ডি ক্যাপ্রিওর সেরা ১০ ছবি

টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। বিজ্ঞাপনে নিয়মিত না হলেও বছর বছর আলোড়ন তোলা সব ছবিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলাটা যেন অনেকটা রুটিন করে ফেলেছেন এই সুপারস্টার। ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া এই তারকা আজো অস্কার পাননি, হলিউড জগতে আজো এ এক বিচিত্র পরিহাস! এ পর্যন্ত তিনবার গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও জয় করেছেন শতাধিক পুরস্কার। পাঁচ-পাঁচবার নমিনেশন পেয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ‘অস্কার-না-পাওয়া’র জন্য বিখ্যাত এই অভিনেতা।
সম্প্রতি দ্য হলিউড রিপোর্টারের বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক লেসলি ফেল্পেরিন কয়েক দিন আগে এই আলোচিত অভিনেতার জীবনে এখন পর্যন্ত অভিনয় করা সিনেমাগুলোর মধ্যে সেরা ১০টির তালিকা করেন, যার বিস্তারিত থাকছে এই আয়োজনে।
দ্য উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট (২০১৩)
দুনিয়া যদি ডি ক্যাপ্রিওর প্রতি আরেকটু সদয় হতো, তবে ২০১৩ সালে সম্ভবত হলিউডের সব পুরস্কারই নিজের ঝুলিতে তুলে নিতে পারতেন তিনি, মনে করেন অনেকে। এই সিনেমার একটি অংশে দেখা যায়, ‘ক্যুয়ালুড মেল্টডাউন’ শিকার হয়ে গাড়ির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন ডি ক্যাপ্রিও, যাকে ‘ফিজিক্যাল কমেডি’র সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ বলেছিলেন অনেক চলচ্চিত্র বিশ্লেষক। জর্ডান বেলফোর্টের ভূমিকায় এই সিনেমার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের স্বভাবজাত ‘কারিশমা’ দিয়ে দর্শককে মাত করে রেখেছিলেন ডি ক্যাপ্রিও।
দ্য বিচ (২০১০)
‘সেলিব্রেটি’র মতো ‘দ্য বিচ’ সিনেমায়ও দর্শক পান ডি ক্যাপ্রিও ঘরানার আনন্দবাদের স্বাদ। এই সিনেমায় ডি ক্যাপ্রিওর অভিনয় জানান দেয়, চাইলে ‘অন্ধকার চরিত্র’গুলোকে কতটা তীক্ষ্ণ, বিদ্রূপাত্মক আর সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন একজন অভিনেতা।
রেভল্যুশনারি রোড (২০০৮)
স্যাম মেন্ডেসের পরিচালনায় এই সিনেমায় দেখা যায় এক তরুণ দম্পতিকে, যারা ব্যক্তিগত টানাপড়েনের সঙ্গে বাঁচার যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, একই সঙ্গে বেড়ে উঠছে তাঁদের দুই শিশুসন্তান। হতাশায় মোড়ানো এক স্বামীকে এখানে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলেন ডি ক্যাপ্রিও। অসাধারণ অভিনয় আর নির্মাণশৈলীর কারণে অস্কারের তিনটি ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পায় ‘রেভল্যুশনারি রোড’।
রোমিও + জুলিয়েট (১৯৯৬)
শেকসপিয়রের ক্লাসিক রোমিওকে সুনিপুণভাবে এই সিনেমায় তুলে আনেন আধুনিক পোশাকের রোমিও ডি ক্যাপ্রিও। যদিও কিঞ্চিৎ নাটকীয়তাহীন ডায়ালগের জন্য সিনেমাটির সমালোচনা করেন বোদ্ধারা, তবুও ডি ক্যাপ্রিওর ব্যক্তিত্ব আর শারীরিক উপস্থাপন সিনেমাটিকে করে তুলেছে অনন্য।
সেলিব্রেটি (১৯৯৮)
যথাযোগ্য প্রশংসা না পাওয়া উডি অ্যালেনের এই সিনেমায় ডি ক্যাপ্রিওর ভূমিকা ছিল ‘ক্যামিও’ ধরনের, অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই সিনেমায় ডি ক্যাপ্রিওকে দেখে মনে হয় তাঁর বয়স বেড়েছে ১০ বছর আর উচ্চতা ৫ ইঞ্চি। বাস্তবিক জীবনের ডি ক্যাপ্রিওর মতোই সেলিব্রেটির ডি ক্যাপ্রিও ছিলেন ‘পার্টি-অ্যানিম্যাল’। সিনেমার চরিত্রে সচরাচর দেখা পাওয়া ডি ক্যাপ্রিওর চেয়ে ‘সেলিব্রেটি’র ডি ক্যাপ্রিও একটু আলাদাই বটে।
শাটার আইল্যান্ড (২০১০)
এ পর্যন্ত মার্টিন স্করসেসির যত সিনেমায় ডি ক্যাপ্রিও অভিনয় করেছেন, শুধু সেগুলো নিয়েই আলাদা একটা তালিকা করা যায়। ‘শাটার আইল্যান্ডে’ ডি ক্যাপ্রিওর অভিনয় দেখেই বোঝা যায়, স্করসেসির এই লিও-প্রীতির কারণ। অভিনয় আর নির্মাণ দুয়ে মিলিয়ে ‘শাটার আইল্যান্ড’ মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল দর্শক আর সমালোচক মহলে।
ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান (২০০২)
৩০ বছর বয়সী ডি ক্যাপ্রিও এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেন ১৯ বছর বয়সী একজন কন আর্টিস্টের ভূমিকায়, যে কি না আবার মানুষের সামনে নিজেকে প্রকাশ করে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক হিসেবে। টানা অনেক সিনেমায় রাশভারী চরিত্রে অভিনয়ের পর ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’-এ ডি ক্যাপ্রিওকে দেখা যায় একটু ভিন্নরূপে। মার্টিন স্করসেসির সঙ্গে ডি ক্যাপ্রিওর পথচলা শুরু হয় এই সিনেমার মধ্য দিয়ে।
হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ? (১৯৯৩)
মানসিক বিকারগ্রস্ত অ্যামির ভূমিকায় অভিনয় করে ডি ক্যাপ্রিও প্রমাণ করেছিলেন, তাঁর শিশুসুলভ চেহারা আর গম্ভীর মনোভাবের বাইরেও আছেন আরেক ডি ক্যাপ্রিও। এই সিনেমায় তাঁর অসাধারণ অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের মনে করিয়ে দেয় চরিত্রের বিভিন্নতার সঙ্গে নিখুঁতভাবে মানিয়ে যাওয়া জনি ডেপের কথা। যা পরে আরেকবার প্রমাণ পায় তাঁর ‘ক্যারিয়ার পার্ক’ সিনেমার মাধ্যমে।
টাইটানিক (১৯৯৭)
টাইটানিকের সংলাপ নিয়ে সমালোচকরা যা-ই বলুক না কেন, শুধু ডুবে যাওয়া টাইটানিক আর ডি ক্যাপ্রিওর সুন্দর চেহারার আকর্ষণেই যে লাখ লাখ দর্শক টাইটানিকের টিকেট কেনেননি কেবল, তা কিন্তু স্পষ্ট। কেট উইন্সলেট-ডি ক্যাপ্রিও জুটির অদ্ভুত রসায়ন আর প্রতিশ্রুতিশীল অভিনয়ই এই সিনেমাটিকে করেছে সর্বকালের ‘বেস্ট সেলিং’ সিনেমার একটি।
দিস বয়েজ লাইফ (১৯৯৩)
মাত্র ১৯ বছর বয়সে এই সিনেমায় অভিনয় করেন ডি ক্যাপ্রিও। অসাধারণ অভিনয় প্রতিভা আর মেধার সমন্বয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র মহলে প্রথম নিজের জাত চেনান ডি ক্যাপ্রিও। এই সিনেমায় তাঁর অত্যাচারী সৎবাবার চরিত্রে অভিনয় করেন রবার্ট ডি নিরো। পরিচালক মার্টিন স্করসেসির ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা এ দুজনকে পরে একসঙ্গে পর্দায় দেখা যায় আর মাত্র একবারই, ‘মার্ভিনস রুম’ সিনেমায়।