আরএমইউর বেশিরভাগ সদস্য আত্মগোপনে, হচ্ছে না সিন্ডিকেট সভা
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বেশিরভাগ সিন্ডিকেট সদস্য আত্মগোপন করায় সিন্ডিকেট সভা করতে পারছেন না রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (আরএমইউ) নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক। আরএমইউর সম্মেলন কক্ষে গত রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই তথ্য জানান।
উপাচার্য বলেন, ২০১৬ সালে তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করলেও গত আট বছরে এই তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করা এখনও সম্ভব হয়নি। রাজশাহী ও আশপাশের প্রায় দুই কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে এক হাজার ২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা যায়নি। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল তৈরি ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০টি ফ্যাকাল্টি চালু করা যায়নি। চিকিৎসাসেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করাও সম্ভব হয়নি।
উপাচার্য বলেন, সরকারের পতনের পর ২৫ সদস্যবিশিষ্ট সিন্ডিকেটের বেশিরভাগ সদস্য আত্মগোপন করায় সিন্ডিকেট সভা করা যাচ্ছে না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে নতুন করে সিন্ডিকেটকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
উপাচার্য আরও বলেন, ২০১৬ সালের ১২ মে প্রকাশিত ১৮নং আইন দ্বারা রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতোমধ্যে আট বছর অতিবাহিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, তা হলো—
১. রাজশাহী জেলা এবং এর আশপাশের প্রায় দুই কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এক হাজার ২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা।
২. চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিষয়ক জনবল তৈরি ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০টি ফ্যাকাল্টি চালু করা। এবং
৩. চিকিৎসাসেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এসব লক্ষ্য অর্জনে স্বচ্ছতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে রাজশাহী অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে সাংবাদিকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা চান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক।
উপাচার্য আরও বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে। প্রথমে রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা বিভাগ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত ছিল। ২০২১ সালে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন খুলনা বিভাগে অবস্থিত চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক হয়ে যায়। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিকেল, ডেন্টাল, নার্সিং, আইএইচটি, হামদর্দ মিলিয়ে সর্বমোট ৭৬টি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোতে বর্তমানে কেবল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু রয়েছে।
এখনও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অফিস, ভবন বা ক্যাম্পাস গড়ে ওঠেনি উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, সরকারের অনুমোদনক্রমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে তাদেরই ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। তবে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস ও ভবন নির্মাণকল্পে ইতোমধ্যে ৬৭.৬৭৯২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গত ৮ মে জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ করা এই ভূমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। জমি অধিগ্রহণ বাবদ মোট ব্যয় হয়েছে ৭৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রকল্প এলাকায় সীমান প্রাচীর নির্মাণ, প্রবেশ ও বহির্গমন দ্বার নির্মাণ সংক্রান্ত দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং মাটি ভরাট ও বালু ভরাট কাজের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ সময় উপাচার্য তাঁর লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস ও ভবন নির্মাণ, পোস্টগ্রাজুয়েশন কোর্স চালু এবং গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও জানান।
মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম। এ সময় পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুম মুনির, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) ডা. জাকির হোসেন খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।