ফুসফুস ক্যানসারের কারণ কী

ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৪১তম পর্বে এসব কারণ নিয়ে কথা বলেছেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম।
প্রশ্ন : ফুসফুসের ক্যনসার কী? এর পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : ফুসফুস থেকে যে ক্যানসার হয়, সেটিই ফুসফুসের ক্যানসার। ফুসফুস এবং এর আশপাশের অংশ টাকিয়া, লাঙ্গ পেরেনকাইমা, ট্রাকিয়াল প্যারেনকাইমা, ব্রঙ্কিওয়ল—এসব জায়গা থেকে যে ম্যালিগনেন্ট ছড়িয়ে পড়ে, এটিই ফুসফুসের ক্যানসার।
প্রশ্ন : কারণগুলো কী?
উত্তর : ফুসফুসের ক্যানসারের ৯০ শতাংশ কারণ হলো তামাক। ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াহীন তামাক। তামাক যেভাবে সে গ্রহণ করুক, সাদা পাতা, জর্দা এগুলো নিক বা ধূমপান করুক, তার ফল একই রকম হবে। ৯০ শতাংশ কারণই এটি। তা ছাড়া অন্যান্য কারণ আছে। কিছু রাসায়নিক কারণ রয়েছে। অ্যাসব্যাসটস, ক্রমিয়াম, তা ছাড়া পরিবেশগত কিছু কারণ রয়েছে, র্যাডন—এগুলোর কারণে সমস্যা হয়। কারখানায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা ঝুঁকির মধ্যে পড়েন।
প্রশ্ন : রোগীরা আপনাদের কাছে কোন কোন ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসেন?
উত্তর : কাশি সারছে না, তিন সপ্তাহের বেশি কাশি রয়েছে। কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ব্যথা—এ অভিযোগগুলো সাধারণত আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। আবার কাশির সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে, এ অভিযোগও নিয়ে আসে।
প্রশ্ন : এই যে আপনি বলছিলেন, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, এটি তো অন্যান্য রোগের বেলায়ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী করবে?
উত্তর : কাশি যদি তিন সপ্তাহের বেশি থাকে, তাহলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করতে বলা হয়। তার টিবি রয়েছে কি না, পরীক্ষা করা হয়। ওখানে তাঁর নেগেটিভ এলে ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে অবশ্যই যাবে। কারণ, তাঁকে রোগ নির্ণয় করতে হবে যে তাঁর ফুসফুসের ক্যানসার আছে কি না।
প্রশ্ন : কোন কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আপনারা এর জন্য করেন এবং কীভাবে নিশ্চিত হন?
উত্তর : সাধারণভাবে এখানে একটি বুকের এক্স-রে করতে পারি। টিস্যু ডায়াগনসিস করতে হয়। ক্যানসারের চিকিৎসা একটি জটিল চিকিৎসা। এটি ভালোভাবে প্রমাণ ছাড়া করা যায় না। কোর বায়োপসি করতে হবে।
প্রশ্ন : রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গে কি আপনারা এই পরীক্ষাগুলো দেন?
উত্তর : হ্যাঁ, প্রথমে আমরা একটি রুটিন চেকআপ দিই। তাঁকে আগে ভালো রাখতে হবে আমাদের। এর পর রোগ নির্ণয় করে আস্তে আস্তে চিকিৎসা নেওয়ার মতো তাঁকে উপযোগী করতে হবে। এ জন্য রোগটি কতখানি ছড়িয়েছে, এর পরীক্ষাও করা হয়। তাঁর কিডনির কার্যক্রম, লিভার কার্যক্রম ভালো আছে কি না, দেখতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার মতো অবস্থা আছে কি না, দেখতে হবে। তাঁর হিমোগ্লোবিন ভালো থাকতে হবে। তাঁর অন্য কোষগুলো ভালো থাকতে হবে। এ জন্য রুটিনগতভাবে এই পরীক্ষাগুলো দেওয়া হয়। এর পরও রোগীর অভিযোগ শুনে কিছু কিছু পরীক্ষা দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : ক্যানসার শব্দটা শুনলেই একজন মানুষ ও তাঁর পরিবারের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। সে ক্ষেত্রে রোগীকে আশ্বস্ত করেন কীভাবে? এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে পর্যায়টা কীভাবে ভূমিকা পালন করে?
উত্তর : আসলে এর ব্যবস্থাপনাটা একটা খুব কঠিন কাজ। তার পরও তাঁকে আশ্বস্ত করে রাখতে হয়। তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে এটি প্রাথমিক পর্যায়। তার যদি চিকিৎসার ফল ভালো। আর একদম শেষ পর্যায়ের হলে তাঁকে বলতে না পারলেও, তাঁর আত্মীয়স্বজনকে বলতে হবে। যে পর্যায়েই হোক, প্রতি পর্যায়ে তাঁর চিকিৎসা আছে। সেই চিকিৎসা নিয়ে তাঁকে ভালো থাকতে হবে। সে যেহেতু আমাদের পরিবারের একজন সদস্য।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁর ফল হয়তো ভালো না। তাই সে তাঁর চিকিৎসার জন্য সময় ব্যয় করবে না। তাই রোগী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন সবাইকে পরামর্শ দিতে হয়। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। ভালোই একটি পরামর্শ তাঁদের দিতে হয়। এটি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই করেন।
এর জন্য বাইরের দেশে কিন্তু পরামর্শক থাকেন। তবে আমাদের দেশে ওই চাপ আমরা নিয়ে নিই। আর পুষ্টিবিদের কাজটাও আমরা নিয়ে নিই। রোগীকে ভালো রাখার জন্য তাঁর খাবারটা বলে দেওয়া, তাঁকে ধরে রাখা পরামর্শের জন্য—এগুলো করি। সময় দিতে হয় একজন রোগীকে।