হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত কী করতে হয়?

হার্ট অ্যাটাক ভীতিকর একটি বিষয়। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি বন্ধ হয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হলে তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৫৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নূর আলম। বর্তমানে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : হার্ট অ্যাটাক অত্যন্ত ভীতিকর বিষয়। কেউ এই সম্বন্ধে কিছুটা জানেন। কেউ জানেন না। আবার কেউ বিভ্রান্তিতে থাকেন। একটু জানতে চাইব হার্ট অ্যাটাক বিষয়টি কী?
উত্তর : আমাদের শরীরে প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহের দরকার হয়। এই রক্ত সরবরাহ করে হার্ট বা হৃৎপিণ্ড। কিন্তু হৃৎপিণ্ডেরও নিজস্ব রক্তের দরকার হয়, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিগুলোকে বেঁচে থাকার জন্য। এই হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহ করে যে ধমনিগুলো, তাদের বলা হয় করনাটি আর্টরিস বা হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে কখনো যদি কোলেস্টেরল বা অতিরিক্ত চর্বি জমে, সেই রক্তনালিগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হলে হার্টে রক্ত সংবহন বন্ধ হবে বা বাধাপ্রাপ্ত হবে। সে ক্ষেত্রে তখন তীব্র ব্যথা হবে। যখন এই রক্তনালিগুলো পরিপূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয় এবং রোগী তখন হার্ট অ্যাটাকের তীব্র ব্যথা অনুভব করে।urgentPhoto
প্রশ্ন : ব্যথার ধরন ও মাত্রাটা কেমন হতে পারে?
উত্তর : হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাটা মূলত বুকের মাঝখানে হবে। ব্যথাটা চাপ ব্যথা হবে এবং এ ব্যথাটা সাধারণত অনেক জায়গায় ছড়িয়েও যেতে পারে। গলা, চোয়াল এমনকি বাঁ হাতেও ছড়িয়ে যেতে পারে। এই ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় রোগীর ঘাম হয়। রোগীর বমি হয় বা বমি বমি অনুভব হতে পারে।
প্রশ্ন : হার্টের কোনো বিশেষ রোগের সঙ্গে কি হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক রয়েছে?
উত্তর : সম্পৃক্ততা নয়, সামঞ্জস্য হয়। দেখা যায়, অনেক রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। গ্যাসের ব্যথা মনে করে সে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়নি। মনে করে এটি গ্যাসের ব্যথা। অনেক সময় একই রকম হতে পারে, যদি পেটের ওপরের দিকে ব্যথা হয়। গ্যাসের ব্যথা হয় বা পেপটিক আলসার রোগ যেটা আমরা বলি, সেটা অনেক সময় বুকে চাপ চাপ অনুভূত হয়। হার্ট বার্ন বা বুকে জ্বলা ভাব হয়। সেটা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের মতো একই রকম ব্যথা মনে হয়। কিন্তু মনে হয় যে বুকে চাপ বা বুকে ব্যথা সেটাকে অবশ্যই গ্যাসের ব্যথা মনে না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন : যখন এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে আপনাদের কাছে রোগীরা আসে, আপনারা রোগীকে কীভাবে ম্যানেজ করেন?
উত্তর : প্রথমে যখন রোগী এই ধরনের বুকে ব্যথা নিয়ে আসে, আমরা যখন ধারণা করি, এটি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, তখন আমরা ইসিজি করিয়ে আমরা দেখি, নিশ্চিত হই সেটা হার্ট অ্যাটাক কি না। এর মাত্রা বা ধরনটা কী রকম।
কিছু ওষুধ আছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা খাইয়ে দিই। অ্যাসপিরিন- এ জাতীয় ওষুধ ঠিকই খাইয়ে দিই এবং এরপর হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা ও ধরন অনুযায়ী সে ধরনের চিকিৎসা করি।
প্রশ্ন : যখন হার্ট অ্যাটাক হয়, ঝুঁকিপূর্ণ যে সময়টা, তখন রোগীর আশপাশের লোকদের প্রতি আপনাদের কী পরামর্শ থাকে?
উত্তর : সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা যখন শুরু হলো, যত দ্রুত সম্ভব তাকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ এখানে প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সময় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটু যদি দেরি হয়, কার্ডিয়াক পেশি, হার্টের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে কাছের হাসপাতালে নিতে হবে।
যদি ছয় ঘণ্টার মধ্যে বা ১২ ঘণ্টার মধ্যে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক নিরাময়ের যে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তা দেওয়া সম্ভব হয়। অনেক সময় এর আরো আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে যে ক্যাথল্যাবে নিয়ে প্রাইমারি পিসি বা এনজিওগ্রাম করে ব্লক সরানো- সেগুলোও করা যায়। তবে অবশ্যই যদি হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা মনে হয়, হাসপাতালে নিতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এতে রোগীর লাভ হবে।
প্রশ্ন : চিকিৎসা কী দিয়ে থাকেন?
উত্তর : যদি হার্ট অ্যাটাক হয়, আমরা সাধারণত ঢাকায় বা ঢাকার বাইরেও অনেক ক্যাথল্যাব সুবিধা রয়েছে। রোগী যদি ১২ ঘণ্টা বা সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুকে ব্যথা বা হার্ট অ্যাটাক নিয়ে আসে। তাকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে এনজিওগ্রামের মাধ্যমে ব্লকটা শনাক্ত করে, সেই ব্লক সরিয়ে রিং পরিয়ে দেওয়া এটা হলো হার্ট অ্যাটাকের সর্বাধুনিক চিকিৎসা। এটা করা যায়। এ ছাড়াও যেখানে ক্যাথলাব সুবিধা নেই সেসব হাসপাতালেও রোগীকে থ্রোম্বোলাইটিকস নামে একটি ওষুধ আছে, যেটি দিয়ে রোগীর ওই ব্লকটা সরানোর চেষ্টা করা হয়। তবে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হবে।
প্রশ্ন : রিং পরানোর বিষয়টি কীভাবে করেন? এর কার্যকারিতা কতটুকু?
উত্তর : আসলেই মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি দরকার। কারণ আমরা যে অসুবিধাগুলোর মুখোমুখি হই, অনেকেই এই বিষয়টি জানে না। কারণ হার্ট অ্যাটাক যখন হয়, তড়িঘড়ি করে তার আশপাশের লোকেরা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন আর্থিকভাবে প্রস্তুতি থাকে না। আমরা যখন বলি এখনই এনজিওগ্রাম করে, ব্লক অপসারণ করে স্ট্যান বসাতে হবে, তারা স্বভাবতই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।
মানুষের যদি সচেতনতা থাকে, এই আধুনিক চিকিৎসা বাংলাদেশে হচ্ছে, সরকারি ও বেরসকারিভাবে ঢাকার ও ঢাকার বাইরে হচ্ছে তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হবে। তারা যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়, চিকিৎসক সেই কাজটি করতে পারেন। প্রাইমারি পিসিআই বা এনজিওগ্রামের মধ্যে ব্লক অপসারণ করে স্ট্যানটিং করে দিতে পারবে। এতে রোগী পূর্বের রক্তনালি ফিরে পেতে পারে।
প্রশ্ন : এনজিওগ্রামের প্রতি অনেকেই ভীত থাকেন। এটি করাতে অনেকে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এই বিষয়টি আপনারা কীভাবে ব্যবস্থা করেন?
উত্তর : এনজিওগ্রাম করে রক্তনালির ব্লক আছে কোথায়, কোথায় রক্তনালিটা সরু হয়ে গেছে, সেটা আমরা দেখি।
প্রশ্ন : এর ভীতি কতখানি রয়েছে?
উত্তর : আসলে এটা তো খুব পুরোনো বা প্রচলিত বিষয় নয়, আমরা তো খুব বেশি দিন এটা শুরু করিনি, এ জন্য ভীতি কাজ করে। মানুষের মধ্যে আস্তে আস্তে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে।