নবজাতককে নিয়ে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

নবজাতকের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোন সময় তাই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪১২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মেজবাহ উদ্দিন। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: ঠিক কোন সময়টাতে নবজাতকের সমস্যা হলে বাবা-মা চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
উত্তর : বাচ্চা যখন বুকের দুধ খেতে চাইবে না, বাচ্চার যখন বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে তখন যেতে হবে। একটা বাচ্চা সাধারণত গোলাপি রঙের থাকে। সে বাচ্চা যদি কোনো কারণে নীলাভ হয়ে যায় বা রক্তশূন্যতায় ম্লান হয়ে যাচ্ছে,অথবা বাচ্চা ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না, কম ওজনের বাচ্চা,বাচ্চা ধরেন তিনদিনের বেশি সময় ধরে প্রসাব করছে না বা বাচ্চা জন্মের পর ২৪ ঘণ্টার আগে সে পায়খানা করেনি, বাচ্চার কোনো কারণে পেট ফেঁপে গেছে, বাচ্চা কোনো কারণে বমি করছে,বাচ্চা দুধ নিয়ে দুধ রাখতে পারছে না,আবার বাচ্চার কোনো সময়ে জ্বর থাকতেও পারে,কোনো সময় নিচে নেমেও যেতে পারে,বাচ্চার নাভিতে হয়তো দুর্গন্ধ দেখা গেছে, নাভি পরিষ্কার থাকার কথা। কোনো গন্ধ আসার কথা নয়- সে ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একটি অসুস্থ শিশুর যেই বিষয়গুলো আছে সেগুলো জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
প্রশ্ন : এই সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে করণীয় কী।
উত্তর : এখানে স্বাস্থ্য-শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাকে বিশেষ করে বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রতি অনুপ্রাণিত করতে হবে। বুকের দুধ খেলে একটি বাচ্চার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বন্ধন বেশি হয় এবং তার মস্তিষ্কের উৎকর্ষতাও ২০ শতাংশ বেশি হয়। একটি গবেষণায় এটি দেখা গেছে, যে বাচ্চা বুকের দুধ খেল,তার মস্তিষ্কের উৎকর্ষ অন্য যে বাচ্চা বুকের দুধ খেল না তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি হবে।
আজকের যুগ তো হলো বিজ্ঞানের যুগ,বুদ্ধির যুগ। বুদ্ধি বা বিজ্ঞান নিয়েই পৃথিবী বেঁচে আছে। আমাদের শিশুরাও প্রতিযোগিতায় বেঁচে থাকবে যদি তাদের বিদ্যাবুদ্ধি ভালো থাকে। এটি একটি বিষয়।
দ্বিতীয় আরেকটি জিনিস। এখানেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হাত ধোয়া,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। অনেক মায়েরাই ঠিকমতো জানেন না। তাদের খাবার দেওয়ার আগে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। পরিষ্কার জামা কাপড় পরতে হবে। হাতকে ভালোভাবে ধুতে হবে। আর বুকের দুধ দেওয়ার কিছু পদ্ধতি আছে,সেগুলো মাকে শিখতে হবে।
গর্ভধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশুর কীভাবে যত্ন নিতে হবে,কীভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এগুলো গর্ভধারণ সময়ে যেন প্রতিটি মা নেয়। আসলে হয় কী,এই সময়ে মায়েরা এই শিক্ষাটা নেয় না। পরে যখন একটি নতুন অতিথি চলে আসল তার কোলে, উনি তখন কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে যায় যে আমি আমার শিশুকে নিয়ে কী করব? একটা শিশু তো অনেক কারণেই কাঁদে। ক্ষুধা লাগলে কাঁদে,প্রসাব করার সময় কাঁদে, প্রস্রাব করার পরে কাঁদে,পায়খানা করার সময় কাঁদে,কোলে উঠতে চাইলে কাঁদে। কাঁদাকে অনেকে অসুখ মনে করে। এটা তো ঠিক নয়। তাই কাঁদার বিষয়টি মাকে বুঝতে হবে। আবার একই কথায় ফিরে আসি যে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এটাও একটা শিক্ষা যে বাচ্চাকে কীভাবে আমি বড় করব।
আরেকটি বিষয় শিশুর টিকা। ইপিআই। এই বিষয়ে অবশ্য মায়ের খুব সচেতন আমি মনে করি। বাংলাদেশে এটার ব্যপ্তি প্রায় ৯০ ভাগেরও বেশি।