তাসকিনের রাজসিক প্রত্যাবর্তন

অনেকেই বলছিলেন, ফুরিয়ে গেছেন তাসকিন আহমেদ। বল হাতে বাজে ফর্ম আর ইনজুরি প্রবণতার কারণে জাতীয় দলে তাঁর শেষের ছবিটা আঁকছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ খ্যাত এই বোলার যে অন্য ধাতুতে গড়া! বিপিএলের মঞ্চ দিয়ে প্রথম সবার নজর কেড়েছিলেন, সেই বিপিএলেই এবার অনন্য উজ্জ্বল পারফর্ম করে আবার লাইমলাইটে এসেছেন। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী সিলেট সিক্সার্সের ডানহাতি ফাস্ট বোলার১২ ম্যাচে নিয়েছেন ২২ উইকেট। অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্সের কারণে নিউজিল্যান্ড সফরের বাংলাদেশ দলে প্রত্যাশিত ডাকও পেয়েছেন এই গতিতারকা।
দারুণ সম্ভাবনার বার্তা দিয়ে জাতীয় দলে আগমন ঘটেছিল তাসকিনের। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকেই ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, দুর্দান্ত পেস আর বাউন্সে সত্যিকারের এক ফাস্ট বোলারের আগমনী বার্তা শুনিয়েছিলেন।অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ বিশ্বকাপে দলের হয়ে বেশ ভালো পারফর্ম করে দেশবাসীর প্রত্যাশাও মেটান। এরপর চার পেসার নিয়ে সাজানো বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যান তিনি। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় হয়ে যায় টেস্ট অভিষেকটাও।
কিন্তু ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন বড় ধাক্কা খান তাসকিন আহমেদ। অ্যাকশনে ত্রুটি থাকার অভিযোগে তাঁর বোলিং নিষিদ্ধ করে আইসিসি। অ্যাকশন শুধরে আবার জাতীয় দলে ফিরলেও সেই চেনা তাসকিনের দেখা আর মেলেনি। মাঝেমধ্যে কিছু ঝলক দেখালেও, ম্যাচ জেতানো ফাস্ট বোলারটিকে আর সেভাবে খুঁজে পাও্য়া যায়নি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে খেলার পর জাতীয় দলের টেস্ট আর ওয়ানডে স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়েন তিনি।
কিন্তু সব সমালোচনার জবাব মাঠেই বল হাতে দিয়েছেন তাসকিন। সিলেট সিক্সার্সে কোচ হিসেবে কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনুসকে পেয়ে আত্মবিশ্বাস ও হারানো ফর্ম খুজে পান তিনি। মাঝখানে নিজের বোলিংয়ের মূল অস্ত্র গতি কিছুটা কমে গেলেও ফিটনেসের উন্নতির সাথে সাথে অনেকটাই ফিরে পেয়েছেন সেই পুরোন গতি। পাশাপাশি নিয়ে এসেছেন কিছু নতুন বৈচিত্র্য। ফলে আগের চেয়ে আরো ক্ষুরধার হয়েছে আক্রমণ। প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে উইকেট নিয়ে বিপিএলের এক আসরে সবচেয়ে বেশি ২২ উইকেট নেওয়ার সাকিব আল হাসান ও কেভন কুপারের রেকর্ডটাও স্পর্শ করেছেন।
তাসকিনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা হয়েছে আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলিং করা ও কিছুতেই হতোদ্যম না হয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টাই সাফল্য এনে দিচ্ছে তাঁকে। নতুন-পুরাতন, দুই বলেই দলকে নিজের সেরাটা দিচ্ছেন এই ফাস্ট বোলার। ইতিমধ্যে পেয়েছেন কোচ ওয়াকার ইউনুসের অকুন্ঠ প্রশংসা। লাল-সবুজের জার্সি গায়েও এমন তাসকিনকে দেখার অপেক্ষাতেই আছেন সমর্থকরা।