শিশুর জ্বরে খিঁচুনি হলে করণীয়

অনেক সময় শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের পর খিঁচুনি হয়। এটি কখনো কখনো জটিল হতে পারে। আবার কখনো সাধারণ হতে পারে।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৯৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আহম্মেদ নাজমুন আনাম। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
urgentPhoto
প্রশ্ন : অনেক সময় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনির সমস্যা হয়।
উত্তর : আসলে জ্বরের পর খিঁচুনি আমরা প্রায় ক্ষেত্রেই দেখে থাকি। এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুব জটিল অবস্থা। তবে প্রায়ই ক্ষেত্রে যদি জ্বরের পর খিঁচুনি হয়, তিনটি রোগ আমরা মাথায় আনি। এর মধ্যে একটি রোগকে আমরা ফ্যাবরাইল কনভালশন বলি। যেটা জ্বরজনিত খিঁচুনি। আর দুটি রোগ আছে। ম্যানিনজাইটিস ও অ্যানগেফেলাইটিস। এই দুটি রোগ খুব খারাপ। যদি ফ্যাবরাইল কনভালশন হয়, তাহলে আসলে অতটা ভয়ের কিছু নেই। এতে মা-বাবাকে আশ্বস্ত হতে বলব।
কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখে আমরা নিশ্চিত হই এটা কি ফ্যাবরাইল কনভালশন নাকি অন্য দুটো রোগ। এই রোগ তিনটি সাধারণত জ্বরের পরেই হয়।
প্রশ্ন : শিশুর জ্বরের পাশাপাশি খিঁচুনি হলে তাৎক্ষণিকভাবে বাবা-মায়ের করণীয় কী?
উত্তর : জ্বরের পরে যদি খিঁচুনি হয়, আমরা কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে বলব। যদি খিঁচুনি পাঁচ থেকে ১০ মিনিট হয়, যদি খিঁচুনির পরে সে অজ্ঞান না হয়ে যায়, তাহলে আমরা বলব, খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এই ধরনের ইতিহাস যদি আগেও থাকে যে তার জ্বরের পর খিঁচুনি হয়েছে, তাহলে এটা আমরা ফ্যাবরাইল কনভালশনে ফেলব। তাহলে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন না হয়ে, বাম কাত বা ডান কাত করে তার ঘাড়কে একটু উঠিয়ে দিতে বলি। মুখ দিয়ে কোনো ধরনের নিঃসরণ বের হলে পরিষ্কার করে দিতে বলি। তার শ্বাসনালিটা আমরা পরিষ্কার রাখতে বলি। আর যদি খিঁচুনি চলতে থাকে তাহলে আমরা বলব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। অথবা হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।
প্রশ্ন : এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে যখন আপনাদের কাছে আসে, আপনারা তখন কী করেন?
উত্তর : খিঁচুনি যদি চলতে থাকে আমরা ডায়াজিপাম দিই। পায়খানার রাস্তায় দিয়ে দিই। তখন দেখা যায়, ফ্যাবরাইল কনভালশন হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা থেমে যায়। আর খুব একটা বাড়েও না। এটা ঠিক হয়ে যায়। তারপর আমরা অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিই। ইমার্জেন্সিতে আনার পর আমরা একটু ডায়াজিপাম দিই।
প্রশ্ন : কোনো পরামর্শ কী থাকে এরপর?
উত্তর : জ্বরজনিত খিঁচুনি যদি ফ্যাবরাইল কনভালশন হয়, এটি খুব স্বাভাবিক। অনেক কারণে এটা হতে পারে। সাধারণত ছয় মাস থেকে ছয় বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমরা বলি জ্বরের পর খিঁচুনি হতে পারে। কিন্তু কত জ্বরে হবে এটা বলা মুশকিল। তবে আমরা দেখেছি ৩৮ বা ৩৯ মাসের সময়ও হতে পারে। তবে সাধারণত ১২ থেকে ২৪ মাস বয়সে এটি হয়।
সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের কোনো সংক্রমণের পরই এই খিঁচুনি হয়। এই জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমরা বলব যদি জ্বর হয় বা জ্বর জ্বর ভাব হয়, আমরা দুটো জিনিস তাদের বলে দিই, তাদের ওজন মেপে আমরা নাপা সিরাপ বা প্যারাসিটামল সিরাপ লিখে দিই এবং স্যাডিল ট্যাবলেট পরপর তিনদিন খেতে দিই। কারণ, একবার যদি খিঁচুনি হয় আমরা দেখেছি যে ৭২ ঘণ্টার ভেতর আরেকবার হতে পারে। এই জন্য আমরা ছয় বছর বয়স পর্যন্ত মা বাবাকে বলে দিই, আপনি যেখানে যান, যদি কোথাও বেড়াতেও যান সব সময় প্যারাসিটামল সিরাপ ও স্যাডিল ট্যাবলেট সাথে রাখবেন। চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারিত ডোজ অনুযায়ী আপনি খাইয়ে দেবেন। যাতে করে এটি আবার ফেরত না আসে।
প্রশ্ন: এগুলো তো সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রে। জটিল জ্বরের ক্ষেত্রে বলুন?
উত্তর : আসলে যদি ম্যানিনজাইটিস বা এনকাফালাইটিস হয়, তাহলে আমরা কিছু লক্ষণ দেখি। এ ক্ষেত্রেও সাধারণত জ্বরের পর খিঁচুনি হয়। এই খিঁচুনি যদি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি হয়, একই দিনে যদি তিন-চারবার হয়, তাহলে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হব। এটি এনকাফালাইটিজের লক্ষণ। ম্যানিনজাইটিসে সাধারণত অজ্ঞান হয় না। কিন্তু কয়েকবার খিঁচুনি হতে পারে। বাচ্চা ঘোরের মধ্যে থাকে, সচেতন অবস্থায় সেভাবে থাকে না। প্রচুর জ্বর থাকে। কিছু লক্ষণ দেখে আমরা নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা দিই। তবে এ দুটো কারণ আমরা জটিলভাবে নেব।
প্রশ্ন : এর চিকিৎসা আপনারা কীভাবে করেন?
উত্তর : এই ক্ষেত্রে আমরা সব সময় বলব এই রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকবে। ম্যানিনজাইটিস বা এনকাফালাইটিস হয় এর জন্য কিছু পরীক্ষা করতে হবে। লাম্বার পাংচার বলি, সিএসএফ ফ্লুইড আমরা কালেকশন করি, সেটা পরীক্ষা করে দেখি। ১০ থেকে ১৪ দিন ইনজেকটেবল অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো। তবে অবশ্যই রোগীকে ভর্তি থাকতে হবে। ইনজেকশনের পুরো ডোজটা শেষ করতে হবে। না হলে এর জন্য পরে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
প্রশ্ন: ম্যানিনজাইটিস বা এনকাফালাইটিসের ক্ষেত্রে কি কোনো নির্দিষ্ট বয়স রয়েছে?
উত্তর : ছয় মাস থেকে ছয় বছরের বাবু যদি আসে, আমরা ফ্যাবারাইল কনভালশন মাথায় রাখব। ছয় মাসের নিচে যদি হয় বা ছয় বছরের ওপরে যদি হয়, তাহলে ফ্যাবরাইল কনভালশন রোগকে আমরা বাদই দিয়ে দেব। তখন আমরা মেনিনজাইটিস বা এনকাফালাইটিস মাথায় রাখব।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের জন্য কিছু বলুন।
উত্তর : প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেব। জ্বরের জন্য আমরা প্যারাসিটামল খাব। যদি ফ্যাবরাইল কনভালশন হয়ে থাকে, স্যাডিল ট্যাবলেট ছয় বছর বয়স পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খাওয়াব।
অনেক সময় জ্বর জ্বর ভাব হলেও খিঁচুনি হতে পারে। ওই সময়ও কিন্তু স্যাডিল ট্যাবলেট শুরু করে দিতে হবে। কারণ কার কত তাপমাত্রায় খিঁচুনি হবে এটা বলা মুশকিল। সুতরাং নাপা সিরাপ ও স্যাডিল ট্যাবলেট খেতে বলব।