুটি বা কাজ করা স্বাস্থ্যকর কি না? এতে কোমর ব্যথা হতে পারে কি? এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে অবশ্যই কোমর ব্যথা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা রোগীকে পরামর্শ দিই উঁচু মোড়া বা চেয়ারে বসে রান্নাবান্নার কাজ করতে। অথবা শহরে যাঁরা থাকেন, তাঁরা যেন দাঁড়িয়ে রান্না করার চেষ্টা করেন।
আর যদি অনেকক্ষণ বসে মাছ বা তরকারি কাটতে হয়, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের পর উঠে একটু একটু হাঁটাচলা করতে হবে। তার পরে না হয় আবার বসা যেতে পারে। তবে আমরা সাধারণত পরামর্শ দিই, এই কাজগুলো যেন উঁচু মোড়া বা চেয়ারে বসে করা হয়।
প্রশ্ন : রোগ বা কোনো প্যাথলজিক্যাল কারণে কি কোমর ব্যথা হতে পারে?
উত্তর : প্যাথলজিক্যাল কিছু কারণ রয়েছে কোমর ব্যথা হওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে ব্যথা কেবল কোমরে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি পায়ের দিকে স্থানান্তরিত হবে। বিশেষ করে স্নায়ুর যদি কোনো চাপ হয়, তখন এ রকম হতে পারে। অথবা সায়াটিক স্নায়ুতে চাপ পড়লে লাম্বাগো সায়োটিকা হতে পারে। অথবা যদি মেরুদণ্ডে যক্ষ্মা হয়, তখন হতে পারে। এ ছাড়া ম্যালিগন্যান্সির ক্ষেত্রেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে আসার পর আপনারা কীভাবে নির্ধারণ করেন এটি মেকানিক্যাল কারণে হচ্ছে, নাকি রোগের কারণে হচ্ছে?
উত্তর : প্রথমত, আমরা একটি ইতিহাস নিই। সে বলতে পারে, আমার ব্যথা সাধারণত কোমরের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকে, নিচের দিকে নামে না। এ সময় আমরা শারীরিক কিছু পরীক্ষা করি। স্টেট লেগ রাইজিং টেস্ট বলে একটি পরীক্ষা রয়েছে, সেটি করি। এ ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে রোগীকে পা সোজা করে ওপরের দিকে তুলতে বললে সে ব্যথা পাবে। তখন সাধারণত আমরা ধরে নেব নার্ভ রুটে চাপ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমত, একটি এক্স-রে করতে পারি, লাম্বো স্যাকরাল স্পাইন বোথ ভিউ। এ ছাড়া আমরা কিছু রক্তের পরীক্ষা করতে পারি। আরো নির্দিষ্ট করার জন্য কিছু পরীক্ষা রয়েছে, যেমন আমরা এমআরআই করতে পারি। সে ক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারব, তার কোন দিকের স্নায়ুর চাপ রয়েছে। যদি স্নায়ুর চাপ থেকে থাকে, তখন কনজারভেটিভ চিকিৎসা দিই। সাধারণত ছয় সপ্তাহের মধ্যে রোগী অর্ধেক সুস্থ হয়ে যান। আর যদি মেকানিক্যাল কারণে ব্যথা হয়, তাহলে সাধারণত ছয় সপ্তাহের মধ্যে ব্যথামুক্ত হয়ে যায়। আর যদি পিএলআইডি স্নায়ুর ওপর বেশি চাপ দেয়, সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা লাগে। আবার যদি যক্ষ্মার কারণে সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে সাধারণত অ্যান্টি টিবি দিই। যে রোগের কারণে হচ্ছে, সে রোগের চিকিৎসা করা হবে।
প্রশ্ন : একজন মানুষ কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হলে জীবনযাপনের ধরন বদলানো কতটুকু দরকার?
উত্তর : প্রথমত, স্বাভাবিক শারীরিক কাজ করে যাওয়া যাবে। তবে যে কাজগুলো কোমরের পেশিতে আঘাত করতে পারে, সেগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে সামনের দিকে বেঁকে কাজ এড়িয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া যদি এক্স-রে করে দেখা যায় যে ক্ষয়জনিত রোগ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমরা কোমরে সাধারণত বেল্ট দিয়ে থাকি। দৈনন্দিন কাজের সময় এই বেল্টটা ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত শীতকালে এই ব্যথাগুলো বেশি অনুভূত হয়। তখন আমরা গরম সেঁক দিতে বলি। এ ছাড়া ওজন তোলার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে হবে। অনেক নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।