নবজাতকের জন্ডিস প্রতিকারের উপায় কী?

নবজাতকের জন্ডিস একটি প্রচলিত সমস্যা। একটু সতর্ক হলেই এই অবস্থা থেকে শিশুকে রক্ষা করা যায়, ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচানো যায়।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪০১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নাসিম জাহান জেসি। বর্তমানে তিনি আজগর আলী হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : নবজাতকের জন্ডিস প্রতিকারের উপায় কী?
উত্তর : আসলে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জন্ডিস হবে সব শিশুরই। তবে প্রতিরোধ করতে সেই ক্ষেত্রে শিশুকে আমরা একটু সকালে রোদে রাখলাম আটটা থেকে ৯টার মধ্যে। শিশুকে বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। অনেক সময় কম খাওয়ার কারণে শিশুর জন্ডিস হয়। তাই বেশি খাওয়াতে হবে। আর ঝুঁকির কারণগুলো মনে রাখতে হবে। যেমন মায়ের যদি নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রথম শিশুর ক্ষেত্রে হয়তো জন্ডিস হবে না, তবে দ্বিতীয় শিশুর ক্ষেত্রে জন্ডিস হবে। সেই ক্ষেত্রে মাকে চিকিৎসকরা অ্যান্টিডি দিয়ে দেয়। প্রথম শিশুর সময় দিয়ে দিলে পরের শিশুটি সুরক্ষিত থাকে। এই জিনিসগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন : একটি শিশুর জন্ডিস হওয়ার পরবর্তীকালেও জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা আছে কি?
উত্তর : নবজাতকের ক্ষেত্রে জন্ডিস এক মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, তবে ক্ষেত্রে বিশেষে। যেমন বুকের দুধ পাচ্ছে না যেই বাচ্চারা তাদের এক থেকে সাতদিনের মধ্যে মোটামুটি জন্ডিসটা কমে যাবে।
আর বুকের দুধের থেকে জন্ডিস যেটা সেটা এক সপ্তাহ পরে তৈরি হয়। পরে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেক সময় এক মাস পর্যন্তও থাকতে পারে। তাদের বিলুরুবিনের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আমরা যদি বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ রাখি, আবার পরে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করি, সেই ক্ষেত্রে জন্ডিসটা কমে যায়।
সাধারণত জন্ডিস হলে দেখা যায় শিশু খুব দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, খেতে চাচ্ছে না। আবার অনেক সময় যদি সংক্রমণের কারণে জন্ডিস হয়, সেই ক্ষেত্রে জ্বরও থাকতে পারে। আর যাদের বুকের দুধের কারণে জন্ডিস হবে তারা খুব ভালো থাকবে। এদের দেখলে বোঝা যাবে, বেশ ভালো আছে। তবে জন্ডিস অনেক বেশি। তথন ৪৮ ঘণ্টা বুকের দুধ বন্ধ করে আবার যদি শুরু করি তখন আর সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের জন্য কী করতে পারি?
উত্তর : নব জাতকের জন্ডিস যেন বেশি না বাড়ে সেজন্য, শিশু যে ৪৮ ঘণ্টা পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে অবশ্যই তাকে আমাদের আরেকবার ফলোআপ করতে হবে, যে তার জন্ডিস তৈরি হয়েছে কি না। মা বাবারও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, একবার হলেও শিশুকে চিকিৎসক দেখাতে হবে। অনেক সময় আমরা বলি যে চার পাঁচদিন পর শিশুটিকে নিয়ে আসবেন। না এলে দেখা যায় পরে অনেক জন্ডিস নিয়ে চলে আসে, তখন অনেক সময় রক্তও পাল্টাতে হয়। শিশুর মস্তিষ্কেও ক্ষতি হয়ে যায়। অনেক সময় রক্ত পাল্টেও লাভ হয় না। মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে ক্ষতি হয়ে যায়।
আর আরেকটি জিনিস বলতে চাই, রক্ত পাল্টানোর ক্ষেত্রে শিশুর যে রক্তের গ্রুপ সেটি দিয়ে করলে শিশুর ক্ষতি হয়। তখন অন্য রক্তের গ্রুপ দিয়ে করা যায়। এটা একটা ভুল ধারণা। শিশুর একটি রক্তের গ্রুপ আমি হয়তো আরেকটি দিয়ে করে দিচ্ছি, এতে হয়তো শিশুর ক্ষতি হতে পারে অনেকে ভাবেন। অনেক ক্ষেত্রে বাবা মা হয়তো রাজিও হয় না। সেই জন্য বলতে চাই এই বদলটি আসলে অন্য রক্তের গ্রুপ দিয়েও করা যাবে। আন্তর্জাতিক একটি নিয়ম আছে। এখানে বলা আছে এভাবে করতে হয়।
প্রশ্ন : সেই ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে কী কোনো সতর্কতা মেনে চলতে হবে?
উত্তর : যদি কোনো কারণে রক্ত বদলানোর প্রয়োজন হয় তাহলে যেই রক্ত দিয়ে পাল্টেছি সেটিই দিতে হবে। অনেকে প্রশ্ন করে অন্য রক্ত দিয়ে তো রক্ত পাল্টেছি এতে কোনো সমস্যা হবে কি না। আসলে তিন মাস পর শিশু আগের রক্তের গ্রুপেই চলে আসবে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসা পরামর্শ যদি মেনে চলে তাহলে ভয়ের কিছু নেই।
প্রশ্ন : জন্ডিস কমাতে বুকের দুধ পানের ভূমিকা কতটুকু?
উত্তর : শুরুতেই যদি আমরা খুব ভালোভাবে বুকের দুধ পান করাতে পারি, তাহলে জন্ডিসের মাত্রা কম থাকে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যদি অন্যান্য কোনো ঝুঁকির বিষয় না থাকে। যদি রক্তের গ্রুপের সমস্যা না থাকে, সংক্রমণ না থাকে সে ক্ষেত্রে ঘন ঘন মায়ের দুধ দিলে জন্ডিস ঘন ঘন তৈরির আশঙ্কা কমে যায়।