জামালপুর কারাগারে অস্থিরতা, ৬ বন্দি নিহত, আহত ১৯
জামালপুরে ১০ ঘণ্টা পর জেলা কারাগারের বন্দিদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে এনেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ৬ বন্দি নিহত ও জেলার, কারারক্ষী ও বন্দিসহ আহত হয়েছে ১৯ জন।
আজ শুক্রবার দুপুরে কারাগারের জেলার আবু ফাত্তাহ জানান, গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সরকার মুক্তি দেয়। এতে অন্য বন্দিরা তাদের মুক্তি দাবি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বেশ কিছু কয়েদি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মারামারি করে। এর মধ্যে একটি পক্ষের কয়েদিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে এসে কারা ফটকের চাবি চায়। এ সময় তিনি কয়েদিদের চাবি দিতে না চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ওপর হামলা করে। এ সময় তাকে ও ১৩ কারারক্ষীকে জিম্মি করে মারধর করে কারাগারের ভেতরের ফটক ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা গোলাগুলি শুরু করে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে পাশের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা থেমে থেমে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। গোলাগুলির একপর্যায়ে কারাগারের অভ্যন্তরে অগ্নিসংযোগ করে কয়েদিরা। অগ্নিসংযোগের ফলে সব গুরুত্বপূর্ণ নথি, কাগজপত্র ও কয়েদিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র ভস্মীভূত হয়ে যায়। এ সময় কয়েদিরা বাকি কারারক্ষীদের ওপরও হামলা করে তাদের জিম্মি করে ফেলে। কারাগারে হট্টগোল এবং গুলির শব্দ পেয়ে কারাগারের ঠিক পাশেই অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এসে কারাগারের চারপাশ ঘিরে ফেলে। এ সময় কারাগারের ভেতর থেকে কয়েদিরা ‘আমাদের বাঁচান বাঁচান’ বলে তাদের আর্তনাদের শব্দ পাওয়া যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে কারাগারের দেয়ালের উপর দিয়ে পানি ছিটিয়ে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ সময় মাইকিং করে কয়েদিদের শান্ত থাকার এবং পালিয়ে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। এদিকে বিক্ষুব্ধ কয়েদিদের হাতে দুই ঘণ্টা বন্দি থাকার পর অন্যান্য কয়েদির সহযোগিতায় জেলার আবু ফাত্তাহ বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। পরে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কারাগারের অভ্যন্তরে কয়েদিদের কাছে জিম্মি থাকা তিন নারী কারারক্ষীসহ ১৩ জন কারারক্ষীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ কারারক্ষী রুকনুজ্জামানকে (৫০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সাদেক আলী (৪৫) ও জাহিদুল ইসলাম (৪১) জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে বেশিরভাগ কয়েদি নিজেরাই সেলে চলে গেলেও বিদ্রোহী কয়েদিরা পালানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থেমে থেমে গুলি চলায় কারারক্ষীরা, সেই সঙ্গে কারাগারের ভেরত থেকে কয়েদিদের আর্তচিৎকার ভেসে আসে। এদিকে বন্দি সব কারারক্ষীদের কারাগারের অভ্যন্তর থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ১০ ঘণ্টা পর মধ্য রাতে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জেলার আবু ফাত্তাহ বিদ্রোহের ঘটনায় ছয়জন বন্দি নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আসার পর ৪০ থেকে ৫০ জন কারারক্ষীদের নিয়ে মধ্য রাতে কারাগারে প্রবেশ করে সব বন্দির সেলে অবস্থান করা নিশ্চিত করা হয়। কারা বন্দিদের মধ্যে যারা বিদ্রোহে অংশ নেয়নি তাদের জিম্মি করে ও নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত পাঁচ বন্দির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় গুরুতর আহত ছয় বন্দিকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন বন্দির মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার আরমান, রায়হান, শ্যামল, ফজলে রাব্বি বাবু, জসিম, রাহাত। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি। তা ছাড়া বাকি কারাবন্দিরা সুস্থ আছে। তারা খাওয়া-দাওয়া করছে। বর্তমানে এই কারাগারে ৬৬৯ জন কারাবন্দি রয়েছে। কোনো রাজনীতিক বা জঙ্গি আসামি নেই। আর কয়েদিদের কেউ পালাতে পারেনি।