ভৈরবে কয়লা ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় তিন মন্ত্রণালয়ের চার দপ্তরের ইজারা নিয়ে রশি টানাটানিতে বিপাড়ে পড়েছেন এখানকার কয়লা ব্যবসায়ীরা।
এর প্রতিকার চেয়ে আজ মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে শহরের চণ্ডীবের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় কয়লা ব্যবসায়ীরা।
ভৈরব মেঘনা ফেরিঘাট কয়লা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, ফেরিঘাট এলাকায় তিন মন্ত্রণালয়ের জান দপ্তরের ইজারা নিয়ে রশি টানাটানিতে ধ্বংসের মুখে পড়েছে এখানকার বৃহৎ কয়লার বাজার। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মুড়িংঘাট, বাংলাদেশ নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের (বিআইডাব্লিউটিএ) এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের একই এলাকায় একই স্থানে চারটি ইজারা হয়। ফলে তাঁরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ইজারা নেওয়া জায়গা হওয়া সত্ত্বেও বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তারা তাঁদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধার লোভে কয়লা ডাম্পিং করতে বাধা দিচ্ছেন। ফলে তাঁরা পড়েছেন বিপাকে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এমনি করে দফায় দফায় ইজারার নামে টাকা আদায় এবং ইজারা নেওয়ার পরও বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের উৎকোচ আদায় তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে দেশের পূর্বাঞ্চলের এই বৃহৎ কয়লার বাজারটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ভৈরব মেঘনা ফেলিঘাট কয়লা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ ইবনে সোলায়মান।
মানব বক্তারা বলেন, কয়লা ক্রয়-বিক্রয়ে দেশের অন্যতম ও বৃহত্তর হাট হলো ভৈরবের এই কয়লার হাট। যা পুরাতন মেঘনা ফেরিঘাট এলাকার রেলওয়ে ভূমিতে গড়ে উঠেছে। এখানে ২০০ থেকে ২৫০টির বেশি কয়লা বেচা-কেনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ থেকে ছয় হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন দুই শতাধিক ট্রাক কয়লা সারা দেশের বিভিন্ন জায়গার ইটভাটা ও শিল্প কারখানায় যাচ্ছে। এই হাটে প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকার কয়লা বেচাকেনা হয়। আর এসব আমদানিকৃত কয়লা থেকে বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
বক্তারা আরও বলেন, ভৈরবের বিআইডাব্লিউটিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধভাবে ঘাট ইজারায় ৫০ গজ সীমানাকে ৫০০ গজে রূপান্তর করেছেন। কর্মকর্তাদের লাগামহীন চাঁদাবাজির কারণে দিন দিন কয়লা ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভৈরবের কয়লা ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধানে তিন মন্ত্রণালয়ের চার দপ্তরের সমন্বয়ে একটি ইজারার ডাক দেওয়ার দাবি করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ভৈরব বাজার-আশুগঞ্জ নদী বন্দরের উপপরিচালক রেজাউল করিম জানান, একই জায়গায় তিন মন্ত্রণালয়ের চার দপ্তরে ইজারা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কয়লা ব্যবসায়ীদের আনা চাঁদাবাজির অভিযোগকে অস্বীকার করে রেজাউল করিম বলেন, ৫০ গজ জায়গাটি ৫০০ গজে বর্ধিত করা সিদ্ধান্তটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ভৈরবে বিআইডাব্লিউটিএর একটি জেটি রয়েছে। কয়লা ব্যবসায়ীরা জেটিতে কয়লা ফেলে রেখে দখল করে রাখে। আমি বাধা দিলে তারা ভাবেন অতিরিক্ত টাকার জন্য বাধা দিয়েছি। তারা যদি জায়গা দখল করে না রাখে তাহলে আমার দপ্তরের কোনো সমস্যা নেই। চাঁদাবাজির অভিযোগটি ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা। তবে তিন মন্ত্রণালয়ের চার দপ্তরে সমন্বয়ে একটি ইজারার ডাক হলে ব্যবসায়ীরা সুফল ভোগ করবেন বলে তিনিও অভিমত ব্যক্ত করেন।