‘জিপিএইচ ইস্পাত অনন্য প্রতিভা’য় চ্যাম্পিয়ন মনসুরা মুবাশিরা
জিপিএইচ গ্রুপের উদ্যোগে জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে প্রচারিত বাংলাদেশের প্রথম মাল্টি-ট্যালেন্ট হান্ট রিয়েলিটি শো ‘জিপিএইচ ইস্পাত অনন্য প্রতিভা’ ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শনিবার রাতে ‘গ্র্যান্ড প্রাইজ গিভিং সেরিমনি’র মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় ও আলোচিত এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বিভাগে মনসুরা মুবাশিরা, দ্বিতীয় হয়েছেন ড্যান্সার বিভাগে ইয়াসিন আরাফাত আর তৃতীয় হয়েছেন ম্যাজিসিয়ান বিভাগে শেখ স্বপন। পুরস্কার হিসেবে প্রথম বিজয়ী পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। দ্বিতীয় বিজয়ী দুই লাখ টাকা আর তৃতীয় বিজয়ী পেয়েছেন এক লাখ টাকা। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে আসা বাকি ১৫ প্রতিযোগীকেও ক্রেস্ট ও পুরস্কার দেওয়া হয়।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন- ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লিমিটেডের (এনটিভি) হেড অব ফিন্যান্স গোলাম রওশন ইয়াজদানী, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের হেড অব করপোরেট (বিপণন ও বিক্রয়) শোভন মাহবুব শাহাবুদ্দিন রাজ, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের হেড অব করপোরেট (বিক্রয়) এনামুল হক, বিচারক বিশিষ্ট নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা সালাউদ্দিন লাভলু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মেহের আফরোজ শাওন।
রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে এক মনোমুগ্ধকর নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। ‘গ্র্যান্ড প্রাইজ গিভিং সেরিমনি’ অনুষ্ঠানটি এনটিভি পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এরপর বিভিন্ন সময়ে এককভাবে পারফর্ম করেন প্রতিযোগী মোনালিসা ও বাবু এবং যৌথভাবে পারফর্ম করেন ইলা ও জাহিন, মেহেদি ও পারভেজ, শেখ স্বজন ও সৃজন কুমার, রাকিব ও সাইমুন। এ ছাড়া দলগতভাবে পরিবেশনা তুলে ধরেন ইভানা, মুন্না, পারভেজ মেহদি ও বাবু মরমা; সেতু, নাফিসা, খালিদ, বাণী ও প্রত্যয় এবং ইরা, ইয়াসমিন, প্রীতম ও পপ উজ্জ্বল।
অনুষ্ঠানে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের হেড অব করপোরেট (বিপণন ও বিক্রয়) শোভন মাহবুব শাহাবুদ্দিন রাজ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা মানুষের কল্যাণে তাদের পাশি আছি। এটা অব্যাহত থাকবে। যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের অভিনন্দন। যারা বিজয়ী হননি তাদেরও অভিনন্দন। কারণ, তাদের প্রতিভা মানুষ দেখেছে। অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে আগামী দিনে তারা নিজেদের প্রস্ফূটিত করবে, এটাই প্রত্যাশা রাখি।’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানান তিনি।
জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের হেড অব করপোরেট (বিক্রয়) এনামুল হক বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিযোগিরা আসার সুযোগ পেয়েছেন। এতে দেশের শিল্প আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।’
এই অনুষ্ঠানকে যারা পরিপূর্ণতা দিয়েছেন তাদের সবার প্রতি অভিনন্দন জানান এনামুল হক। তিনি শিল্পীদের উদ্দেশে বলেন, সফলতার কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। অধ্যাবসায় প্রয়োজন। যারা সফল হয়েছে তারা আগামী দিনে অনেক দূর যাবে এই প্রত্যাশা রাখি। যারা বিফল হয়েছে তারা আবার চেষ্টা করবে বলে আশা রাখি।’
জিপিএইচ ইস্পাত শুধু মুনাফার জন্য কাজ করে না- উল্লেখ করে এনামুল হক বলেন, ‘আমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণেও নিজেদের নিয়োজিত রেখেছি। এই অনুষ্ঠান তার প্রমাণ। আমাদের প্রতিষ্ঠান আগামী দিনেও এই ধরনের অনুষ্ঠানে মানুষের পাশে থাকবে।’
‘বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অপ্রকাশিত বিরল প্রতিভাকে খুঁজে বের করে তাঁদের একটি প্ল্যাটফর্ম দেওয়া, যেখানে তাঁরা তাঁদের প্রতিভাকে গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারবেন’- এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এ বছরের ১২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটির টাইটেল স্পন্সর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। গত ১৭ জুলাই এনটিভির পর্দায় আয়োজনটির গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার রাতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। আর এর মধ্য দিয়ে পর্দা নামল এবারের ‘জিপিএইচ ইস্পাত অনন্য প্রতিভা’র।
মাল্টি-ট্যালেন্ট হান্ট রিয়েলিটি শোতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা সালাউদ্দিন লাভলু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মেহের আফরোজ শাওন এবং সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পী হৃদয় খান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জনপ্রিয় সেলিব্রেটিরা অতিথি হিসেবে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ওয়াহিদুল ইসলাম শুভ্র।
নাচ, গান, আবৃত্তি, মার্শাল আর্ট, অ্যাক্রোব্যাট, চিত্রশিল্প, র্যাপ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর প্রতিযোগিরা তাদের প্রতিভা তুলে ধরেন। এই রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের বয়সের কোনো বাধা ছিল না। এই শোয়ে আট বছরের প্রতিযোগী যেমন ছিল, তেমনই ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রতিযোগীও অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রতিযোগিরা নিবন্ধন করে এতে অংশ নেন। এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব বিভাগীয় শহরে অডিশন রাউন্ড হয়। নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে অডিশন রাউন্ডে উত্তীর্ণরা মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশব্যাপী ২৫ হাজার প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেন। এর মধ্য থেকে পাঁচ হাজার জন সুযোগ পান টেলিভিশন রাউন্ডে। প্রায় দুই মাস ধরে চলে এই আয়োজন। অডিশন রাউন্ড, সিলেকশন রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল রাউন্ড এবং চূড়ান্ত পর্বে বিভক্ত ছিল গোটা আয়োজনটি। প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে সেরা ১৮ জন চূড়ান্ত লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হন; যাঁদের নিয়ে হয় গ্র্যান্ড ফিনালের আসর।