সংসদে স্বতন্ত্র মোর্চা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে : এ কে আজাদ
ফরিদপুর-৩ আসনের নবনির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেছেন, যদি আমাদের সুযোগ দেওয়া হয় তবে সংসদে স্বতন্ত্র মোর্চা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কে আজাদ সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ কে আজাদ বলেন, আমি মনে করি বিরোধী দলের যে ১১ জন আছেন, তাদের চেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারব আমরা। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করব। সরকারের উন্নয়নকে তুলে ধরব। সরকারের যেটা ঘাটতি আছে, সেগুলো তুলে ধরব।
এ কে আজাদ আরও বলেন, এই প্রথম ৬২ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। আর জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১ আসন। আমরা সবাই আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত আছি। পার্টির থেকে (আওয়ামী লীগ) যখন আহ্বান করা হয়েছে, যে আমরা তো সবাইকে নৌকা দিতে পারিনি। যদি কেউ আমাদের আওয়ামী লীগের লোক স্বতন্ত্রপ্রার্থী হতে চায়, তাহলে পার্টির কোনো আপত্তি থাকবে না। সেই আহ্বানে আমরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়েছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি বিভিন্ন মার্কায়। আমরা তো নৌকা মার্কায় হইনি। নৌকা মার্কায় বা যেকোনো পার্টির মার্কায় হলে, পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা উম্মুক্ত।
এ কে আজাদ বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ আগস্টে তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্য, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
এ কে আজাদ আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা। অর্থাৎ সোনারবাংলা তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে শেষ করছেন। দেশ আজ অগ্রগতির পথে। আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় তিন হাজার ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছে। সর্বোপরি বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র দেশ নেই। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
ফরিদপুর-৩ আসনের মানুষের কাছে আমার প্রতিশ্রুতি হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা উল্লেখ এ কে আজাদ বলেন, যেসব বেকার যুবক ছেলেমেয়ে আছে, তাদের কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে। পাশাপাশি যেসব চাঁদাবাজ, মাদক, সন্ত্রাস আছে, সেগুলো থেকে ফরিদপুরবাসীকে রেহাই দেওয়া হবে। পাশাপাশি আমি শিক্ষাঙ্গনে যাতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা যায়, সে ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালাব। তিনিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করেছি। পাশাশি ফরিপুরে আমার একটি শিল্পপার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের এ অঞ্চলে জননেত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টায় পদ্মা সেতু হয়েছে। এই সেতু হওয়ার আগে আমাদের ফরিদপুর থেকে ঢাকা যেতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগত। এখন আমরা দুই ঘণ্টায় চলে যাই। এরমধ্যে রেল লাইন চালু হয়েছে। এই ২১টি জেলায় ৬০-এর দশেকে কিছু ভারি শিল্প কল-কারখানা বিশেষ করে পাটশিল্প গড়ে উঠেছিল। সেগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের পদ্মার এপাড়ে বিনিয়োগ করার জন্য। আমি ফরিদপুরের কোনো একটা অঞ্চলে একটা শিল্পপার্ক গড়ে তুলব। ভোলা থেকে আমাদের যে গ্যাস আসবে, সেটা পাইপ লাইনের মাধ্যমে ঢাকায় সরবরাহ করা সম্ভব নয়। সে কারণে এলপিজির মাধ্যমে ফরিদপুরে আমরা গ্যাস নিয়ে আসব। তাতে এখানে শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। এই ২১টি জেলার মানুষের চাকরির জন্য আর ঢাকা যেতে হবে না। ছেলেমেয়রা পাস করার পর ফরিদপুরেই চাকরি পাবে। এটাই ফরিদপুরবাসীর প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি।
এর আগে এ কে আজাদ বিকাল সাড়ে ৩টায় টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি বেদীর পাশে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি বিনম্র সম্মান প্রদর্শন করেন। পরে তিনি সমাধি সৌধের প্রশাসনিক ভবনে যান। সেখানে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শন করেন।
এ সময় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জাহিদ, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন, হা-মীম গ্রুপের পরিচালক বেলাল হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল নেতাকর্মী এবং নির্বাচনি এলাকার সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।