হিচককের ভয়!

আলফ্রেড হিচকক। অদ্ভুত সব ছবি বানিয়ে মানুষদের ভয় দেখিয়েছেন যে লোকটা, সেই লোকটার আজ জন্মদিন। ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট ইংল্যান্ডের অ্যাসেক্সে জন্মেছিলেন বিখ্যাত এই পরিচালক। অদ্ভুত ছবি যেমন বানিয়েছেন লোকটা তেমনি তাঁর জীবনেও ঘটেছে বেশকিছু অদ্ভুত ঘটনা, যা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। মুভিস ড্রপ জানিয়েছে সে রকম ১০ তথ্য
১. আলফ্রেড হিচকক কখনো সেরা পরিচালক হিসেবে অস্কার পুরস্কার জেতেননি। তাঁর ভক্তরা হয়তো এটা বিশ্বাস করতে চাইবেন না, কিন্তু এটাই সত্য। তবে ‘রেবেকা’ ছবির জন্য জি. থালবার্গ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। হিচকক পরিচালিত ১৬টি ছবির মধ্যে মাত্র একটি ছবি অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিল। সেরা পরিচালক হিসেবে অস্কার পুরস্কার না পেলেও তাঁর ‘রেবেকা’ ছবিটি অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছিল।
২. সারা জীবন মানুষকে ভয় দেখিয়েছেন। হিচককের নিজেরও কিন্তু ভয় ছিল বিভিন্ন বিষয়ে। সারাজীবন পুলিশকে খুব ভয় পেয়েছেন তিনি। খারাপ ব্যবহার করার জন্য মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার বাবা তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ভয় দেখানোর জন্য তাঁর বাবার অনুরোধে এক পুলিশ অফিসার পাঁচ মিনিটের জন্য তাঁকে হাজতে পুরেছিলেন। সেই থেকে হিচককের পুলিশভীতি!
৩. হিচককের একমাত্র সন্তান, মেয়ে প্যাট্রিসিয়া। ১৯২৮ সালের ৭ জুলাই জন্মেছিল প্যাট্রিসিয়া। বাবার পরিচালনায় ‘সাইকো’ এবং ‘স্ট্রেইঞ্জার্স’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্যাট্রিসিয়া। যদিও হিচকক এটা নিয়ে তেমন কোনো প্রচারণা চালাননি সে সময়।
৪. ১৯৮০ সালে স্যার আলফ্রেড হিচকককে নাইটহুড উপাধি দেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সে বছরই মারা যান হিচকক। মৃত্যুর মাত্র কিছুদিন আগেই এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
৫. নিজের সিনেমা দেখতে ভয় পেতেন হিচকক সাহেব! ১৯৬৩ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার নিজের সিনেমা দেখতে ভয় পাই। আমি কখনো সেগুলো দেখতে হলে যাই না। মানুষ যে কীভাবে আমার ছবি সহ্য করে আমি জানি না।’
৬. হিচকক যে শুধু ভয় দেখাতেন তা কিন্তু নয়, শুটিংয়ের সময় বিভিন্ন রকমের মজার কৌতুক শোনাতেন তিনি ইউনিটের লোকজনদের। তবে বেছে বেছে মানুষের ফোবিয়া নিয়ে কৌতুক বলতেন তিনি। যেমন কেউ হয়তো তেলাপোকা খুব ভয় পায়। তার সামনে তেলাপোকা সংক্রান্ত একটি কৌতুক বলে একইসঙ্গে ভয় এবং আনন্দ দিতেন হিচকক।
৭. হিচককের নামকরা ছবি ‘সাইকো’। একই নামের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে ‘সাইকো’ ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই উপন্যাসের সব কপি কিনে নিয়েছিলেন হিচকক, যাতে কেউ ছবিটির শেষ পরিণতি সম্পর্কে আগে থেকে জানতে না পারে। আজগুবি শোনালেও এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। তারা লিখেছিল, নয় হাজার ডলার দিয়ে বাজার থেকে সাইকো উপন্যাসের সব কপি কিনে নিয়েছিলেন হিচকক।
৮. অস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছিলেন আলফ্রেড হিচকক। কখনো সেরা পরিচালক হিসেবে অস্কার পুরস্কার পাননি হয়তো সেজন্য ক্ষোভ ছিল তাঁর মনে। অস্কারে বিশেষ পুরস্কার গ্রহণের পর হিচকক শুধু বলেছিলেন, ‘ধন্যবাদ’।
৯. ১৯৬০-এর দশকে ডিজনিল্যান্ডে ছবির শুটিং করতে চেয়েছিলেন হিচকক। কিন্তু তাঁকে শুটিং করার অনুমতি দেননি ওয়াল্ট ডিজনি। কারণ ডিজনির মতে হিচকক হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি ‘সাইকো’ নামের একটা বিরক্তিকর ছবি বানিয়েছিলেন!
১০. ডিম নিয়ে ফোবিয়া ছিল হিচককের। এ জন্যই কখনো ডিম খেতেন না তিনি। ডিম নিয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ডিম খুব ভয় পাই। এই জিনিসটা দেখলেই আমার মনে হয় এটা বিদ্রোহ করে বসবে। একটা প্রায় গোল টাইপের সাদা জিনিস, যেটার মধ্যে কোন ফুটো নেই, ভাঙলে হলুদ রংয়ের কুসুম বের হয়। আপনি কখনো এর চেয়ে অদ্ভূত কোনো বস্তু দেখেছেন? রক্তের রং লাল হয়, সেটা দেখতে খারাপ লাগে না বরং তার মধ্যে একটা আনন্দের ব্যাপার রয়েছে কিন্তু ডিম জিনিসটা খুবই ভয়ঙ্কর, তাই আমি কখনো ওটা খেয়ে দেখিনি।’