ভালো বসের ১০ গুণ

বসের কাজ কি শুধু হুকুম করা? বস তো বন্ধুর মতো হতে পারেন, হতে পারেন অভিভাবকের মতো। অনেকে ভাবেন ঝাড়ি দিয়ে কাজ আদায় করাই বসের কাজ। কিন্তু করপোরেট ঘরানার এই যুগে বসদের কাজের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কাজের কৌশল। বসরাই এখন অধীনস্তদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। অফিসের কাজ তো বটেই, এর বাইরেও ব্যক্তিগত সম্পর্কেও এগিয়ে থাকছেন বসেরা। আর তাই তো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বসের কাছেই বেশি দায়বদ্ধ থাকেন অধীনস্তরা। ক্যারিয়ার-বিষয়ক ওয়েবসাইট এন্টারপ্রেনিউর ডটকম জানিয়েছে ভালো বসের ১০ গুণের কথা।
১. অসম্ভবকে সম্ভব করা
বস মানে নেতা। আর নেতাদের কাজই হচ্ছে আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নেওয়া এবং সেটা পূরণ করা। বসকে হতে হবে দূরদর্শী। সবাই যেটা অসম্ভব বলবেন, বসকে সেটা সম্ভব করতে হবে। আর সে জন্যই তাঁর থাকতে হবে নিজের ওপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এবং নিজের টিম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। তাহলেই কেবল অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়ে দেওয়া সম্ভব।
২. সুযোগ এবং সম্ভাবনা দেখার ক্ষমতা
হীরের টুকরোকে কাচ ভেবে ভুল করেন না যোগ্য বসরা। তাঁরা ঠিকঠাক জানেন কাকে দিয়ে কী করানো সম্ভব। আর সে কারণেই সম্ভাবনাময় অধীনস্তদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করাই ভালো বসের কাজ। সেই সঙ্গে কাজের সুযোগ তৈরি করা এবং কর্মীর সম্ভাবনাকে বিকশিত করার ব্যবস্থা করে দেওয়াই ভালো বসের কাজ। কারণ কর্মীদের কেউ ভালো করলে সুনাম হবে বসেরই।
৩. আবেগপ্রবণ নয়
ভালো বসরা সব সময়ই পেশাদার। কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা কখনো আবেগকে টেনে আনেন না। আবেগ দিয়ে বিচার করেন না বা সিদ্ধান্ত নেন না। ভালো বসরা কখনোই সবার সামনে নিজেদের আবেগ প্রকাশ করবেন না। তবে সবকিছুর পরেও তাঁরা মানুষ। কর্মীদের ভালো কাজের প্রশংসা যেমন করতে হয় তেমনি খারাপটাও ধরিয়ে দিতে হয়। কিন্তু সেই প্রশংসা বা শাসনও তাঁরা জায়গা এবং মানুষ বুঝে করেন।
৪. বিপদে ফেলেন না, বিপদে পড়েন
যেখানে বিপদের গন্ধ পান, সেখানে কখনোই কর্মীদের ঠেলে দেন না ভালো বসরা। ঝুঁকি বা বিপদের সম্ভাবনা যেখানে রয়েছে সেখানে বসরাই আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন এবং কর্মীদের নিরাপদে রাখেন। একজন ভালো বস তাঁর কর্মীকে তখনই কোনো দায়িত্ব দেবেন যখন তিনি ভালোমতো জানবেন সেই কাজটি করতে গিয়ে তাঁর কর্মীটির ক্যারিয়ার বা ব্যক্তিগত জীবনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আর যদি আশঙ্কা থাকে তাহলে তার দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধেই তুলে নেবেন।
৫. প্রতিদিন এগিয়ে যাওয়া
ভালো বসদের প্রধান গুণ হচ্ছে ধারাবাহিকতা। তাঁরা প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে যান। প্রতিদিন আগের দিনের চেয়ে ভালো করার চেষ্টা একজন ভালো বসের মধ্যে যেমন থাকে, সেভাবে তিনি তারা কর্মীদেরও এগিয়ে নেন। ভালো বস সামনে থাকলে কর্মীরাও নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন সেরা কাজটি দেওয়ার এবং টিমকে এগিয়ে নেওয়ার।
৬. কর্তৃত্ব খাটান না
শুধু পদবি পেলেই বস হওয়া যায় না। কর্মীরা যদি মন থেকে নেতা হিসেবে মেনে না নেন, যে কোনো বসের পক্ষেই কাজ করা কঠিন। তাই ভালো বসদের গুণ হচ্ছে তাঁরা কখনো কর্তৃত্ব খাটান না। নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বোঝানোর জন্য কখনো অন্যায় আচরণ করেন না কর্মীদের সঙ্গে। ভালো বসদের কাছে কর্মীরাই আসেন সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনার জন্য। সেই আস্থা এবং নেতৃত্বের জায়গাটি বসদের নিজেদের যোগ্যতায় তৈরি করে নিতে হয়।
৭. কর্মীদের খেয়াল রাখা
বসদের কাজ একটাই। প্রতিষ্ঠানের উন্নতি, নিজের লক্ষ্য পূরণ করা। এটুকু করলেই অফিসে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ভালো বসরা এর থেকে আরেকটু এগিয়ে। কর্মীদের যে কোনো প্রয়োজনে তাঁরা এগিয়ে আসেন। চাকরি বদল, বেতন বাড়ানো বা পারিবারিক ঝামেলা সবকিছু থেকে কর্মীদের বাঁচিয়ে রাখেন একজন ভালো বস। আর তাই প্রতিষ্ঠান বদলালেও ভালো বসদের সঙ্গে কর্মীদের সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হয় না।
৮. কথায় নয় কাজে বড়
অনেকেই মনে করেন চাপার জোরে ভালো বস হওয়া সম্ভব। কিন্তু সত্যিকারের ভালো বসরা কথা নয় কাজপাগল। তাঁদের কাজই তাঁদের পক্ষে কথা বলে। ভালো বসরা সব সময় নিজেদের আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। এবং সে কারণে খুব সহজেই তারা টিম তৈরি করতে পারে। টিমের মধ্যে ভাঙাগড়া থাকবেই কিন্তু ভালো বসেরা যে কোনো পরিস্থিতিকে নিজের টিমের মধ্যে সমন্বয় করে চলার এবং টিমকে উজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন।
৯. হাস্যরস
বস মানেই গুরুগম্ভীর একজন মানুষ নন। ভালো বসেরা সবসময় সিরিয়াস হয়ে থাকতে পছন্দ করেন না। তারা কাজের মধ্যেই হাসিঠাট্টা করেন, গল্পগুজব করেন, কর্মীদের সঙ্গে চা খেতে বেরিয়ে যান, বৃষ্টির দিনে নিজের গাড়িতে কর্মীদের বাসায় পৌঁছে দেন। এই ছোটখাট ব্যাপারগুলো কর্মীদের কাছে অনেক বড়। তারা এ ধরণের বসদের জন্যই নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে থাকে।
১০. গ্রহণযোগ্যতা
ভালো বস হয়ে উঠতে হলে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হয়। সেটা যেমন নিজের অফিসে তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও। আর সে কারণেই কর্মস্থল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভালো বসেরা কখনো বিপদে পড়েন না। তারা যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সক্ষম। সে কারণেই তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নয় বরং প্রতিষ্ঠানই তাদের উপর নির্ভরশীল থাকে। ভালো বসেরা কর্মীদের জন্য নতুন চাকরি বা নতুন প্রতিষ্ঠানে সুযোগ তৈরি করে কারণ নতুন প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার মত গ্রহণযোগ্যতা ভালো বসদের থাকে।