বুকে কি অস্বস্তি হচ্ছে?

ছোট থেকে বড় অনেক কারণেই আমাদের বুকে অস্বস্তিভাব বা ব্যথা হতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা না নিলে কখনো কখনো সমস্যাটি জটিল আকৃতি ধারণ করতে পারে। আজ ২৩ জানুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৭৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান। বর্তমানে তিনি গ্রিন লাইফ মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : চেস্ট ডিসকমফোর্ট বিষয়টি কী?
উত্তর : চেস্ট ডিসকমফোর্ট বা বুকে অস্বস্তির সময়, কোনো রোগী হয়তো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলতে পারে আমার বুকটা চেপে আছে, বুকটা ধরে আছে। অথবা আমার বুকটা ব্যথা করছে। সাধারণত, এই কথাগুলো বললেই আমরা মনে করি তার বুকের ভেতর কোনো অসুখ হয়েছে। তখন চিকিৎসকরা এর কারণগুলো খুঁজতে আরো কিছু জিনিস জিজ্ঞেস করেন।
প্রশ্ন : বুকে অস্বস্তি হওয়ার কী কী কারণ রয়েছে?
উত্তর : কোনো একটি রোগী যখন এ রকম কথা বলে তাঁর ইতিহাসটা আমরা নেই। সমস্যাটি কখন হয়েছে, শুয়ে ছিলেন, না কি কোনো কাজ করছিলেন? আপনার সাথে আরো কোনো অসুখ আছে কি না? যেমন ডায়াবেটিস রয়েছে কি না? উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে কি না? শ্বাসকষ্ট আছে কি না?-এগুলো আমরা জিজ্ঞেস করি। দেখি, কোনদিকে তাঁর সমস্যাটি হচ্ছে। কারণ বুকের মধ্যে হার্টও আছে, ফুসফুসও আছে।
যেমন : একটি রোগীর হয়তো ডায়াবেটিস রয়েছে, তিনি বললেন, ‘সকালে আমি কাজ করছিলাম। হঠাৎ করে আমার বুকটা চেপে রয়েছে। সমস্যাটি যাচ্ছে না।’ তখন আমি সতর্ক হয়ে যাব, ভাবব, খুব সম্ভব সমস্যাটি হার্টের কারণে হচ্ছে।
অথবা কোনো একটি লোক একজনকে মারা যেতে দেখেছে, সে ভালোই ছিল হয়তো, হঠাৎ করে সেই কথাটি মনে পড়ার পর বুকটা যেন কেমন করছে। দেখা গেল, সে তরুণ যুবক। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব উদ্বিগ্ন। তবে তার অন্য কোনো ধরনের সমস্যা, যেমন, বুক চাপ দিয়ে থাকা- এ রকম কিছু নাই। তখন আমরা তাকে সাধারণভাবে মনে করব। সেই ক্ষেত্রে তাকে আর গুরুত্ব সহকারে নেব না।
বুকের অস্বস্তি খুব সাধারণ কারণেও হতে পারে। আবার বুকে অস্বস্তির কারণে কখনো কখনো মৃত্যুও হতে পারে। সাধারণ কারণে সমস্যা হলে সেটি যদি ধরতে না পারি তাহলে অযথা তার অনেক ধরনের সমস্যা হবে। যেটা তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
এজন্য বুকে অস্বস্তি যখন হবে, তখন তার ইতিহাস নেওয়া, তার সাথে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হবে। এর ওপর নির্ভর করবে, আমি এই রোগীটার ক্ষেত্রে এরপর কী করব। অথবা আমি এই রোগীকে কী পরামর্শ দেব।
বাড়িতে যখন রোগীটি থাকে তার নিজেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যদি সে মনে করে আমার খুব ভালো লাগছে না। আমি ঘেমে যাচ্ছি, আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি, এ রকম সময় পরিবারের লোকজনের দায়িত্ব বড় একটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া। বিশেষ করে বুকের অস্বস্তি যদি হয়।
প্রশ্ন : বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি কেন হচ্ছে, সেটি বোঝার কী কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : বয়সের একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে রয়ে গেছে। সাধারণত পুরুষ মানুষ এবং একটি বয়সী যারা তাদের এই অস্বস্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর সাথে যদি তার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তার কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি আছে, সে যদি ধূমপান করে- এ রকম যদি তার কোনো ঝুঁকি থাকে, তখন যদি তার কোনো ঝুঁকির বিষয় হয়, বুকে ব্যথা হয় অথবা তার শ্বাসকষ্ট হয়, সে যদি মনে করে আমার বেশ কিছুদিন ধরে সমস্যা হচ্ছে, তবে যাচ্ছে না- তখনই তার মনে করতে হবে আমার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায়, বদ্ধ ঘরে বসে আছেন বুকে মনে হচ্ছে চেপে ধরে রেখেছে কিছু। এই ক্ষেত্রে কী চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। নাকি কিছু করণীয় রয়েছে প্রাথমিকভাবে?
উত্তর : সাথে যদি তার অন্যান্য সমস্যা থাকে এবং তার যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে যাওয়া উচিত। তবে যদি সে বিশ্রামে থাকে, তার সমস্যা কিছু নেই, হয়তো সে বাথরুমের মধ্যে আটকে গেছে, অথবা কোনো বন্ধ ঘরে রয়েছে। তখন সে এ রকম অনুভব করতে পারে। তবে সে যদি দেখে তার কোনো ঘাম হচ্ছে না, কোনো বমি হচ্ছে না, তাহলে সে অপেক্ষা করতে পারে। তবে তার যদি এই বিষয়গুলো হয় এবং তার যদি ঝুঁকির বিষয়গুলো থাকে, তাহলে আমার মনে হয় তার দেরি করা উচিত নয়।
১০০টি রোগীর মধ্যে ৬০ ভাগ রোগীকেই আমরা পরীক্ষা করে বুঝে বাড়িতে পাঠাব। এই ৬০ ভাগের ২৫ ভাগ লোক হার্টের কারণে সমস্যা হচ্ছে এবং এদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ১০ ভাগ রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।
প্রশ্ন : এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে যখন রোগীরা যাচ্ছে, তখন কী করেন আপনারা?
উত্তর : আমি যখন শুনব, কোনো রোগী বুকে অস্বস্তি নিয়ে আসছে আমি রোগীকে দেখতে চলে যাব। কারণ জুনিয়র চিকিৎসকরা ভুল করতে পারে। সুতরাং প্রথমে রোগীর ইতিহাস নেওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখি। পরীক্ষা করে দেখে যদি সন্তুষ্ট হই, এরপর তাকে পর্যবেক্ষণে রাখব। সব কিছু করার পর যদি দেখি রোগী মোটামুটি ভালো রয়েছে। তারপর আমরা চেষ্টা করি ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য। আর যদি তার সবই ভালো থাকে, তাহলে তাকে আমরা ছেড়ে দেই।
প্রশ্ন : আর যদি আপনারা নিশ্চিত হয়ে যান হার্টের কোনো সমস্যা থেকে এটি হয়েছে, তখন আপনাদের পদক্ষেপ কী থাকে?
উত্তর : হার্টের সমস্যা বলতে হার্ট অ্যাটাক বলি। আমাদের যেটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। যদি কোনো কারণে আমরা দেখি, তার ইসিজিতে অস্বাভাবিকতা রয়েছে, আর দেরি না করে বিশেষ জায়গায় করনারি কেয়ার ইউনিটে আমরা পাঠিয়ে দেব।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে কী ধরনের চিকিৎসা কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে দিতে হয়?
উত্তর : এটা রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে। হার্টকে রক্ষা করার জন্য আমরা চিকিৎসা করি। একে আগে ঠিক করতে হবে।