সাভারে ১৯ মামলায় গ্রেপ্তার ১৭৪, এলাকাছাড়া বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সরকারি অফিসে আগুন, যানবাহনে ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেওয়াসহ সহিংসতার ঘটনায় সাভারেই মামলা হয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে সাভার মডেল থানায় ১৩টি এবং আশুলিয়া থানায় রুজু করা হয়েছে ছয়টি মামলা।
এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১৭৪ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে সাভার মডেল থানায় ১২৯ জন এবং আশুলিয়া থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৪৫ জনকে।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে আদালতে আইনজীবী সূত্র মামলাগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে।
এর যুক্তি হিসেবে পুলিশ বলছে, আগেভাগে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে সন্দেহভাজনরা নিরাপদে সটকে পড়তে পারে। তাই মামলা নিয়ে এত রাখঢাক।
এদিকে আসামিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্নস্থানে শুরু হয়েছে পুলিশের ব্লক রেইড। কে আসামি আর কে নয় আর কাকেই বা সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হবে- এমন আশঙ্কায় গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকাছাড়া বিএনপি, জামায়াত ও শিবির সংশ্লিষ্টরা। আবার ব্যক্তিগত বিরোধকে পুঁজি করেও ভয়ভীতি ছড়ানো হচ্ছে অনেকের মাঝে। পুলিশকে তথ্য দিয়ে হয়রানি করা হবে- এমন ভয়ভীতির মধ্যেও রয়েছেন অনেকেই।
ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদন্নোতিপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহিল কাফী বলেছেন, প্রতিটি ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। কেউ কাউকে ভয়ভীতি দেখালেও সে যদি জড়িত না থাকে, তাহলে তার চিন্তার কোন কারণ নেই।
সূত্র মতে, সাভার মডেল থানায় দায়ের করা ১৩টি মামলার মধ্যে পাঁচটিরই বাদী পুলিশ। একটি করে মামলা করেছে সাভার উপজেলা প্রশাসন, সরকারি পশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও এনটিভির ক্যামেরা পারসন। অবশিষ্ট চারটি মামলা করেছে পুড়ে যাওয়া চারটি বাসের মালিক। এসব মামলায় ৩৮৪ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশই বিএনপি, জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মী।
সাভার মডেল থানায় বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন ধারায় পুলিশের দায়ের করা পাঁচটি মামলা পর্যলোচনা করে দেখা গেছে, এসব মামলায় বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীর নাম ছাড়াও অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে সাভার উপজেলা প্রশাসনের দায়ের করা মামলায়। ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মামলায়। অন্যদিকে সরকারি পশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি ২০০ জন। চারটি বাস পোড়ানোর মামলায় বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের মোট ২৩০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির ক্যামেরাপারসন জায়েদ আনসারিকে মারধর ও সাথে থাকা মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫০ জনকে।
এদিকে আশুলিয়া থানা দায়ের করা ছয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটিরই বাদী পুলিশ। এসব মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীদের অনেকেই রয়েছেন আসামির তালিকায়। এদের মধ্যে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নবীন রহমান, ইতিহাস বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী, অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর ও ইতিহাস বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিরন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এমন আরও আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে এই মামলায়।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ জানান, মামলায় কে কে আসামি তা না দেখে সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।