শুটিংয়ের অনুমতি, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেও বাধা নেই
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে দীর্ঘদিন বিনোদন অঙ্গনে নতুন বা পুরোনো প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের জীবনই আর আগের মতো বর্ণিল নেই। বিশেষ করে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অবস্থা করুণ। তবে আশার কথা, ধীরে ধীরে স্বল্প পরিসরে হলেও শুটিং শুরু হচ্ছে।
পাশের দেশ ভারতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রি শুটিংয়ের জন্য জল্পনা-কল্পনা শুরু করেছে। মুম্বাই তথা বলিউড বেশ সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছে। হলিউডেও স্বল্প পরিসরে খুব সতর্কতার সঙ্গে শুটিংয়ের জল্পনা চলছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত ১ জুন থেকে চলচ্চিত্র ও নাটকের শুটিংয়ের অনুমতি দিয়েছে। তবে সেখানকার টিভি প্রযোজকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চুম্বন বা কোনো ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকবে না।
বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১ জুন থেকে নাটকের শুটিং করার অনুমতি দেয় নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড, এ সংগঠনের অধীনে রয়েছে ১৫টি আন্তসংগঠন। এবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সিদ্ধান্ত, ৫ জুন থেকে চলচ্চিত্রের শুটিং করা যাবে। শুধু শুটিং নয়, চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত অন্য কাজও করা যাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
করোনাকালে নাটক-সিনেমায় চুম্বন বা ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়ে অন্যান্য দেশে নানা আপত্তি থাকলেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এমন দৃশ্যে কোনো বাধা নেই। তবে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে বাধা না থাকলেও করোনা যেন না ছড়ায়, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি।
চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল বিকেলে আমরা সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী শুক্রবার থেকে চলচ্চিত্রের শুটিং করা যাবে। শুধু শুটিংই নয়, ডাবিং, এডিটিংসহ চলচ্চিত্রের সব ধরনের কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দিয়েছি। তবে সেখানে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কাজ করতে হবে।’
চলচ্চিত্রে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অন্তরঙ্গ দৃশ্য ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব নয়, বিষয়টি এমন নয়। তবে যাঁরা এরই মধ্যে ছবির অধিকাংশ শুটিং শেষ করেছেন, যাঁরা গানের শুটিং ছাড়া বাকি কাজও শেষ করেছেন, তাঁদের বেলায় এই নিয়ম মেনে শুটিং করা সম্ভব নয়। যে কারণে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের প্রয়োজন আছে। তাছাড়া ছবিতে তো মারামারিও থাকে। সেই দৃশ্যে কাজ করার সময়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়।’
ঘনিষ্ঠ দৃশ্য প্রসঙ্গে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘যেহেতু অন্তরঙ্গ দৃশ্য ও মারামারির দৃশ্য ছাড়া সাধারণত চলচ্চিত্রের শুটিং সম্ভব নয়, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এসব দৃশ্যের শুটিং করা যাবে। করোনার মতো বিশেষ বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে হয়তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুটিং সম্ভব। তবে সব চলচ্চিত্রে নয়।’
খসরু বলেন, ‘যেকোনো শুটিং শুরুর আগে ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীদের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। আমরা প্রথমেই জানতে চাইব, ইউনিটে করোনায় আক্রান্ত কেউ আছে কি না। নায়ক-নায়িকা, খল অভিনেতা, মা-বাবা, এমনটি গানের সময় নায়ক-নায়িকার পেছনে যে শিল্পীরা নাচ করেন, প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। ক্যামেরা, লাইট, মেকআপসহ প্রত্যেক কলাকুশলীকে পরীক্ষা করাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, পরীক্ষা করানোর পর শুটিং করা যাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। প্রত্যেককে গ্লাভস, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ইউনিটে জ্বর পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে কঠোরভাবে, যেন ইউনিটের কারো কোনো ক্ষতি না হয়।’
খসরু আরো বলেন, ‘মনে রাখতে হবে সবার আগে জীবন। নিজের জীবন না বাঁচলে এই বিনোদন দিয়ে কী হবে। একজন আক্রান্ত হলে যেহেতু ইউনিটের সবারই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে, তাই সবাইকে বলব, নিজের জায়গা থেকে সচেতন থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মানায় কোথাও গাফিলতি হলে নিজেই প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ করুন আর আমাদের বিষয়টি অবগত করুন।’
গত ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ চলচ্চিত্রের সব ধরনের শুটিং। গতকাল মঙ্গলবার এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ৫ মে থেকে চলচ্চিত্রের শুটিং করা যাবে। এ সভায় খোরশেদ আলম খসরু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলমসহ বেশ কয়েকজন নেতা।