নাশকতায় ডিএনসিসির ২০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে : মেয়র আতিক
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীরা ডিএনসিসির মোট ৬৭টি গাড়ির ক্ষতি সাধন করেছে। এর মধ্যে বর্জ্যবাহী ২৯টি গাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত করে দিয়েছে, কর্মকর্তাদের ব্যবহারের ২১টি পাজেরো জিপ পুড়ে দিয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৭টি গাড়ি ভেঙে দিয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ডিএনসিসিতে অন্তত ২০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে সন্ত্রাসীদের এই নাশকতায়।’
গতকাল বুধবার (২৪ জুলাই) মিরপুর-১০ এ সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনসিসির আঞ্চলিক অফিস পরিদর্শনকালে মেয়র এসব কথা বলেন। এ সময় ডিএনসিসির আঞ্চলিক অফিসের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকায় কেনা। নগরবাসীকে সেবা যেন দেওয়া না যায় সেই ষড়যন্ত্র করেই এই নাশকতা চালায় সন্ত্রাসীরা।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িত সবার বিচারের দাবি জানান তিনি।
আগুনে পুড়ে যাওয়া বর্জ্যবাহী গাড়ি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে। নৃশংস হামলা চালিয়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে।’
মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ উন্নত দেশের পথে, ঠিক তখনই দেশবিরোধী অপশক্তি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এই অপশক্তি ১৯৭১ সালেও দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোটার গণতান্ত্রিক দাবির আন্দোলনকে পুঁজি করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। সন্ত্রাসীরা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য পরিবহণের গাড়িগুলোতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা মেট্রোরেলে অগ্নিসংযোগ করেছে। মেট্রোরেলে অগ্নিসংযোগ করায় আজ ঢাকায় অলরেডি তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যারা এই নাশকতা চালিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে ৩২টি ডাম্প ট্রাক ও আটটি আধুনিক কম্প্যাক্টর ট্রাক জাপান থেকে গাড়ি বহরে যুক্ত করা হয়েছিল। একটি কম্প্যাক্টর ১০টি ট্রাকের সমান কাজ করে। আমাদের বর্জ্য পরিবহণের মোট যানবাহনের চার ভাগের একভাগ তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বর ফুটওভার ব্রিজে অগ্নিসংযোগ করে এটি পুড়িয়ে দিয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করেছিলাম। উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার ও মোহাম্মদপুর সূচনা কমিউনিটি সেন্টার সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা রামপুরায় পাম্প হাউজে হামলা চালিয়ে সেটি ধ্বংস করেছে, এমনকি পাম্প হাউজ মেরামতের উদ্দেশ্যে আমাদের কর্মীরা গেলে তাদের ওপরেও আক্রমণ করেছে সন্ত্রাসীরা। আমরা স্ট্রিট লাইট মেরামতের জন্য অত্যাধুনিক ল্যাডার এনেছিলাম। সেই ল্যাডারগুলোও তারা ধ্বংস করেছে। আমরা অনেক বৃক্ষরোপণ করেছিলাম। তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে যে গাছ লাগিয়েছিলাম, সেই গাছগুলোও তারা ধ্বংস করেছে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘সহিংসতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোট ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য কমিটি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য কাজ করছে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা যে হিসাব করেছি, ডিএনসিসিতে অন্তত ২০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে সন্ত্রাসীদের এই নাশকতায়।’
মেয়র আতিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন জনগণের সেবা যেন ব্যাহত না হয়। আমরা কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে, গাড়ির ট্রিপ বাড়িয়ে বর্জ্য অপসারণ করেছি। ইতোমধ্যে প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, উত্তরা, মিরপুরসহ সব সড়কের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। জনগণের সহযোগিতা চাই। আমরা দ্রুত সময়ে সব সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ডিএনসিসির কাউন্সিলর ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।