বিশ্ব কিডনি দিবস
শিশুদের কিডনি ভালো রাখা যায় যেভাবে

শিশুদের কিডনির সমস্যা হলে সেই শিশুর তো ক্ষতি হয়ই, সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবারেই নেমে আসে উদ্বেগ আর হতাশা। দেশে প্রায় দুই কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত আর প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগীর কিডনি সম্পূর্ণভাবে বিকল হয়ে যায়। অন্য রোগের চেয়ে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় বেশি। তাই শুধু চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর ৩০ হাজার কিডনি রোগী মারা যান।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগের কথা হলো শিশুদের মধ্যে কিডনি রোগ দিন দিন বাড়ছেই। কিন্তু দেরিতে রোগ নির্ণয়ের ফলে অনেক বাচ্চাই এমন সময় চিকিৎসকের কাছে যায়, যখন আর করার কিছু থাকে না। তাই তো কিডনি রোগ, বিশেষ করে শিশুদের কিডনি রোগ থেকে বাঁচাতে আজ ১০ মার্চ-২০১৬ সারা পৃথিবীতে পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিশুদের কিডনি রোগ : শুরুতেই প্রতিরোধ’। শিশুদের কিডনি রোগের একটা অংশ জন্মগত। এসব ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় মায়েদের সচেতন হতে হবে। আবার জন্মের পরও বিভিন্ন রোগে কিডনি বিকল হতে পারে। এই ক্ষেত্রেও সামান্য সাবধান হলে শত শত বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব।
নিচে শিশুদের কিডনি রোগ প্রতিরোধে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
• শিশুদের কৃত্রিম জুস ও প্রিজারভেটিভ মিশ্রিত ও টিনজাত খাবার দেওয়া যাবে না। কারণ এতে কিডনি বিকল হতে পারে।
• আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়েট্রিক্সের গাইডলাইন অনুযায়ী কোনো শিশু তিন বছর বয়সের পর যখনই ডাক্তারের কাছে যাবে, তখনই প্রেশার মাপাবে। শিশুদের প্রেশার বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ। তাই বাচ্চাদের প্রেশার বা রক্তচাপ বেশি হলেই কিডনি সুস্থ আছে কি না পরীক্ষা করে তা দেখতে হবে।
• বাচ্চার প্রস্রাবের সঙ্গে ব্যথাযুক্ত বা ব্যথাহীনভাবে রক্ত গেলে কিংবা এলবুমিন নামক প্রোটিন গেলে সঙ্গে সঙ্গে শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে।
• মাতৃগর্ভে থাকার সময় মায়ের যে আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়, তা দিয়েই প্রাথমিকভাবে শিশুর কিডনির জন্মগত রোগ আছে কি না, তা দেখা যায়। তাই আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার সময় চিকিৎসককে শিশুর কিডনি পরীক্ষার কথাও জানান। এ জন্য জন্মগত ত্রুটি নির্ণয় করতে পারে এমন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ দিয়েই পরীক্ষা করানো উচিত।
শিশুর জন্মের পরেই লক্ষ করুন, ছেলেশিশুর পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিক আছে কি না, শিশুর মূত্রনালির বহির্মুখটি সঠিক স্থলে আছে কি না, ছেলেশিশুদের ক্ষেত্রে তার অণ্ডকোষ দুটি স্বাভাবিক অবস্থানে আছে কি না ইত্যাদি। না থাকলে বা কোনো সন্দেহ হলে অবশ্যই ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করান।
• শিশু যাতে পর্যাপ্ত পানি পান করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন। যেমন—স্কুলে টিফিনের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ পানি দিন। কোথাও বেড়াতে গেলে সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি রাখুন। এ ছাড়া যেকোনো জ্বর কিংবা ডায়রিয়ায় বাচ্চা যেন পর্যাপ্ত পানি খায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
• ডায়রিয়ায় সঠিকভাবে স্যালাইন বানাতে হবে। আধা লিটার পানিতে এক প্যাকেট ওরস্যালাইন– এটাই হলো খাওয়ার স্যালাইন বানানোর একমাত্র পদ্ধতি। বাচ্চার বয়স কম কিংবা অন্য যুক্তিতে স্যালাইন বা পানির পরিমাণ কমবেশি করা যাবে না।
• শিশুদের শরীরে খোসপাঁচড়া ও গলাব্যথা হলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ, এ দুটি রোগ থেকে কিডনি অকার্যকর হতে পারে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে নিরাময় ও জটিলতা প্রতিরোধ সম্ভব।
• অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ, বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা।
• শিশুর প্রস্রাব কমে গেলে বা শরীর ফুলে গেলে দ্রুত শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
ওপরের নিয়মগুলো মেনে চললে এবং সময়মতো চিকিৎসকের কাছে গেলে কিডনি রোগ থেকে আমাদের শিশুরা অনেকটা রক্ষা পাবে ।
লেখক : রেজিস্ট্রার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।