রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩০
রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষই ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি ধারাল অস্ত্র, ককটেল ও দেশি অস্ত্র ব্যবহার করেছে। পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদুনেগ্যাস নিক্ষেপ করে আধাঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থায় বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগকারীদের দাবি, বাঘা সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখকদের অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদ ও সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের মনোনিত দলিল লেখক সমিতির কমিটি বিলুপ্তের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। এই পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু ও পৌর মেয়র আক্কাস আলী। আজ শনিবার (২২ জুন) সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদের সামনে একই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় তারা।
এদিকে সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের সমর্থকরা বাঘা পৌর মেয়রের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একই সময়ে একই স্থানে মানববন্ধনের ডাক দেয়। এ নিয়ে রাত থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল।
আজ শনিবার (২২ জুন) বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও রোকনুজ্জামান রিন্টুর নেতৃত্বে সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের সমর্থকরা বাঘা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আক্কাস আলীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন শুরু করে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
একই সময়ে সচেতন নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে পৌরভবনের সামনে থেকে অপরপক্ষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের সামনে যাওয়ার সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এসময় উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ এসে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে কাঁদুনেগ্যাস এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাঘা পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন—বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবলু, বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী, আড়ানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শফিউর রহমান শফি। এদের মধ্যে আশরাফুল ইসলাম বাবলুসহ দুজনকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ সংঘর্ষ নিয়ে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করেছেন উভয়পক্ষ। উপজেলা চেয়ারম্যান লাভলু গ্রুপের সমর্থকদের দাবি, মানববন্ধন থেকে তাদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করা হয়েছে। আর সংসদ সদস্য শাহরিয়ার গ্রুপের সমর্থকরা দাবি করেছেন মিছিল নিয়ে এসে তাদের মানববন্ধনে হামলা করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম সমর্থিত গ্রুপের রোকনুজ্জামান রিন্টু বলেন, পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে তাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে হামলা চালানো হয়েছে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবলুসহ তাদের পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে পৌর মেয়র আক্কাছ আলী বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে মানববন্ধন থেকে হামলা করা হয়েছে। এতে তিনিসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, দুটি কর্মসূচিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও শ্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনেগ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসির দাবি, পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি শান্ত। এরপরও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।