বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করতে চাই : স্বস্তিকা
প্রায় একই সঙ্গে মুক্তি পেল টলিউড অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের দুটো ছবি- একটি ‘অনুব্রত ভালো আছো?’ আর অন্যটি ‘শেষের কবিতা’। অভিনেত্রী হিসাবে স্বস্তিকা পেয়েছেন সম্মানজনক পুরস্কার। অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।
টলিউডের ব্যস্ততম এই নায়িকার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। জনপ্রিয় এই নায়িকার সাক্ষাৎ পেতে একদিন যোগাযোগ করা হল টেলিফোনে। বাংলাদেশের ‘এনটিভি অনলাইন’-এর কথা বলতেই এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন সাক্ষাৎকার দিতে। সেইমতো সময় নিয়ে একদিন হাজির হলাম অভিনেত্রীর সামনে।
প্রথম দেখাতেই বললাম, আপনার পোস্টারে তো গোটা শহর ঢেকে গিয়েছে। কথা শুনেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে ফেললেন অভিনেত্রী। তারপর বেশ আদুরে গলায় ব্যস্ততার সঙ্গে বললেন, কোথায়, কোথায়? বাংলাদেশে? এরই মধ্যে... ধুর বোকা বানাচ্ছেন। এবারে আমিও না হেসে পারলাম না। হাসতে হাসতেই বললাম, না না, বাংলাদেশে নয়, কলকাতার কথা বলছি। এবারে স্বস্তির শ্বাস ফেলে স্বস্তিকা, বললেন, তাই বলুন। তবে ওয়েট করুন।
কয়েকদিনের মধ্যে দেখবেন আপনাদের দেশেও (বাংলাদেশে) শুধুই আমার পোস্টার। (এবারে হেসে বললেন) ছবিগুলো তো আন্তর্জাতিক স্বত্ব পেয়েছে। তাই বাংলাদেশেও রিলিজ হবে।
পরিচালক পার্থ সেনের ‘অনুব্রত ভালো আছো?’ ছবিতে তো পেলেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলাদেশের সকলের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
স্বস্তিকা: বাংলাদেশের সবাইকে আমার তরফেও ধন্যবাদ রইলো। আসলে কুইন্সল্যান্ড চলচ্চিত্র উৎসবে ‘অনুব্রত ভালো আছো?’ ছবিটি দেখানো হয়েছিলো। সেখানকার জুরি অ্যাওয়ার্ড থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছি। প্রথমে তো ভেবেছিলাম ব্যাপারটা ভূয়া। তারপর ছবির পরিচালক পার্থ সেন নিজেই ফোন করে বললেন, হ্যাঁ রে পুরস্কার পেয়েছিস। ইনফ্যাক্ট কি হয়, আমি তো সেভাবে পুরস্কার টুরস্কার পাইনা। তাই হঠাৎ করে পেলে ভালোই লাগে।
প্রশ্ন : ‘অনুব্রত ভালো আছো?’ ছবিতে প্রায় পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, অথচ আপনার নিজের বয়স মাত্র ৩৪ বছর। কেমন লেগেছে চরিত্রটিতে অভিনয় করতে?
স্বস্তিকা: দেখুন আমি অভিনয় করতে এসেছি। চরিত্রটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাটাই আমার কাজ। কিছুদিন আগেই আমার হিন্দি ছবি ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি’ রিলিজ হল। সেই ছবির চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আমায় তিন ঘন্টা মেক আপ ভ্যানে কাটাতে হয়েছিলো। এটা আমার কাছে রিডিকুলাস। আমার কাছে কোনওদিনই মেক আপ বিষয়টি প্রায়োরিটি নয়। আসল কথা হল, আমি যে চরিত্রে অভিনয় করছি, সেটা দেখে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। তবে তো মুখ খুলবো, চিত্রনাট্য বলবো, অভিনয় করবো। দর্শকরা যদি আমাকে দেখেই মনে করে, এই যা! এর তো ৩২ বছর বয়েস। তাহলে তো গোটা ছবিটাই মার খাবে।
প্রশ্ন : পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘শেষের কবিতা’ তেও তো আপনাকে দেখতে অসাধারণ লেগেছে।
স্বস্তিকা: (কথা শেষ করতে না দিয়েই) দেখতেই শুধু ভালো লেগেছে! আর অভিনয়টা? ( হাসতে হাসতে বললেন) অভিনয়টা কি পঁচা করেছি? আসলে ওই ছবিতে লাবণ্যর চরিত্রে কঙ্কণা সেনশর্মা অসাধারণ অভিনয় করেছে। আমার তো মনেই হয় যে, কঙ্কণাই একমাত্র লাবণ্য করতে পারতো।
প্রশ্ন: আপনার প্রতিটি ছবিই যেন অন্য ছবিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
স্বস্তিকাঃ টাচ উড। আপনাদের ভালোবাসা থাকলেই হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবচেয়ে চর্চিত উপন্যাস এই ‘শেষের কবিতা’। এখানে রবীন্দ্রনাথ অদ্ভূত একটা রোমান্সের ইকুয়েশন দেখিয়েছেন। ভেবে দেখুন, সেই সময় উনি কতোটা এগিয়ে ভেবেছেন! আমার অন্যতম প্রিয় উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’। আর যখন লালদা (পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়) আমায় কেটির চরিত্রের জন্য অফারটা দিলো আমি তো অভিভূত।
প্রশ্ন : এই ছবির জন্য তো বহুদিন ধরে ইংল্যান্ডে শুটিং করেছেন।
স্বস্তিকা: হ্যাঁ, কেতকি মানে কেট যে সময়টা ইংল্যান্ডে ছিলো। এই ছবিতে খুব একটা চড়া মেক আপ ছিল না আমার। তবে গাউন, হ্যাটস এইসব ছিলো। জানেন, তখনকার মেয়েরা আবার শাড়ির সঙ্গে হ্যাটস পরতো। আমার তো এসব সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে খুব ভালোও লেগেছে।
প্রশ্ন : আপনি নিজেই তো এই ছবির প্রচারের কাজে ভীষণভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। সংবাদপত্রে ছবি, মেইল পাঠিয়েছেন, নিজে প্রেস কনফারেন্সের দায়িত্ব নিয়েছেন...
স্বস্তিকা: আসলে আপনি বলতে চান, সুমনের (পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়) জন্য এসব করেছি তো? ওর সঙ্গে একটা রিলেশন আছে বলেই করছি, এসব বলতে চান তো? পরিস্কার করেই বলুন না। আসলে কি জানেন, আমি বরাবরই খুব সোজা কথা বলি। সোজা কথা শুনতেও ভালোবাসি। (একটু থেমে) শেষের কবিতা খুব কম বাজেটের ছবি। তাই সেই অর্থে ছবি মুক্তির জন্য যেভাবে আজকাল খরচ করা হয়, সেভাবে কিছু করা হয়ে ওঠেনি। আর অফকোর্স সুমনের জন্য এটা করতেই পারি। সবসময় তো আর ক্যমেরার সামনে বা পিছনে থাকলে চলবে না। এইসব ছবির প্রোমোশনাল কাজেও থাকতে হবে। তাতে তো নিজের অভিজ্ঞতা বাড়ে।
প্রশ্ন: বহু বছর ইন্ড্রাষ্ট্রিতে রয়েছেন। বহু সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে আপনি গেছেন। আজ সেই ফেলে আসা অতীত নিয়ে কী বলবেন?
স্বস্তিকা: (খানিকটা সময় চুপচাপ থেকে) খুব ছোটবেলায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। অন্বেষা, আমার মেয়েও খুব তাড়াতাড়ি এসে যায়। তারপর নানা কারনে বিয়েটা টিকলো না। এরপর অন্বেষাকে বড় করতে করতে ভাবলাম অভিনয় জগতে আসি। বাবা সন্ত মুখোপাধ্যায় তো বহু বছর ধরেই বাংলা ছবির জগতে আছেন। প্রথমেই টলিপাড়ায় মেগা ধারাবাহিক ‘দেবদাসি’ দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করি। তারপর একটু সবার নজরে পড়লাম ‘এক আকাশের নীচে’ ধারাবাহিকের জন্য। তারপর বড় পর্দায় আসি। পরিচালক উর্মি চক্রবর্তীর ছবি ‘হেমন্তের পাখি’-তে। ব্যস! সেই শুরু।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছে আছে?
স্বস্তিকাঃ অফকোর্স। আসলে আমি তো মাত্র ১০ বছর সময় এই ইন্ড্রাষ্ট্রিতে কাজ করছি। এর আগে বাংলাদেশের ছবি যেরকমটা হতো, তার থেকে এখন অনেক পালটে গেছে। আপনি ওখানকার টিভি কমার্শিয়ালগুলো দেখুন বা টেলিছবিগুলো দেখুন। আমাদের টালিগঞ্জেও যেমন বাংলা ছবির ধারা বদলে গেছে, আপনাদের বাংলাদেশেও তেমনই বদলেছে। এই নতুন ধারার ছবিতে টালিগঞ্জে কাজ করেছি। আপনারাও (বাংলাদেশ) নানা এক্সপেরিমেন্ট করছেন। সেই সব ছবিতে কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন : জীবনে এত চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। কোনও আফসোস আছে?
স্বস্তিকাঃ আছে তো বটেই। আমার মা গোপা মুখোপাধ্যায় খুব রিসেন্টলি মারা গেলেন। মা আমার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার খবরটা দেখে যেতে পারলেন না। এই আফসোস তো আছেই।
প্রশ্ন : আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কি?
স্বস্তিকাঃ আমার মেয়ে অন্বেষা। ওই আমার জীবনের সব । মাঝে মাঝে মনে হয়, ও আমার মা, আমি ওর মেয়ে।
এবারে বিদায় নেওয়ার পালা। ওঠার আগে বাংলাদেশের সকলের পক্ষ থেকে আবারও ধন্যবাদ জানালাম স্বস্তিকাকে। উত্তরে আবারও অভিনেত্রীর স্বভাবোচিত সেই মিষ্টি হাসি। ঠোঁটে হাসির রেশ রেখে দিয়েই বললেন, আপনাদেরকেও (বাংলাদেশের মানুষদের) ধন্যবাদ রইলো। আর বাংলাদেশের জলসা, ফাংশন বা চলচ্চিত্র উৎসবে এবার যাওয়ার সুযোগ পেলে কোনভাবেই মিস করবো না। কথা দিচ্ছি যাবোই। সবাই ভালো থাকবেন।