শীতের মৌসুমে বাইক রাইড-এর সমস্যা ও করণীয়
শারীরিক ব্যায়ামের কোনো সময় নেই। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ক্ষেত্রেই ব্যায়ামের প্রয়োজন। তবে শীতের সময় ব্যায়ামটা বেশ উপভোগ্য। যদিও অনেকের ক্ষেত্রে এ সময়টাতে ঘর থেকে বের হওয়াটা বেশ শীতল হিমালয় জয় করার মতই হয়ে যায়। আর সেটা যদি হয় বাইক রাইডিং, সেখানে আরও অনেক কিছু রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপার চলে আসে। সেই প্রস্তুতির কথা জানিয়ে দিতেই এবারের ফিচার শীতে বাইক রাইডিং নিয়ে।
শীতের মৌসুমে বাইক রাইড-এর সমস্যাগুলো
- ত্বক ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে আসা
প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়া বাইক চালানোর সময় চামড়ায় রীতিমত সূঁচের মত ফোটে। বাইক দ্রুত গতিতে সামনে চলার সময় মুখসহ শরীরের অনাবৃত অংশগুলো বিপরীত দিক থেকে ধেয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে আসে। বাতাসটা কতটুকু ঠান্ডা তার থেকে ত্বকের ক্ষতির দিকটা নির্ভর করে কতক্ষণ ধরে বাইক চলছে তার উপর। খুব স্বল্প সময়ের তীব্র শীতও শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য হুমকি হতে পারে।
অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ বাইক চালানোয় শরীর গরম হয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যায়; এমনকি শীতেও। এই ঘামও ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাছাড়া স্থান ভেদে বাতাসের গতিবেগের উপর নির্ভর করছে কতক্ষণ চোখ খোলা রেখে বাইক চালিয়ে যাওয়া যাবে।
- পিচ্ছিল রাস্তাঘাট
শীতে শিশির জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। মাঝে মাঝে কখনো হাল্কা বৃষ্টিপাত শীতের কোনো রৌদ্রজ্জ্বল দিনে যেকোনো বাইক রাইডারকে চমকে দেয়। তাই বাইকের চাকা যত ভালোই হোক না কেন; ভেজা চাকা নিয়ে কোনো রকমে হয়ত সোজা অনেকটা পথ ছুটে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাঁক নেয়া বা ইউ টার্ন নিয়ে ঘুরে আসা? অবশ্যই কোনো ভালো ধারণা হবে না। বাংলাদেশে তুষারপাত অমাবস্যার চাঁদের মত হলেও বাইক নিয়ে দীর্ঘ ভ্রমণে যাবার ক্ষেত্রে বিশেষত কোনো মফস্বল শহরে বা গ্রামের বিস্তীর্ণ ঘাসে ভেজা মাঠ পেরবার সময় অত্যাধুনিক টায়ারের কাটাগুলোও অদ্ভূত আচরণ করতে পারে।
- দৃষ্টিগোচরতা
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই শুরু হতে থাকে ছোট দিন ও দীর্ঘ রাতের মৌসুম। তার মানে কম আলোতে বা কখনো সম্পূর্ণ অন্ধকারে বাইক চালানোটা হরহামেশাই ঘটবে। এমনকি বাইকের হেডলাইট এবং টেললাইটের উপরও এ সময় পুরোপুরি নির্ভর করা দুষ্কর। যেহেতু ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন ছোট-বড় গাড়ির সাথে রাস্তা শেয়ার করতে হচ্ছে, তাই কুয়াশার কারণে ক্ষণিকের অন্ধত্বও অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এছাড়া খোলা ম্যানহল, রোড ব্রেকার, রাস্তার পাশের আইল্যান্ড, নুয়ে পড়া গাছের ডালপালা, ও ল্যাম্প পোস্টের পাশাপাশি হঠাৎ রাস্তা পারাপার হওয়া মানুষের ঝামেলা তো আছেই।
শীতকালে বাইক রাইড-এর সময় করণীয়
- প্রতিটি রাইডের পরে বাইক ধুয়ে ফেলা
কুয়াশার মধ্যে রাইডিং বাইকের বিভিন্ন অংশে শিশির, নোংরা পানি লেগে যায় যা সময়ের সাথে সাথে সেই অংশগুলোর ক্ষয়-ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই প্রতিটি রাইড শেষ করার সাথে সাথে বাইক ধুয়ে ফেলা বাঞ্ছনীয়। অন্ততপক্ষে মুছে ফেলা শ্রেয়।
- অতিরিক্ত গিয়ার প্যাক করা
সবসময় এক জোড়া ভারী ও এক জোড়া হাল্কা- এই দুই জোড়া গ্লাভস বহন করা উচিত। এটি তাপমাত্রার পরিবর্তন সামাল দিতে পারে। একজোড়া হালকা গ্লাভস আঙুলগুলোকে সক্রিয় রাখে। এতে চট করে ফ্ল্যাট টায়ার দ্রুত এবং সহজে পরিবর্তন করে ফেলা যায়।
- ঘেমে যাবার প্রতি খেয়াল রাখা
শীতকালীন যাত্রায় উষ্ণতা বোধ নেই, তবুও ঘর্মাক্ত অবস্থা। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় পানি বেরিয়ে যায়। তাই সাথে তাপ নিরোধক ফ্লাস্কে গরম পানি অথবা কফি নিয়ে নেয়া যেতে পারে। পানির বোতল পিছনের জার্সির পকেটে রাখা উচিত যাতে এটি জমে না যায়।
- কুয়াশার অন্ধকারে সাবধানতা
শীত মানেই কুয়াশায় রাস্তাঘাট এমনকি একটু দূরের মানুষটাকেও দেখা যাবে না। বাইকের সামনের হ্যান্ডেলবারে সর্বদা অন্তত একটি ছোট, রিচার্জেবল লাইট লাগানো যেতে পারে। পাশাপাশি টেললাইটের কথাও ভুলে গেলে চলবে না।
বাংলাদেশে যেখানে বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় গরম থাকে সেখানে ভ্রমণের ঋতু শীতকাল বাইক রাইডিং-এর জন্য সবচেয়ে সেরা সময়। তাই শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে শীতে বাইক রাইড করার সময় শীতের পোশাক ও ক্রিমের মাধ্যমে শরীরের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি উপরোক্ত নিরাপত্তাগুলো অবলম্বন করা উচিত। তবে আগে অবশ্যই ত্বকের বৈশিষ্ট্যের বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। কারো অল্প ঠান্ডাতেই জমে যাওয়ার অবস্থা হয় আবার কারো অল্প পোষাকেই উষ্ণতা চলে আসে।