পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞায় বড় ক্ষতির মুখে ভারতীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো

পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় ভারতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো তাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। এতে উচ্চ জ্বালানি খরচ এবং দীর্ঘ যাত্রাপথ নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে সংস্থাগুলো। কাশ্মীরের পেহেলগেমে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নতুন করে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
ভারত অভিযোগ করেছে, গত মঙ্গলবার তাদের অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত থাকার উপাদান রয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। একইসঙ্গে দেশটি ভারতের কাছে কোনো প্রাথমিক তথ্য থাকলে সেটি প্রমাণের দাবি করেছে।
পরমাণু অস্ত্রধারী চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ভারত গুরুত্বপূর্ণ নদী সিন্ধুর পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত রেখেছে। এরপর পাকিস্তানও ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করাসহ বেশকিছু পাল্টা পদক্ষেপ নেয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) গভীর রাতে এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো নিউইয়র্ক, আজারবাইজান ও দুবাইয়ের ফ্লাইটগুলোর রুট পরিবর্তন করতে শুরু করে। ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ এর তথ্য অনুসারে, এই ফ্লাইটগুলো এতদিন পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে আসছিল। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নয়াদিল্লি বিমানবন্দর, যা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর, যেখান থেকে পশ্চিম ও মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ফ্লাইটগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম করতে হতো।

সিরিয়াম অ্যাসেন্ডের তথ্য অনুসারে, ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া ও এর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এপ্রিল মাসে নয়াদিল্লি থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকায় প্রায় ১ হাজার ২০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভারতীয় উড়োজাহাজ পরিবহণ কর্মকর্তা জানান, নয়াদিল্লি থেকে মধ্যপ্রাচ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে প্রায় এক ঘণ্টা বেশি সময় লাগবে, যার অর্থ জ্বালানি খরচ বেশি হবে।
ফ্লাইট বাতিল বা সমন্বয়, পাইলটদের তালিকায় পরিবর্তন
ইন্ডিগো জানিয়েছে, প্রায় ৫০টি আন্তর্জাতিক রুটে সামান্য পরিবর্তন আনা হতে পারে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, তারা ২৭ এপ্রিল থেকে অন্তত ৭ মে পর্যন্ত আলমাতির এবং ২৮ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত তাসখন্দের ফ্লাইট বাতিল করছে।
বোয়িং ও এয়ারবাসের সরবরাহ বিলম্ব হওয়ার কারণে ভারতীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ইতিমধ্যে জটিল হয়ে উঠেছে।
একজন ভারতীয় উড়োজাহাজ সংস্থার পাইলট রয়টার্সকে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে তাদের অনুমোদিত উড্ডয়নের সময়কাল পুনরায় হিসাব করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ক্রু ও পাইলটদের তালিকা সমন্বয় করতে হবে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, তার উড়োজাহাজ সংস্থার কর্মীরা বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে কাজ করেছেন। দুজনই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।
গত বৃহস্পতিবার ইন্ডিগোর ৬ই১৮০৩ ফ্লাইটের নয়াদিল্লি থেকে বাকু যেতে পাঁচ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় লেগেছে। ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের তথ্যে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের গুজরাট রাজ্য হয়ে আরব সাগর এবং ইরানের উত্তরাঞ্চল পাশ কেটে উড়ে আজারবাইজানে পর্যন্ত যেতে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে ফ্লাইটটিকে। বুধবার পাকিস্তানের আকাশসীমা দিয়ে একই ফ্লাইটের সময় লেগেছে ৫ ঘণ্টা ৫ মিনিট।
২০১৯ সালে ভারত সরকার বলেছিল, প্রায় পাঁচ মাস পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো এবং অন্যান্য উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর কমপক্ষে ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে।