মেরুদণ্ডের ব্যথা রোধে যেভাবে ব্যায়াম করবেন
মেরুদণ্ডের ব্যথা বেশ প্রচলিত সমস্যা। কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো করলে মেরুদণ্ডের ব্যথা প্রতিরোধ করা যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪২৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. জোনাইদ শফিক। বর্তমানে তিনি জাপান বাংলাদেশ ফ্রন্ডশিপ হাসপাতের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যায়ামের বাইরেও জীবনযাপনের পরিবর্তন কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এবং কী দরকার? পাশপাশি ব্যায়াম কী দরকার?
উত্তর : আমি প্রথমে ব্যায়ামের দিকে চলে যাই। কারণ, ব্যায়ামটা খুব প্রচলিত। যার রোগ হয়েছে সেও করতে পারে, নাও করতে পারে। কোমরের ব্যায়াম খুব সোজা। কোমরটাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। মেরুদণ্ডের ব্যথার যত ঘটনা ঘটে এর মধ্যে ৮০ ভাগ কোমরে হবে। কোমরের ব্যায়াম খুব সুন্দর। আপনি বিছানায়ও করতে পারেন, অথবা সমান হয়ে মাটিতেও করতে পারেন। প্রথমে বাম পা ওঠাবেন ১০ পর্যন্ত গুনে। এরপর ডান পা ওঠাবেন ১০ পর্যন্ত গুনে। এরপর আপনি দুই পা একসাথে ওঠাবেন ১০ পর্যন্ত গুনে। এরপর আপনি এক হাঁটু ভাঁজ করে পেটের মধ্যে নিয়ে আসবেন। আরেকটা হাঁটু ভাজ করে পেটের কাছে নিয়ে আসবেন। দুইটা হাঁটু ভাঁজ করে পেটের কাছে নিয়ে আসবেন ১০ পর্যন্ত গুনে। এই হাঁটু ধরা অবস্থায় আপনি একবার ডান দিকে কাত হবেন ১০ পর্যন্ত গুনে। আবার বাম দিকে কাত হবেন ১০ পর্যন্ত গুনে। যাদের ব্যথা হয়েছে তারাও এটা করতে পারবেন,যাদের ব্যথা হয়নি তারাও করতে পারবে। তবে প্রচণ্ড ব্যথা অবস্থায় করবেন না। এতে বেশি বেড়ে যাবে। এটা কোমরের।
আর ঘাড়েরটা আরো সোজা। এটা আপনি বসে করতে পারেন যেকোনো জায়গায়। অফিসে বসে আছেন,বাসায় বসে আছেন, গাড়িতে বসে আছেন,মাথাকে ডানদিকে,বাম দিকে ওপরে নিচে ঘুরাতে হবে। এটা সকালে ২০ বার, রাতে ২০ বার করতে হবে। এরপর চাপ দিয়ে করতে হবে। নিচের দিকে থুতনিটাতে চাপ দিবে, মাথার ওপরে চাপ দিবেন। এরপর ডান দিকে চাপ দিবেন একবার, বাম দিকে চাপ দিবেন। এটা যদি ২০ বার,২০ বার করে সকাল-বিকেল করেন,তাহলে সাধারণত ব্যথা সহজে হবে না। অথবা আরেকবার হবে না।
প্রশ্ন : আর কোমের যে ব্যায়ামের কথা বলছিলেন, সেটা কতবার করবে?
উত্তর : এটাও ১৫ থেকে ২০ বার করবে। সকালে ও রাতে। ব্যায়ামের নিয়ম হচ্ছে, হয়তো খালি পেটে করবে, আর নয়তো খাবার এক ঘণ্টা পর করবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে করতে পারে। শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না। আপনি যে বললেন জীবনযাপন এই অবস্থাগুলো মেনে চলতে হবে। এর সাথে খাবারও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের কারণগুলোর মধ্যে দেখা গেছে ক্যালসিয়ামের অভাবে অনেক সময় নারীদের এই সমস্যা হয়। হাড় ক্ষয়ের রোগটা নারীদের বেশি হয়। চার জন নারীর যদি হয়,একজন পুরুষের হয় তাহলে। এখানে আমাদের ভিটামিন ডি-এর অভাব হয়। যেহেতু আমরা সূর্যের আলো কম পাই। আর একটি হলো ক্যালসিয়ামের অভাবে হয়। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সবার খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে থাকা উচিত। যেমন আমি সবসময় বলি গুঁড়া মাছের কাঁটা হোক বা সামুদ্রিক মাছের কাঁটা হোক,পাতলা সর ছাড়া দুধ, ডিমের সাদা অংশ,ছোটো কলা,পুডিং,পুঁইশাক, পালং শাক, এগুলো যদি নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে থাকে, তাহলে প্রাকৃতিক উপায়ে ক্যালসিয়ামটা পূর্ণ হয়ে যাবে। আমরা বলি যে রোদে এক ঘণ্টা বাইরে দাঁড়াতে।
সাধারণত সকাল ১১টা-১২টার মধ্যে যে রোদ থাকে,একটু তাপ সহনীয় অবস্থায়, ১২টার পরে নয়। এই অবস্থায় যদি এক ঘণ্টা থাকে তাহলে ভিটামিন ডি ভেতর থেকে তৈরি হবে। এই দুটো যদি ঠিকমতো রাখেন অনেকটা ভালো থাকা যাবে। আসলে একটি বয়সের পর হাড় ক্ষয় হবেই। চুল যেমন পাকে, তেমনভাবে হতে পারে। নারীদের আবার হরমোন জনিত কারণও রয়েছে।
আরেকটি হলো ওজনাধিক্যতা। এর কারণে হতে পারে। জীবনযাপনের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। আমরা বলি যে হাড় ক্ষয়ের অন্যতম কারণ হলো,ছোটোবেলায় যদি বাত জ্বরের ইতিহাস থাকে,বাবা মায়ের যদি এই রোগ থাকে, জীবনে যারা অনিয়ম করে তাদের হতে পারে। এগুলো যদি সবাই একটু সচেতনভাবে মেনে চলতে পারে তাহলে রোগ একটু ধীর গতির হবে। পাশাপাশি খুব জটিল হবে না।