একাকিত্ব কমিয়ে দেয় আয়ু
বিষণ্ণতাসহ দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের কারণ নিঃসঙ্গতা। সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নিঃসঙ্গতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নয় শরীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর, এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে এটি। গবেষকরা জানান, যারা নিঃসঙ্গ থাকেন তাদের মধ্যে ২৬ শতাংশ বেশি মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। তিন মিলিয়নের বেশি লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।পারসপেকটিভ অন সাইকোলোজিক্যাল সায়েন্স নামের এই গবষেণাটি এই মাসেই প্রকাশিত হয়। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়েব এমডির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে এই তথ্য।
স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করার সময় মানুষ সাধারণত সামাজিক কারণগুলোর কথা ভাবে না বলেই মনে করেন ব্রিগহ্যাম ইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক টিমোথি বি স্মিথ। তিনি বলেন, “আমরা সবসময় ব্যায়াম, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ওষুধপত্র এগুলো নিয়ে কথা বলি কিন্তু সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়টি আমাদের ভাবনাতেও আসে না। অথচ এই বিচ্ছিন্ন থাকাটা ওই সব বিষয়ের চেয়ে বেশি ভয়ানক, এ কারণে মৃত্যু তরান্বিত হয়।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন একাকিত্ব হলো মানুষের আবেগীয় একটি পর্যায় এবং এটিকেই আগে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান ও মস্তিস্ক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিজা জ্যারেমকা বলেন, ‘যারা একা থাকেন তাঁরা সাধারণত সামাজিক সব কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মানুষের মাঝে থেকেও অনেকে নিজেকে একা ভাবতে পারেন। আবার অনেকে আছেন যাঁরা একা একাই থাকেন কিন্তু একাকিত্ব তাঁদের ওপর ভর করে না।’
নতুন এই গবেষণা মনোযোগ দেয় ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে হওয়া ৭০টি গবেষণার ওপর। সেসব কাজে দেখানো হয়েছে কীভাবে নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্বতা, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা বা একা বসবাস আয়ুর ওপর প্রভাব ফেলে।
যদিও এসব গবেষণা মৃত্যুর সঠিক কারণ প্রমাণ করতে পারেনি। তবে একাকী থাকার সঙ্গে মৃত্যুর একটি সংযোগ রয়েছে সেটা খুব স্পষ্ট। গবেষকরা জানান, এই প্রভাব নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এক। একাকিত্বের ফলে এই মৃত্যু তরান্বিত হওয়ার বিষয়টি আসলে একজন বৃদ্ধের তুলনায় ৬৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য।
গবেষকরা বলেন, একা বসবাস এবং নিঃসঙ্গতার খুব নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আপনার পাশে হয়তো সবসময় অনেক মানুষ রয়েছে তারপরও আপনি ভীষণভাবে একা। এর একটি খারাপ প্রভাব আপনার শরীরের ওপর পড়বেই।
গবেষণায় আরো বলা হয়, যাঁরা একা বাস করেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৩২ শতাংশ বেশি যাঁরা কারো সঙ্গে থাকে তাদের তুলনায়। এমনকি যাঁরা একা বাস করছেন তারপরও নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সত্য। এটিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে আপনার শরীরে। কেননা আমরা কিছুটা হলেও সামাজিক প্রাণী। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং চাপ নেওয়ার মানসিকতা বেশ ভালো হয় যখন আমরা যৌথ বা সমষ্টিগতভাবে থাকি। এর মানে সামাজিকভাবে থাকলে মানুষ স্বাস্থ্যবান থাকে।
গবেষক জ্যারেমকা বলেন, ‘মানুষের খুব সহজাত স্বভাব হলো সংযুক্ত থাকতে চাওয়া এবং যত্ন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। নিঃসঙ্গ মানুষের এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয় না।’
এই গবেষকের মতে, ‘বন্ধু ও পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করুন। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। যদি কখনো সেটা অস্বস্তিকরও হয় তারপরও চেষ্টা করুন যোগাযোগ বজায় রাখতে। পরিবার ও বন্ধুরা চেষ্টা করবেন যদি আপনার পাশে কেউ একাকী হয়ে পড়ে তার পাশে থেকে সম্পর্কটিকে অর্থবহ করে তোলার।’