অস্কার ২০১৬
৮ ছবির লড়াই, কোনটি হবে সেরা?

অস্কারের ৮৮তম আসরের মনোয়নের পালা শেষ। প্রতিবারের মতো মনোনয়নের তালিকায় রয়েছে এ সময়ের সেরা হিসেবে বিবেচিত সব ছবি। সেই সঙ্গে আবার আরেক শোরগোল, পুরো অস্কারই এবার শ্বেতাঙ্গদের দখলে। এ নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক। তবে সেরা ছবি কোনটি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে তো সবার বাড়তি আগ্রহ থাকছেই। সবকিছু তো অনুষ্ঠানের দিনেই বোঝা যাবে, তবে তার আগে অস্কার থার্মোমিটারের উত্তাপটাও একটু বুঝে নেওয়া ভালো। তাঁর আগে একবার দেখে নেওয়া যাক সম্ভাবনার পাল্লা কার কতটা ভারী।
০৮. দ্য বিগ শর্ট
মুক্তির পর বাজারে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি দ্য বিগ শর্ট। এএফআইয়ের একটি টেস্ট প্রিমিয়ারের পর পরই ভাগ্য খুলে যায় এই ছবির। অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লে এবং ফিল্ম এডিটিংয়ের জন্য পরিচালকের অস্কার মনোনয়নসহ অ্যাকাডেমি মনোনয়নও পায় দ্য বিগ শর্ট। গল্প আর নির্মাণ প্রকৃতির কারণে দ্য বিগ শর্ট উতরে যেতে পারে ব্যালটের ভোটেও। ছবিটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে এই আসরের ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে।
০৭. ব্রিজ অব স্পাইজ
ইন্ডাস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড সার্কিটে ‘ব্রিজ অব স্পাইজ’-এর উপস্থিতি সরব, আর্ট ডিরেক্টর থেকে শুরু করে প্রযোজক, স্ক্রিন অ্যাক্টর এমনকি লেখকরাও পেয়েছেন মনোনয়ন। এ ছাড়া আছে সিনেমাটোগ্রাফার, সাউন্ড মিক্সার আর ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট আর্টিস্টের মনোনয়ন। সব দিক দিয়ে তালিকায় অন্যতম শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ‘ব্রিজ অব স্পাইজ’-এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হতে পারে পরিচালক হিসেবে স্টিভেন স্পিলবার্গের মনোনয়ন না পাওয়া।
০৬. ব্রুকলিন
‘টুয়েলভ ইয়ার্স আ স্লেভ’ আর ‘বার্ডম্যান’-এর জন্য পরপর দুবার অস্কার বিজয়ী পরিবেশক প্রতিষ্ঠান ফক্স সার্চলাইটের জন্য এ বছরটা তুলনামূলক ধীর বলা যেতে পারে। অভিবাসী জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত ছবিটি এক বছর আগে সানড্যান্স প্রিমিয়ার থেকে এখন পর্যন্ত মন জুগিয়েছে অনেক দর্শকের। কিন্তু দিনশেষে ভোট তো আর দর্শক দেবেন না! পুরস্কারের জন্য ব্রুকলিনের মন জোগাতে হবে অ্যাকাডেমিরই। সেদিক বিবেচনায় বিশ্লেষকরা একটু পেছনেই রাখছেন এই ছবিকে।
০৫. ম্যাড ম্যাক্স : ফিউরি রোড
সর্বমোট মনোনয়নের হিসাবে ‘দ্য রেভেন্যান্ট’-এর পরেই রয়েছে এই ছবিটি। ১০টি ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছে এই মাথা নষ্ট করা অ্যাকশন থ্রিলার। সেরা ছবির দৌড়ে মনোনয়নের সংখ্যা খানিকটা এগিয়েই রাখবে এই ছবিকে। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে এগিয়ে থাকলেও অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, ম্যাড ম্যাক্সের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে অস্কারের অঘোষিত ‘বিশেষ ঘরানার’ ছবির প্রতি প্রবল ঝোঁক। ‘ম্যাড ম্যাক্স’ সে গোত্রীয় ছবি নয়, তা তো সবারই জানা!
০৪. দ্য মার্শিয়ান
টরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভালে সাড়া জাগানোর পরেই অস্কারের দৌড়ে আসে দ্য মার্শিয়ান। ব্যালটের ভোটে ‘দ্য বিগ শর্ট’-এর মতোই হয়তো এগিয়ে থাকবে ছবিটি, কিন্তু পরিচালক হিসেবে বেস্ট ডিরেক্টর ক্যাটাগরিতে রিডলে স্কটের অনুপস্থিতি হুমকি হতে পারে এ ছবির অস্কার জয়ের পথে।
০৩. দ্য রেভেন্যান্ট
এবারের অস্কারের প্রায় প্রতিটি ক্যাটাগরিতেই আছে ‘দ্য রেভেন্যান্ট’। মাত্র কদিন আগেই ছবিটি ঝুলিতে পুরলো তিন তিনটি গোল্ডেন গ্লোব, সঙ্গে বক্স অফিসের জমজমাট আয় তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য সব ছবির চেয়ে সেরা হওয়ার দাবি এই ছবির একটু শক্তই বটে। আজ পর্যন্ত অস্কারে কোনো নির্মাতাই পরপর দুবার পাননি বেস্ট পিকচার অ্যাওয়ার্ড, তবে কি ইনারিতুই নতুন করে লিখতে যাচ্ছেন ইতিহাস? সময়ই বলে দেবে। সেই সঙ্গে ডি ক্যাপ্রিওর বিষয়ে আর নাই বলা হোক!
০২. রুম
রুমের ভাগ্য প্রথম থেকেই একটু মন্দ। স্বীকৃতির দিক দিয়ে প্রথম থেকেই খুব বেশি ভাগ্যের দেখা পায়নি ‘রুম’। বাফটায় একপ্রকার ব্যর্থই এই ছবি। কিন্তু অ্যাকাডেমি সহায় হয়েছে নির্মাতার। সেরা ছবির ক্যাটাগরিতে ‘রুম’ দখল করে নিয়েছে নিজের জায়গা, সঙ্গে পরিচালকও পেয়েছেন মনোনয়ন। এই লড়াইয়ে পার সহজে পার পেলেও, চূড়ান্ত পুরস্কারে কি নিজের জায়গা করে নিতে পারবে ‘রুম’? সময়েই বলে দেবে চূড়ান্ত ফল। সত্যি বলতে, সম্ভাবনাটা একটু কমই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
০১. স্পটলাইট
নতুন বছরে ‘স্পটলাইটের’ অর্জন বেশ ভালো বলা যায়। সেরা ছবি হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সমালোচক পুরস্কার এখনো এই ছবির দখলে। তবে গোল্ডেন গ্লোব কিংবা বাফটা, কোনোটাতেই খুব একটা সুবিধে করতে পারেনি টম ম্যাকার্থির ‘স্পটলাইট’। প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে অস্কারে সেরা ছবি ছাড়াও ‘স্পটলাইট’ মনোনয়ন পেয়েছে ডিরেক্টর এবং এডিটিং ক্যাটাগরিতে।
তাহলে কে হাসবে শেষ হাসি? আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে প্রতিযোগিতা হবে ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ আর ‘স্পটলাইট’-এর মধ্যে। ‘দ্য রেভেন্যান্ট’-এর দাবিকে একটু সবল করে তুলেছে সাম্প্রতিক গোল্ডেন গ্লোবের অর্জনগুলো, ওদিকে ‘স্পটলাইট’ এর আছে টিকে থাকার শক্তি। এরপরে যদি কাউকে বিবেচনা করতে হয় তবে সেটা অবশ্যই ‘দ্য বিগ শর্ট’। স্পটলাইটের মতোই বাস্তব জীবন ঘনিষ্ঠ ঘটনা নির্ভর এই ছবি দাগ কেটে যায় যেকোনো দর্শকের মনেই। তালিকার অন্য কোনো ছবিরই নেই এমন জোরালো আবেদন। ফিকশনের আবরণে ঢাকা এই তির্যক স্যাটায়ার দেখায় অর্থনৈতিক সংকটের শুরুটা, যেখানে ম্যাকার্থির জার্নালিজম ড্রামারও আছে দর্শকমনকে প্রভাবিত করার শক্তি।
‘দ্য রেভেন্যান্ট’-এর জোরালো দাবির পেছনে আছে যুক্তি আর বাস্তবতা। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও তাঁর গোল্ডেন গ্লোব উৎসর্গ করেছেন পৃথিবীর সব আদিবাসীকে। সঙ্গে জানান দিয়েছেন আবহাওয়া পরিবর্তনের কথা, যা এরই মধ্যেই ছড়িয়ে গেছে গণমাধ্যমের কল্যাণে। পুরস্কার পাক আর নাই পাক, তালিকায় শীর্ষে থাকা এই ছবি কামিয়ে নিয়েছে অজস্র দর্শকহৃদয় আর শ্রদ্ধা।
বলতে হয় ‘দ্য মার্শিয়ান’ ছবিটির কথাও, বিজ্ঞান আর দর্শনের অদ্ভুত সুন্দর এক মিশেল ‘দ্য মার্শিয়ান’ দেখিয়েছে জীবনযাপনে এই দুটি বিষয়ের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা। সাই-ফাই ঘরানার এই ছবি আরো শক্তিশালী দাবিদার হতে পারত পরিচালক হিসেবে স্কটের একটি মনোয়নয়নের মাধ্যমে।
অনেক কিছুই ঘটতে পারে মূল মঞ্চে। চূড়ান্ত ব্যালটের খেল ঘুরিয়ে দিতে পারে যে কারো ভাগ্য, যা জানতে চোখ রাখতে হবে ২৮ ফেব্রুয়ারির মঞ্চে।