অটিস্টিক শিশুকে কীভাবে সাহায্য করবেন?

শিশু অটিস্টিক হলে তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালোবাসা এবং পরিবার ও আশপাশের মানুষের সাহায্য। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৪০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : বাচ্চা অটিস্টিক হলে তার জন্য কী করতে পারি?
উত্তর : আসলে এমন কোনো চিকিৎসা নেই যা দিয়ে একে সম্পূর্ণভাবে সারানো যায়। এমন কোনো ওষুধও নেই যা দিয়ে একে একেবারে সারানো যাবে। যেহেতু তাদের সমস্যা হলো আচরণগত সমস্যা, যোগাযোগে সমস্যা, তাই এমন কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে যা দিয়ে আচরণ ও যোগাযোগগুলো উন্নত করা যায়। একে আমরা বিহেভিয়ার মোডিফিকেশন থেরাপি বলি। যেহেতু তারা খুব বেশি সংবেদনশীল হয়, এ জন্য আমরা কিছু থেরাপি দিতে পারি। যেমন অকুপেশনাল থেরাপি দিতে পারি। আর যেহেতু তাদের শিক্ষাদীক্ষায় সমস্যা হয়, তাই যার যেখানে দক্ষতা রয়েছে, প্রতিভা রয়েছে, সেটাকে সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে পারি। এভাবেই আগাতে হয়। তবে প্রধান হলো বিহেভিয়ার মোডিফিকেশন থেরাপি। যেহেতু তাদের আচরণে সমস্যা বেশি, তাই এই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এজন্য বাবা-মা,পরিবারের অন্যান্য সদস্য, থেরাপিস্টের সাহায্য দরকার। শিশুর মধ্যে ধ্বংসাত্মক আচরণ করার প্রবণতা থাকলে, তাদের ওষুধ দিতে হয়। তখন শিশু নিউরোলজিস্টের কাছে যেতে হয়।
অনেক সময় এদের খিঁচুনি রোগ থাকে। তখনো শিশু নিউরোলজিস্টের কাছে যেতে হয়। তবে মূল চিকিৎসা হলো তাদের আচরণকে উন্নত করা এবং এই জন্য থেরাপিস্ট ও সাইকোলজিস্টের পরামর্শ মতো কাজ করা।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে কি বিশেষ স্কুলের কোনো ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর : হ্যাঁ, তিন বছর হয়ে গেলে,তখন বিশেষায়িত স্কুলে দিলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। কারণ, এই আচরণটা পরিবর্তনের পেছনে যে শ্রম দিতে হয়, সেটা বাসায় অনেক সময় সম্ভব হয় না। অনেক সময় দিতে হয়। মায়ের তো অনেক কাজ থাকে। এগুলো করে আবার এটা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে শ্রম তো দিতে হবে অনেক।
আর স্বাভাবিক স্কুলগুলোতে এভাবে একটি বাচ্চাকে সময় দিচ্ছে না। এজন্য বিশেষায়িত স্কুলে দিলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। ওখানে একটি শিশুর জন্য একজন শিক্ষক থাকে। যতক্ষণ বাচ্চাটি স্কুলে থাকে তখন শিক্ষক বাচ্চার পেছনেই থাকবে। সেগুলো দেখে দেখে তার সমস্যার সমাধান করবেন।
আর ওয়ান টু ওয়ান শিক্ষা এজন্য দরকার যে দুজন অটিস্টিক শিশু এক রকম হবে না। লক্ষণগুলো অনেক আলাদা হবে। তবে দলভিত্তিক চিকিৎসাও প্রয়োজন আছে। কারণ, তাদের তো সামাজিকতা শিখতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে দল ভিত্তিক চিকিৎসা হবে। তবে প্রধান শিক্ষা হবে এক শিক্ষক এক ছাত্রের। সর্বোপরি সবাইকে আসলে বাচ্চটির পেছনে সময় দিতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমাজের সবাইকেই এখানে এগিয়ে আসতে হবে।