অক্সিজেন না দেওয়ায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ
ব্যথার ইনজেকশন পুশ করার পর ছটফট করতে থাকে রোগী। এরপর দেড়ঘণ্টা অক্সিজেনের জন্য স্বজনদের আহাজারি। দায়িত্বরত নার্স অক্সিজেন সরবরাহ না করায় অবশেষে মারা যান মেরুদণ্ডে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া পান দোকানি শ্যামল দাস। গতকাল রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালে এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা। অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছেন তাঁরা।
স্বজনদের অভিযোগ, মেরুদণ্ডের ব্যথা নিয়ে গতকাল বিকেলে ৫টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শহরের পুরানবাজারের পান বিক্রেতা ও পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকার রামজীবন দাসের ছেলে শ্যামল দাসকে (৫৫)।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিয়াদ মাহমুদ চিকিৎসাপত্র দিয়ে ভবনের ছয়তলায় ভর্তি দেন রোগীকে। ভর্তি হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখে রোগীকে ব্যথার ইনজেকশন পুশ করেন কর্তব্যরত নার্স সুজাতা। পরে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট ও দাপাদাপি। ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন শ্যামল। এ সময় নার্সকে অক্সিজেনের কথা বললে, ব্যস্ততা দেখিয়ে অন্য কাজে মনোযোগ দেন তিনি। এরপর রাত ৮টার দিকে মারা যান ওই পান বিক্রেতা। নার্সের দায়িত্বে অবহেলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা।
নিহত শ্যামল দাসের ফুফাতো ভাই গজেন দাস বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ১১ বছরের এক ছেলে ও ১৪ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। এই সংসারটা এখন কীভাবে চলবে? এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নার্সের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
শ্যামল দাসের ছোটভাই শংকর দাস অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমার ভাইকে ঠিকঠাক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তাই অল্পসময়ের মধ্যে আমার ভাই মারা গেছেন। এই ঘটনার বিচার চাই।’
মাদারীপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিব মাহমুদ কাওসার বলেন, ‘শুধু অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যে নার্স দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, তাঁর বিচার ও হাসপাতাল থেকে অপসারণ দাবি করছি।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহম্মেদ খান বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে জানিয়েছেন। ঘটনা কী ঘটেছে, সবকিছুই পর্যালোচনা করে নার্সের দোষ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হচ্ছে—এমন খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহত পান দোকানির পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’