পুরস্কার কেলেঙ্কারি
‘নাম জমা দেওয়ার সময় কেউ ভুল করেছেন’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬-এর শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালকের পুরস্কার নিয়ে গতকাল সোমবার বিস্ফোরক তথ্য দেন নৃত্য পরিচালক মোহাম্মদ হাবিব। এনটিভি অনলাইনকে তিনি জানান, ‘নিয়তি’ ছবিতে তিনি কাজই করেননি, তারপরও এই ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এতে তিনি বিস্মিত। আর কীভাবে তাঁর নাম ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেটাও তিনি জানেন না।
বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল চলচ্চিত্রপাড়ায়। পরে এনটিভি অনলাইনের অনুসন্ধানে হাবিব স্বীকার করেন, তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিটিতে কাজই করেননি। খবরটি প্রকাশের পরপরই সংশ্লিষ্ট মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকেই সত্য স্বীকারের জন্য ধন্যবাদ জানান হাবিবকে। ‘নিয়তি’ ছবির পরিচালক জাকির হোসেন রাজুও তাঁকে সাধুবাদ জানান।
জাকির হোসেন রাজু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এনটিভি অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারি, কোরিওগ্রাফার হাবিব বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি এই ছবিতে কাজ করেননি। আমি হাবিবকে সত্য স্বীকার করার জন্য সাধুবাদ জানাই।’
কাজ না করলেও কীভাবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’-এর জন্য হাবিবের নাম অন্তর্ভুক্ত হলো, এটা জানতে চাইলে পরিচালক রাজু বলেন, ‘আমি আসলে বলতে পারব না কীভাবে তার জমা দেওয়া হয়েছে। আসলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য যখন ছবি নমিনেশন পায়, তখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নাম জমা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, যিনি নামগুলো লিখে জমা দিয়েছেন, তিনি ভুল করে হাবিবের নাম দিয়ে ফেলেছেন। আসলে নাম জমা দেওয়ার সময় যদি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে নিতেন, তাহলে এই ভুল হতো না।’
সেন্সর বোর্ডের সাবেক সচিব জালাল উদ্দিন মুন্সি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমার যতদূর মনে আছে ‘নিয়তি’ ছবিটি সেন্সর হওয়ার সময় নৃত্য পরিচালনায় হাবিবের নাম দেওয়া হয়েছিল। যখন একটি ছবিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য নমিনেশন দেওয়া হয়, তখন আমরা সেন্সর বোর্ড থেকে টাইটেলে যে নাম থাকে, সেখান থেকে নাম পাঠাই। এখন কে কাজ করেছে আর কে কাজ করেনি, সেটি তো লোকেশনে গিয়ে আমদের দেখা সম্ভব নয়।”
তবে পরিচালক জাকির হোসেন রাজু বলছেন, ছবির টাইটেলে হাবিবের নাম ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না ছবির টাইটেলে হাবিবের নাম আছে। আমার মনে হয়, পুরস্কারের জন্য নাম জমা দেওয়ার সময় কেউ ভুল করেছেন।’
‘নিয়তি’ ছবিটি প্রযোজনা করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। ২০১৬ সালের ছবির জন্য ঘোষিত পুরস্কারের মধ্যে জাজ মাল্টিমিডিয়া দুটি ছবিতে মোট ছয় ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়। ‘নিয়তি’ ছবির দুটি ক্যাটাগরি হলো শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা (যৌথভাবে)। আর ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ ছবির চারটি ক্যাটাগরি হলো : শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্র অভিনেতা (যৌথভাবে), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গীতিকার ও শ্রেষ্ঠ সুরকার।
এক নজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার - ২০১৬
১. আজীবন সম্মাননা : যৌথভাবে ববিতা ও ফারুক।
২. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : অজ্ঞাতনামা (ফরিদুর রেজা সাগর)
৩. শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : ঘ্রাণ (এস. এম. কামরুল আহসান)
৪. শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : জন্মসাথী (একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)
৫. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক : অমিতাভ রেজা চৌধুরী (আয়নাবাজি)
৬. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে : চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি)
৭. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে : যৌথভাবে তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)
৮. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রের : যৌথভাবে আলী রাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
৯. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রের : তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)
১০. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে : শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা)
১১. শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি (শঙ্খচিল)
১২. শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক : ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৩. শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক : মো. হাবিব (নিয়তি)
১৪. শ্রেষ্ঠ গায়ক: ওয়াকিল আহমেদ (অমৃত মেঘের বারি, চলচ্চিত্র : দর্পণ বিসর্জন)
১৫. শ্রেষ্ঠ গায়িকা : মেহের আফরোজ শাওন (যদি মন কাঁদে, চলচ্চিত্র : কৃষ্ণপক্ষ)
১৬. শ্রেষ্ঠ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৭. শ্রেষ্ঠ সুরকার : ইমন সাহা (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৮. শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার : তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা)
১৯. শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: যৌথভাবে অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি)
২০. শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
২১. শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি)
২২. শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক : উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)
২৩. শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : রাশেদ জামান (আয়নাবাজি)
২৪. শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক : রিপন নাথ (আয়নাবাজি)
২৫. শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা : যৌথভাবে সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)
২৬. শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান: মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)