হৃদয়ের দুর্দান্ত শতকে বাংলাদেশের লড়াকু পুঁজি

শঙ্কার কালো মেঘ জমেছিল দুবাইয়ের আকাশে। রোদ ঝলমলে দুপুরে শুরুতেই বাংলাদেশের পুরোনো অভ্যাসের প্রতিচ্ছবি। প্রথম ২ ওভারে নেই ২ উইকেট। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দলীয় সংগ্রহ ৩৫ হতে হতে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটার সাজঘরে। যখন শেষ দেখে ফেলেছিল অনেকেই, খাদের কিনারা থেকে তখনই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভারতকে ২২৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরুর ভরাডুবি সামলে ৪৯.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান তোলে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শান্তর সেই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত করেন ভারতের বোলাররা। মোহাম্মদ শামির করা প্রথম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে সৌম্য সরকারকে স্ট্রাইকে দেন তানজিদ তামিম। শামির করা পরের ৪ বলে বেঁচে গেলেও ওভারের শেষ ডেলিভারিতে নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না সৌম্য। উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৫ বলে ০ রানে ফেরেন সাজঘরে।
ওয়ানডাউনে এসে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টিকতে পারেন মোটে ২ বল। হারশিত রানার বলে শর্ট কাভারে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন তিনি। দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশকে খানিকটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল তানজিদ তামিমের ব্যাটিং। ভারতের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে তিনটি বাউন্ডারি মেরে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন তামিম। তবে, অন্যপ্রান্তে ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ বলে ৫ রানের বেশি করতে পারেননি মিরাজ। মোহাম্মদ শামির বলের স্লিপে শুভমান গিলের তালুবন্দি হন মিরাজ।২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের।
মিরাজের বিদায়ের পর তামিমও আর থাকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ভালো শুরুর পরও ২৫ বলে ২৫ রান করে অক্ষর প্যাটেলের স্পিনে কুপোকাত হন তামিম। তার ক্যাচ লুফে নেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। নবম ওভারের তৃতীয় বলে গোল্ডেন ডাকে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিমও। কোনঠাসা বাংলাদেশ পড়তে পারত আরও বিপদে। অক্ষরের করা নবম ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন জাকের আলী অনিক। তবে, ক্যাচ মিস করেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তাতে, মিস অক্ষরের হ্যাটট্রিক করার সম্ভাবনা।
এরপরই নিজেদের মেলে ধরেন বাংলাদেশের দুই তরুণ তুর্কি জাকের আলী ও তাওহিদ হৃদয়। ভারতীয় বোলারদের দেখেশুনে একটু একটু করে চালিয়ে যান ইনিংস মেরামতের কাজ। দুজন মিলে হতাশায় ফেলেন ভারতের বোলারদের। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেট ভারত ফেলে ১৮৯ রানে। জাকের-হৃদয় জুটিতে আসে ১৫৪ রান। ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। আর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতেই সর্বোচ্চ। রেকর্ড গড়ে জাকের ফেরেন ৬৮ রানে। সময়ের চাহিদা মিটিয়ে ১১৪ বলে ৪টি বাউন্ডারিতে ৬৮ রান করা জাকেরকে ফেরান শামি। অফ স্টাম্পের বাইরে করা বলে লং-অনে বিরাট কোহলির হাতে বন্দি হন জাকের। ওয়ানডেতে শামি তুলে নেন নিজের ২০০তম উইকেট।

জাকেরের বিদায়ে ক্রিজে আসা রিশাদ হোসেন খেলেছেন ক্যামিও। ১২ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮ রান করে রানার বলে হার্দিক পান্ডিয়ার ক্যাচ হয়ে বিদায় নেন রিশাদ। তবে, ৮৫ বলে অর্ধশতক তুলে নেওয়া তাওহিদ হৃদয় খেলেছেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পান হৃদয়। রান আউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দিয়ে পায়ে টান পাওয়ার পরও হাল ছাড়েননি তিনি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে টেনে নিয়েছেন দলকে। শামির বলে সিঙ্গেল নিয়ে শতক পূর্ণ করেন। ৮৫ বলে ফিফটির ঘরে পৌঁছানো হৃদয় ১০০ করতে খেলেন ১১৪ বল। শেষ ব্যাটার হিসেবে হৃদয় আউট হন ১১৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০০ রানেই।
ভারতের পক্ষে ফাইফার পান শামি। ১০ ওভারে ৫৩ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন শামি। ৩টি করে উইকেট পান রানা এবং অক্ষর নেন ২টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৯.৪ ওভারে ২২৮/১০ (তামিম ২৫, সৌম্য ০, শান্ত ০, মিরাজ ৫, হৃদয় ১০০, মুশফিক ০, জাকের ৬৮, রিশাদ ১৮, সাকিব ০, তাসকিন ৩, মুস্তাফিজ ০* ; শামি ১০-০-৫৩-৫ ,রানা ৭.৪-০-৩১-৩, অক্ষর ৯-১-৪৩-২, পান্ডিয়া ৪-০-২০-০, জাদেজা ৯-০-৩৭-০, কুলদীপ ১০-০-৪৩-০)