অ্যান্টি ওবেসিটি ডে : ওজন কমানো কেন জরুরি?
আজ ২৬ নভেম্বর, অ্যান্টি ওবেসিটি ডে। ওজন কমানো কেন জরুরি এ বিষয় নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৬৯তম পর্বে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা। বর্তমানে তিনি জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : স্থূলতা বলতে আসলে কী বোঝায়।
উত্তর : শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ চর্বি বেড়ে গেলে বডি মাস ইনডেক্সটা বেড়ে যায়। বডি মাস ইনডেক্স বয়স অনুযায়ী সব সময় ভাগ করা থাকে। যেমন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য ১৮ থেকে তেইশের মধ্যে যদি বিএমআই থাকে, তাহলে উনি ঠিক থাকবেন। বিএমআই যখন তেইশের ওপরে চলে যাবে, তিনি প্রথম গ্রেডের স্থূলতায় থাকবেন। যখন এটা ত্রিশের ওপর চলে যাবে, তিনি দ্বিতীয় ভাগের স্থূলতায় থাকবেন। যখন এটি চল্লিশের ওপর চলে যাবে, তখন তিনি মরবিড ওবেসিটি বা গ্রেট তিন স্থূলতায় চলে যাবেন। তেমনি পুরুষদের ক্ষেত্রে, তাদের বিএমআই যদি পঁচিশের ওপর চলে যায়—গ্রেড এক, ত্রিশের ওপর—গ্রেড টু, চল্লিশের ওপর—গ্রেড তিন স্থূলতায় চলে যাবে। এটা হলো স্থূলতা পরিমাপের একটি সাধারণ প্যারামিটার। আর বাহ্যিকভাবে আমরা দেখতে পাই আমরা যদি বাড়তি ক্যালোরি নিয়ে থাকি, বিশেষ করে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে। কোনোভাবে যদি ক্যালোরি না পোড়ে, শরীরের বিভিন্ন অংশে এটি জমা হতে থাকে। তখন আমরা বাহ্যিকভাবে বুঝি শরীরের আকার নষ্ট হয়ে যায়। কারো হাত মুটিয়ে যায়, কারো পেট একটু বেড়ে যায়। ছেলে বা মেয়েদের গাইনয়েড বা এনড্রয়েড চর্বিগুলো বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় উভয় চর্বিই বাড়ছে। নিচের পেট ও ওপরের পেট মিলেই কিন্তু একটা স্থূলতা তৈরি হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার সেন্ট্রাল ওবেসিটিও হয়ে যায়। এক কথায় বলতে পারি স্থূলতা হলো অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার জন্য। অনেকের ধারণা থাকে শুধু চর্বিজাতীয় খাবার খেলেই স্থূলতা হয়। আমরা আসলে প্রচুর শর্করাজাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। শর্করাজাতীয় খাবার হয়তো ভাত, রুটি, চিঁড়া, মুড়ি এগুলো মুটিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় একটি কারণ। কারণ, শর্করাজাতীয় খাবার এমনিতেই আমাদের শরীরে চর্বি হিসেবে ধরা দেয়। আপনি যেটা বেশি খাবেন, সেটা শরীরে কাজে না লেগে, শরীরে চর্বি তৈরি করে। শুধু তৈলাক্ত খাবার নয়, অন্য যে খাবারগুলো আছে সেগুলোকে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
প্রশ্ন : স্থূলতার খারাপ প্রভাবগুলো কী কী হতে পারে?
উত্তর : শিশুদের ক্ষেত্রে বিএমআই একটু অন্যভাবে পরিমাপ করা হয়। আমরা ইদানীং দেখছি শিশুদের ক্ষেত্রেও এটা অনেক বেশি বাড়ছে। আসলে স্থূলতাই একটি রোগ। কারণ এই একটি রোগ যদি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে, কার্ডিওলজি, লিভারের রোগ, কিডনি রোগ—এমনকি ক্যানসারকেও আপনি রক্ষা করতে পারবে। কারণ, যখনই আপনার ওজনাধিক্য কাজ করবে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের পা এবং মেরুদণ্ডের নির্দিষ্ট ওজন নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। যখনই আমরা বাড়তি চাপ দিচ্ছি আমাদের পায়ে, মেরুদণ্ডে চাপ পড়ছে। ওজনাধিক্য এবং নির্দিষ্ট ওজনের কম উভয়ই ক্ষতিকর। তাই আমাদের সব সময় সঠিক ওজনে থাকতে হবে। কারণ, যার ওজনাধিক্য হবে, তার কিন্তু অনেক রোগ হতে পারে। তার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে একজন সুস্থ মানুষ, যত দ্রুত ঠিক হতে পারে, তত ভালো।
ওজনাধিক্য বাচ্চাদের মধ্যে হলে তারা খেলাধুলা করতে পারে না, মস্তিষ্কের যে কাজ এটিও তারা করতে পারে না। বুদ্ধিটা কম থাকে। তাদের স্মৃতি খুব ভালো কাজ করে না, আত্মবিশ্বাস পায় না বাচ্চারা। শিশু অবস্থায় যদি ওজনাধিক্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ভালো। মায়েরা সব সময় মাথায় রাখে শুধু বাচ্চার ওজন হলেই ভালো। সব সময় মাথায় রাখতে হবে বাচ্চার একটি সঠিক ওজন হতে হবে। মায়েদের ধারণা হলো, প্রতি মাসেই এক কেজি করে ওজন বাড়বে। এক বছরের একটা বাচ্চার তো অনেক বেশি ওজন হয়ে যাবে। তাই মায়েরা এটা বোঝে না যে বাচ্চা যখন খেলাধুলা করে যেই খাবারই খায়, তার ক্যালোরি পুড়ছে। এটিই কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যখনই বাচ্চা স্থূল হয়ে যাবে, বাচ্চার খেলবে কম। মায়েরা হয়তো দুষ্ট বাচ্চা পছন্দ করছে না, তবে এটিই কিন্তু ঠিক। পরিবারের ইতিহাস প্রয়োজন, যে কোনো ধরনের খাবার শিশুর জন্য প্রয়োজন। মা কিন্তু চায় প্রতি বেলায় খাবার দিতে। এটা কিন্তু চিন্তা করে না যে বাচ্চার পাকস্থলী কতটুকু। আমাদের চেয়ে কম। তাই আপনি আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর খাবার দেবেন। এটাই কাম্য। অনেক মা আছেন রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। আমার মনে হয়, ঘুমের মধ্যে বাচ্চাদের খাওয়ানো উচিত নয়। যেহেতু ওই বাচ্চার ক্যালোরি পোড়ানোর কিছু নেই, যে তাতে রাতে খাবার দিতে হবে। এ জন্য কিন্তু বাচ্চাদের হজমে সমস্যাও হতে পারে। অধিকাংশ বাচ্চা সকালে খাবার খায় না। এর একটি কারণ, অনেক মা এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত ঘুমের মধ্যে রাতে খাওয়ায়। সেটি অবশ্যই না করা ভালো।