সাধারণ সর্দি-কাশি : কারণ ও করণীয়
সাধারণ সর্দি-কাশি একটি প্রচলিত সমস্যা। ছোট থেকে বড়, সবাই এই সমস্যায় ভোগে। সাধারণ সর্দি কাশির কারণ ও করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪১৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. কমল কলি হোসেন।
বর্তমানে ডা. কমল কলি হোসেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনল্যান্ড এমপায়ারে প্রাথমিক চিকিৎসা বিভাগে প্রাকটিস করেন।
প্রশ্ন : আপার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন কী?
উত্তর : একে আমরা ছোটভাবে ইউআরআই বলি। এটা আসলে সবারই হয়। এমন একটি রোগ, যাকে আমরা কমন কোল্ড হিসেবে জানি। আপার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট বলতে আমরা বুঝি, সেই রোগটি যেটি আমাদের নাক থেকে শুরু হয়। এরপর এটি আমাদের মুখেও হতে পারে। এটা হলো আমাদের আপার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট অংশ। ছোট একটি অংশ। কিছুটা উপরের অংশ ল্যারিংস। এতেও আমাদের আপার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হতে পারে। এরপর আমরা যাচ্ছি লোয়ার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে।
প্রশ্ন : কমন কোল্ডের লক্ষণ কী?
উত্তর : এটা সবার হয়, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় মানুষ পর্যন্ত। সব দেশেই এটি হয়। সম্প্রতি আমি একটি ক্লিনিকে কাজ করছিলাম, সেটা বস্তি এলাকার ক্লিনিক। আমাদের এখানে হচ্ছে, অনেকেই এটি বুঝতে পারছে না। বড়-ছোট সবারই হচ্ছে। তাই, আমি ভাবলাম এটি নিয়ে কথা বলি।
অনেকে চিন্তিত হয়ে চিকিৎসকের কাছে আসছে। এটিতে আসলে চিকিৎসকের কাছে আসার দরকার নেই। ঠান্ডা লাগে, তখন নাক দিয়ে সাদা পানির মতো পড়ে। বাচ্চা একটু কাশছে, বাচ্চার গায়ে জ্বর। খাবার খেতে তার ভালো লাগছে না। অনেক সময় একটু হালকা ধরনের জ্বর থাকে। তবে বাচ্চার অন্য কিছু থাকে না। যেমন: গলা ব্যথা, কানে ব্যথা থাকে না। তখন মায়েরা একটু ধীর স্থির হয়ে ভাবতে পারে বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগেছে, খেলাধুলা করতে দিচ্ছি না, পানি খাওয়াচ্ছি একটু বেশি করে, দরকার হলে একটু প্যারাসিটামল দিচ্ছি। আর যদি জ্বর হয়, তাহলে একটু জ্বরের ওষুধ দিচ্ছি। এভাবে করে আমরা রাখতে পারি কয়েকদিন। এক থেকে তিনদিন। এরপরও যদি জ্বর অনেক বেড়ে যায়, বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হয়, দেখা যাচ্ছে বুকের ভেতর ঘর ঘর শব্দ হচ্ছে, বাচ্চা সু্স্থ হচ্ছে না, এ রকম অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : বড়দের ক্ষেত্রেও কি একই পরামর্শ?
উত্তর : বড়দের ক্ষেত্রেও একই পরামর্শ। এই সময় তাদের একটু ভিটামিন খাওয়াতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হলো ভাইরাল রোগ। কিন্তু কখনো কখনো এটি ব্যাক্টেরিয়ালও হতে পারে। ব্যাক্টেরিয়াল হলে জটিল হয়, তখন অ্যান্টিবায়োটিক লাগে। তবে বেশিরভাগ সময়, এটি ভাইরাস। ভাইরাস হলে এমনি এমনি সেরে যায়। বেশি করে বিশ্রাম নিতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা কমে যায়। হয়তো ঘুম হয়নি বা খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয়নি, তখন এটি হয়। এই সময় যদি ঠিকমতো বিশ্রাম নেয়, পানি পান করে, হাঁচি-কাশি এগুলো থাকলে সেরে যায়।
প্রশ্ন : কমন কোল্ডের চিকিৎসা কী?
উত্তর : ঘরের তাপমাত্রাকে ঠিক করতে হবে। ওখানে যদি একটু হিমিউডিফায়ার দেওয়া হয়, সেটা থেকে যদি একটি ঠাণ্ডা বাষ্পের মতো আসে, তাহলে শ্বাস নিতে বাচ্চাদের একটু সুবিধা হয়। আরেকটি জিনিস রয়েছে। সেটি হলো, নোস ড্রপ দিতে বলা হয়। নাকের পথটা পরিষ্কার করে দিতে পারে। সাধারণ পানি দিয়ে একে চুষে নিয়ে এলে, এটা পরিষ্কার হয়ে গেল। আরেকটি জিনিস হলো, এতে বাচ্চারা খুব অস্বস্তিবোধ করে। আপার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন থেকে কিন্তু কানের সংক্রমণ হতে পারে। এটি হলে বাচ্চারা কাঁদবে। তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের কাছে এলে আমরা দেখি, এক কানে বা দুই কানে সমস্যা হচ্ছে। পরীক্ষা করার পর হয়তো দেখা যায়, সেটি লাল হয়েছে, ফুলেছে, তখন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সে ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : অ্যান্টিবায়োটিক কতদিন ধরে চলতে থাকে? ভালো হতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর : বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, শিশুর যদি অ্যালার্জি না থাকে। অ্যালার্জি থাকলে অন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক দেব।
প্রশ্ন : আমরা কিন্তু দেখি বাচ্চাকে অতি সচেতনতার কারণে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিতে বলেন। চিকিৎসককে বলেন এটি এখন কেন দেওয়া হচ্ছে না?
উত্তর : আমরা তখন মা-বাবাকে বুঝাই এখন যদি তোমার বাচ্চাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেই, বাচ্চার জন্য খারাপই হবে। এভাবে করে রাখো, ভালো হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : কমন কোল্ড প্রতিরোধে করণীয় কী?
উত্তর : আসলে প্রতিরোধ করাটাই আমাদের দরকার। কেউ সামনে হাঁচি দিল, কারো হাতে হয়তো জীবাণু রয়েছে সে হয়তো সেই হাত দিয়ে মুখ ধরল, তখন হবে। এই জন্য হ্যান্ড ওয়াশ হলো এক নম্বর। বাইরে থেকে এসে হাত ধুতে হবে। যখনই আমরা আসি বাইরে থেকে, এসে হাতটা ধোয়া খুবই দরকার।
আরেকটি হলো যখন আমরা বড় জায়গায় যাচ্ছি, ক্লাসে, বাসে, সে যদি একটু ঢেকে কাশে, সেই সর্দি বা শ্বাসের ছিটা যেন বাইরে না যায়, রুমাল দিয়ে বা টিস্যু দিয়ে মুখ-নাক ঢেকে রাখে তাহলে জীবাণুটা ছড়ায় না। আর একটি হলো, বড়দের খুব সাবধান থাকতে হবে। কারণ, তারা খুব সহজে আক্রান্ত হতে পারে। এটি থেকে তারা জটিলতায়ও যেতে পারে।
আরেকটি বিষয় রয়েছে ভ্যাকসিন দেওয়া। এটি দিয়েও আমরা রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। ফ্লু ভ্যাকসিনও রয়েছে। আমাদের দেশে ফ্লু এর আবহাওয়া তৈরি হয়। ফ্লুটা অবশ্য সারা বছর ধরে হতে পারে। কিন্তু এটার বেশি সময় ধরে প্রবলতা দেখা যায়।
ভ্যাক্সিনটা আমরা বড় রোগীদেরও দেই। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের দিতেই হবে।
প্রশ্ন : আপার রেসপেরেটরি ট্র্যাক্ট থেকে কি শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
উত্তর : হ্যাঁ, অ্যাজমা হয়ে যেতে পারে। এটি পরে আসছে। কমন কোল্ড খুব জটিল হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যেতে পারে, ফুসফুস ফেইলিউর হয়, ফুসফুস আর কাজ করছে না সেই সময়, সেটিও হতে পারে।