এক বছরেই ওজন অর্ধেক
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা এরিকা লুগো (২৯)। এক বছর আগেও তাঁর ওজন ছিল ১৪৬ কেজি। পাঁচ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার এই নারী প্রায় দুঃসাধ্য এক কাজ করেছেন। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই শরীরের ওজন প্রায় অর্ধেক করেছেন। শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন ৭২ কেজি ওজন।
এরিকা লুগোর বর্তমান ওজন ৭৪ কেজি—এটি তাঁর উচ্চতার সঙ্গে মানানসই বলা চলে। সম্প্রতি ‘এভরিডে হেলথ’ নামে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে নিজের ওজন কমানো বিষয়ে তিনি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ওজন কমানোর চর্চায় তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।
কেন শরীরের ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেন?
এরিকা লুগো : দুই বছর বয়সী আমার ছেলে খেলার জন্য ডাকত। কিন্তু শরীরের বাড়তি ওজনের কারণে তাকে বেশি সময় দিতে পারতাম না। অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠতাম। অনেক সময়ই বলে দিতাম, তার সঙ্গে খেলতে পারব না। সে মন খারাপ করত। আমারও মন খারাপ হতো। এ কারণেই ওজন কমনোর সিদ্ধান্ত নিই।
কখন থেকে ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন?
স্কুলজীবন থেকেই আমার ওজন বেশি। সব সময়ই ওজন কমানোর চেষ্টা করেছি। আমার বাচ্চার বয়স দুই বছর হওয়ার কিছু পর ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিই। ১৩ মাসের মধ্যেই ৫৫ কেজি ওজন কমাই। পরে ধীরে ধীরে পেশি গঠনের দিকে নজর দিই। এখনো শরীরচর্চা অব্যাহত আছে।
কীভাবে ওজন কমানো শুরু করলেন?
সব সময়ই আমি ওজন কমানোর চেষ্টা করেছি। ওজন কমানোর জন্য সঠিক খাবার বেছে নেওয়া ও শরীরচর্চা খুঁজে বের করা বরাবরই ক্লান্তিকর। তাই সবশেষে আমি মৌলিক পথ বেছে নিই—কম ক্যালরি গ্রহণ, বেশি ক্যালরি ক্ষয়। আর ক্যালরি মাপার জন্য স্মার্টফোনের বহু অ্যাপ আছে। মাইফিটনেসপ্যাল নামে অ্যাপটি আমি বেছে নিই।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কোন বাধাটির সম্মুখীন হয়েছেন?
আমি প্রচুর খাবার খেতাম। অনেক সময় রান্নাঘরেই সবকিছুই খেয়ে ফেলতাম। সংরক্ষণ করা খাবারও খেয়ে ফেলতাম। এই স্বভাবই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা দেয়।
কখনো কি মনে হয়েছে, সব ছেড়েছুড়ে দিই? ওই মুহূর্তে কীভাবে ওজন কমানো অব্যাহত রেখেছেন?
ওজন কমাতে গিয়ে কখনো হাল ছেড়ে দিতে মন চায়নি—এমন বললে মিথ্যা বলা হবে। প্রতি মাসেই আমার মনে হতো, সব ছেড়েছুড়ে দিই। ইনস্টাগ্রামে আমার ওজন কমানোর ছবি সব সময়ই পোস্ট দিয়েছি। এভাবে অন্যদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ারের কারণেই আমি ওজন কমানো অব্যাহত রাখতে পেরেছি। তবে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করার বিপদও আছে। একটি ব্লগে আমার ওজন কমানোর চেষ্টা নিয়ে সমালোচনা হয়। এমনকি আমার পরিবার, আমি কীভাবে কথা বলি, কেমন পোশাক পরি এসব নিয়েও সমালোচনা হয়। বিষয়টি ছিল বেশ কষ্টকর। একসময় শেয়ার করা বন্ধ রাখি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি কাটিয়ে উঠি। পরে সব সময়ই নিজের বিশ্বাসে অটুট থেকেছি—‘যদি তাঁরা তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে না চেনে, তবে তাঁদের মন্তব্যে গুরুত্ব দিও না।’
নির্দিষ্ট ওজনের শরীর আটকে যাওয়ার ক্ষেত্রে কী করেছেন?
কিছুদিন পর পরই শরীরচর্চায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। একটি ব্যায়ামে শরীরকে অভ্যস্ত করতে নেই বলে আমি মনে করি।
আপনার বর্তমান শরীরচর্চার রুটিন কী?
স্বাভাবিক শরীরচর্চার মাধ্যমে কাজটিকে আমি মজা হিসেবে নিই। কখনোই এ জন্য শরীরচর্চার রুটিন করা হয়নি। তবে শরীরচর্চার সময় ঠিক রেখেছি। প্রতিদিনই এক ঘণ্টা শরীরের ওপরের অংশের কঠোর ব্যায়াম। পরে আরো আধঘণ্টা কোমরের নিচের অংশ ও পায়ের ব্যায়াম। শরীরচর্চার ধরন ঠিক না করলেও প্রচুর ঘাম ঝরে, এমন কোনো ব্যায়াম আমি বেছে নিই। ব্যায়ামাগারেও সময় দিই।
কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস মেনে চলছেন?
আমার খাদ্যতালিকায় সকালে ডিম যেমন আছে, তেমনি দুপুরে আছে মাংস। আর রাতের খাবার দুপুরের মতোই। তবে খাদ্যতালিকায় প্রচুর সবজিও রাখি। এ ছাড়া কম চর্বি ও কম চিনিসমৃদ্ধ খাবারও গ্রহণ করি। এ ছাড়া রাতে মাঝেমধ্যে পপকর্নও খাই। ওজন কমানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও কখনো স্বাভাবিক খাবার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করিনি।