কাজ না করেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার!
‘আমি যে ছবিতে কাজ করিনি সেই ছবির জন্য আমি কেমন করে পুরস্কার পাই? বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক বেশি বিব্রত। আমাদের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই অপেক্ষা করছিলাম। সবাই আমার কাজের জন্য প্রশংসা করতো, কিন্তু কেন পুরস্কার পাচ্ছিলাম না তা এখন বুঝতে পারছি। এমন করে যদি অনিয়ম হয় তা হলে আমার মতো যারা কাজ করছেন তারা কিভাবে পুরস্কার পাবে?’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬-এর শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালকের পুরস্কার নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছিলো। বিষয়টি হাবিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি এভাবেই এনটিভি অনলাইনের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবছর ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬-তে ‘নিয়তি’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হিসেবে পুরস্কৃত হন তিনি। অথচ হাবিবের দাবী এই ছবিতে কাজই করেননি তিনি।
তাহলে এই পুরস্কার কি তিনি গ্রহণ করবেন? উত্তরে হাবিব বলেন, ‘অবশ্যই গ্রহণ করবো, তবে তা ‘নিয়তী’ ছবির জন্য নয়। আমার আরেকটি ছবিতে নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজ করেলিাম, সেই ছবিটি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, সেটির নাম ‘অনেক দামে কেনা’, আমি চাই সেই ছবির জন্য আমাকে পুরস্কার দেওয়া হোক। তাহলে আমি আনন্দের সাথে পুরস্করটি গ্রহণ করতে পারবো। কারণ এই ছবিতে আমি কাজ করেছি। ‘নিয়তি’ ছবিতে আমি কাজ করিনি।’
হাবিব আরো যোগ করেন, ‘ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতি সবাই চায়, সেই হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হচ্ছে সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। আমি মনে করি যদি কোন অনিয়ম না হয়, তা হলে আমরা যারা মূল ধারার চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করি, তারা প্রতি বছরই পুরস্কার পাবো। দেখা যায় যারা বাইরে থেকে কাজ করেন, মূল ধারার নৃত্য পরিচালক নন, তারাই প্রতি বছর পুরস্কার নিয়ে যান।’
তবে কী করে ‘নিয়তি’ ছবিতে হাবিবের নাম অন্তর্ভুক্ত হলো সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না হাবিব। ‘নিয়তি’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাকির হোসেন রাজু। আর এটি প্রযোজনা করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।
২০১৬ সালের ছবির জন্য ঘোষিত পুরস্কারের মধ্যে জাজ মাল্টিমিডিয়া দুটি ছবিতে মোট ছয় ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়। ‘নিয়তি’ ছবির দুটি ক্যাটাগরি হলো শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা (যৌথভাবে)। আর ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ ছবির চারটি ক্যাটাগরি হলো: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্র অভিনেতা (যৌথভাবে), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গীতিকার ও শ্রেষ্ঠ সুরকার।
এক নজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার - ২০১৬
১. আজীবন সম্মাননা: যৌথভাবে ববিতা ও ফারুক।
২. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : অজ্ঞাতনামা (ফরিদুর রেজা সাগর)
৩. শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : ঘ্রাণ (এস. এম. কামরুল আহসান)
৪. শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: জন্মসাথী (একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)
৫. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: অমিতাভ রেজা চৌধুরী (আয়নাবাজি)
৬. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে : চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি)
৭. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে : যৌথভাবে তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)
৮. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রের : যৌথভাবে আলী রাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
৯. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রের : তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)
১০. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে : শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা)
১১. শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি (শঙ্খচিল)
১২. শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৩. শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক : মো. হাবিব (নিয়তি)
১৪. শ্রেষ্ঠ গায়ক: ওয়াকিল আহমেদ (অমৃত মেঘের বারি, চলচ্চিত্র : দর্পণ বিসর্জন)
১৫. শ্রেষ্ঠ গায়িকা : মেহের আফরোজ শাওন (যদি মন কাঁদে, চলচ্চিত্র : কৃষ্ণপক্ষ)
১৬. শ্রেষ্ঠ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৭. শ্রেষ্ঠ সুরকার : ইমন সাহা (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৮. শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার: তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা)
১৯. শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: যৌথভাবে অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি)
২০. শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
২১. শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি)
২২. শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক: উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)
২৩. শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: রাশেদ জামান (আয়নাবাজি)
২৪. শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (আয়নাবাজি)
২৫. শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা: যৌথভাবে সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)
২৬. শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান: মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)