চোখের সাধারণ সমস্যাগুলো কী কী
কম দেখা, চোখ লাল হওয়া এগুলো সাধারণত চোখের সমস্যা। আজ ১২ডিসেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৬৪ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শেখ মাহবুব উস সোবহান। বর্তমানে তিনি বারডেম জেনারেল হাসপাতালের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ও পরামর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
প্রশ্ন : চোখের সাধারণ সমস্যা বলতে আমরা কোনো সমস্যাগুলোকে বলে থাকি?
উত্তর : সাধারণ সমস্যা যদি আমরা ধরে থাকি, জনসাধারণের ক্ষেত্রে এক নম্বর বিষয় হলো, কম দেখা। দুই নম্বর বিষয় হলো, সাধারণ রোগ- তবে প্রচণ্ড চোখ ব্যথা, লাল চোখ- এগুলো নিয়েও আসতে পারে।
আসলে নিজে থেকেই প্রতিবছর বা দুই বছর বা পাঁচ বছর অন্তর অন্তর চিকিৎসকের কাছে সাধারণ চেকআপ করানো জরুরি। অনেক রোগ রোগী বহন করে, তবে ধীরে ধীরে এগুলো প্রকট হচ্ছে রোগী বুঝতে পারেন না। অন্য একটি রোগের কারণে যদি চিকিৎসকের কাছে যান, তখন দেখা যায় তার একটি খারাপ রোগ রয়ে গেছে, অন্য একটি রোগ ধরা পড়ছে। এই দুই তিনটা ধরনের মধ্য থেকেই আমাদের কাছে রোগীগুলো চলে আসে।
প্রশ্ন : চোখে কম দেখা মানে কী? এটি কেন হয়?
উত্তর : প্রাথমিক যে অভিযোগ তারা করে, সেটি হলো, আমি কম দেখি। একে আবার দুটো স্তরে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম স্তর হলো, হয়তো রোগী বলতে পারে আমি চোখে একটু কম দেখছি। আগে বিষয়টি ছিল না। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো, যারা চল্লিশের ঊর্ধ্বে বা চল্লিশ ছুঁই ছুঁই করছে, তখন কম দেখার সমস্যা হয়। চল্লিশেই চালশে। সেই চালশেরও একটি বিষয় রয়েছে। আমাদের এসব অঞ্চলে এটি ৩৫ থেকে শুরু হয়।urgentPhoto
পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণত এটি ৪২ বছর থেকে শুরু হয়। তো এই ৪০ বছর বয়সী অনেক রোগী আমাদের কাছে আসে। সন্ধ্যা হলে খবরের কাগজ পড়তে অসুবিধা হয়, বই পড়তে অসুবিধা হয়। কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। সাধারণত এই দুটো অভিযোগ খুব বেশি থাকে। আর যারা হঠাৎ করে কম দেখতে শুরু করে যে আমি ঘুম থেকে উঠে কিছু দেখতে পারছি না। এসব লোকের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ দৃষ্টিশক্তি হয়তো নষ্ট হয়ে গেছে।
আর ভিজুয়াল ফিল্ডের (দৃশ্য পরিসর) সমস্যাটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বুঝি। জন সাধারণ পরিসরের বিষয়টি বোঝে না। যারা অনেক সচেতন তারা হয়তো বিষয়টি বোঝে। তবে এটি সংখ্যায় কম। অনেকে বলে, আমি বামদিক দিয়ে হাঁটতে গেলে হয়তো হোঁচট খাই। গাড়ি চালাতে গেলে সমস্যা হয়। পশ্চিমা বিশ্বে যেহেতু অনেক লোক গাড়ি চালায় তাই সেখানে এটি খুবই প্রকট। আমাদের মধ্যে এটি প্রায়ই মিস হয়।
আরেকটি বিষয় অভিযোগ করে, ‘পর্দার মতো সামনে কিছু পড়ে আছে।’ অথবা ‘হঠাৎ করে আমার একদিক ঢেকে গেল।’
প্রশ্ন : যদি ঝাপসা বা কম দেখার পরও সঠিক চিকিৎসা না নিই কী ক্ষতি হতে পারে?
উত্তর : আপনি যেটি বলেছেন, আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে এটি আসলেই সত্যি কথা এবং এটি সবচেয়ে বেশি হয় মহিলাদের। বিশেষ করে যারা গ্রামে থাকে। সংসার নিয়ে তারা ব্যস্ত। এই ছোটোখাটো জিনিসগুলো তারা এড়িয়ে যায়। মনে করে, এটি বললে হয়তো মানুষ বিরক্ত হবে। এই সমস্যা হয় চশমার পাওয়ারের জন্য। আসলে সে তো চল্লিশের কাছে এসেছে। এই জিনিসগুলো তারা পরিহার করে। তবে প্রতিটি মানুষ যখন চল্লিশের কোঠায় আসবে সবারই এই সমস্যা হবে। কারো আগে শুরু হবে বা কারো পরে শুরু হবে। তবে এমনো রোগী রয়েছে, গ্রাম থেকে এসেছে এটি নিয়ে মাথা ঘামায় না।
প্রশ্ন : এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে গেলে কোনো ক্ষতি হয় কি?
উত্তর : ক্ষতি একটিই হয় পাওয়ারটা বাড়তে থাকে। তবে অন্ধত্বের দিকে তারা যাবে না।
প্রশ্ন : পাওয়ার সমন্বয় নিয়ে আপনারা বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়েন। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : কতগুলো বিষয় কাজ করে। এক নম্বর বিষয় হলো আমরা প্রথমে যন্ত্র রোগীর চোখে বসিয়ে পাওয়ার আন্দাজ করি। মনে রাখতে হবে, এই যন্ত্র কখনো সঠিক পাওয়ার দেবে না। যন্ত্রের কাজই হচ্ছে একটি পাওয়ারের গড় মাপ দেওয়া। সেটা এক-একটি রোগীর জন্য একেক রকম হতে পারে। যে রোগীর পাওয়ার এক লাগবে যন্ত্র কখনো তাকে ১২ পাওয়ার বলবে না। সে এক, দেড় বা দুই বলতে পারে। এটি চিকিৎসকের দায়িত্ব। চিকিৎসক পরিমাপ বুঝে দেবেন। রোগী চালিয়ে নিতে পারবেন দুই চার পাঁচ বছর পর্যন্ত, এ ধরনের পাওয়ার আমরা বুঝেই দেই।