অস্কারবঞ্চিত বিখ্যাত ১০ তারকা
একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের কাছে অন্য সব পুরস্কারের চেয়ে একটু বেশিই আকর্ষণীয়। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত রাস্তা অস্কার। কিন্তু চলচ্চিত্রের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অসাধারণ মেধা আর অভিনয়শৈলী সত্ত্বেও অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর ভাগ্যেই জোটেনি এই পুরস্কার। এ সময়ে এখনো পর্যন্ত এর চলমান উদাহরণ লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। ক্যাপ্রিও ছাড়াও আরো বাঘা বাঘা ১০ শিল্পীর কথা থাকছে এই আয়োজনে।
১। এডওয়ার্ড জি রবিনসন (১৮৯৩-১৯৭৩)
১৯৩০ থেকে ৪০-এর দশকের আর দশটা গড়পরতা ‘তারকার মতো ছিলেন না রবিনসন। দুর্দান্ত অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে দর্শক হৃদয়ে সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই অভিনেতা তাঁর জীবিত অবস্থায় অস্কার জিততে পারেননি। আর তাঁর চেয়েও বড় দুঃখের বিষয় হলো, মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পরেই তাঁর অভিনীত ‘দ্য হুড ইন লিটল সিজার’ (১৯৩১)-এর জন্য তাঁকে দেওয়া হয় একটি ‘সৌজন্য অস্কার’।
২। মেরিলিন মনরো (১৯২৬-৬২)
নামটির সঙ্গে সবাই পরিচিত, এমনটাই তো স্বাভাবিক। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা জুড়েই জনপ্রিয়তায় শীর্ষে ছিলেন হাজারো যুবকের ঘুম কেড়ে নেওয়া মনরো। ১০ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে পুরোপুরি সফল। অস্কারের দৌড়ে কমেডির মাধ্যমে একাডেমির মন জয় করাটা বরাবরই কঠিন, কিন্তু মনরো তো আর দশজন সাধারণ কমেডি অভিনেত্রী ছিলেন না। অনন্য প্রতিভা আর মনকাড়া সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও একাডেমির কাছ থেকে ‘সাম লাইক ইট হট’-এর জন্য ‘সম্মানজনক উল্লেখ ছাড়া’ আর কিছুই পাননি এই অভিনেত্রী।
৩। ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড (১৯৩৫-)
অলিভার স্টোনের ‘জে এফ কে’ চরিত্রের জন্য বিখ্যাত এই কানাডিয়ান অভিনেতা ভালোবাসা আর প্রশংসা কুড়িয়েছেন সর্বত্র। যোগ্য হলেও একাডেমিক কমিটি কখনো মনোনয়নই দেয়নি তুখোড় এই অভিনেতাকে। হলিউড আর অস্কারের দুনিয়ায় ‘কানাডিয়ান অভিশাপ’ নামে একটি কথা প্রচলিত আছে। ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের ‘অস্কার’ না পাওয়ার জন্যও দায়ী করা হয় কানাডিয়ান অভিশাপকে। এ ছাড়া আর এমন কী বা আছে যা সাদারল্যান্ডের অস্কারজয় ঠেকায়!
৪। মিয়া ফ্যারো (১৯৪৫-)
মিয়া ফ্যারোর রূপের প্রশংসা সর্বজনবিদিত। সৌন্দর্যের মায়াজালে বন্দি করেছেন উডি অ্যালেনসহ সমগ্র হলিউডকে। কিন্তু তাঁর রূপ কিংবা অভিনয়, কোনোটি দিয়েই গলাতে পারেননি একাডেমির মন, যার কারণে কখনো মনোনয়ন পর্যন্ত পাননি অস্কারে। যদিও ‘রোজমেরিস বেবি’ সিনেমায় তাঁর মাত করা অভিনয় আশা জাগিয়েছিল অজস্র ভক্ত-সমালোচকের—তবে ভাগ্য বদলায়নি তাঁর।
৫। মেগ রায়ান (১৯৬১-)
তারকাখ্যাতি, সৌন্দর্য বা দারুণ অভিনয়ক্ষমতা; কোনোকিছুতেই কমতি ছিল না মেগ রায়ানের। নিজের সেরাটাই দিয়েছেন সিনেমায়—কুড়িয়েছেন প্রশংসা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারজুড়ে একমাত্র অপূর্ণতার নাম অস্কার। ১৯৮৯ সালের ‘হোয়েন হ্যারি মেট স্যালি’-তে অসাধারণ অভিনয় করেও মেগ রায়ানের অস্কার না পাওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন অনেকেই, সমালোচনা করেছিলেন একাডেমি কমিটির।
৬। জন ব্যারিমোর (১৮৮২-১৯৪২)
ড্রিউ ব্যারিমোর কে কে না চেনে! প্রশংসাও কম পাননি জীবনে। এত কিছুর পরও খ্যাতি আর মেধার দিক দিয়ে দাদা জন ব্যারিমোরের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে ড্রিউ। কারণ হলিউডের অভিজাত ব্যারিমোর পরিবারের কর্ণধার বিখ্যাত এই থিয়েটার অভিনেতা ছিলেন টকিজ যুগের অন্যতম পুরোধা। ১৯৩১ সালে এ ফ্রি সৌল এর জন্য জনের ভাই লিওনেল অস্কার জিতলেও কখনোই অস্কার জেতা হয়নি জন ব্যারিমোরের। যদিও লিওনেলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যোগ্য আর মেধাবী মনে করা হয় তাকে।
৭। অ্যালান রিকমান (১৯৪৬-২০১৬)
ভিলেন হয়েও দর্শক হৃদয়ে যিনি থাকতেন নায়ক হয়ে আর কেউ নন, তিনি সদ্য প্রয়াত অ্যালান রিকম্যান। অভিনয়ের প্রয়োজনে দুর্দান্ত রোমান্টিক হিরো থেকে সহজেই হয়ে গিয়েছিলেন ভয়ংকর ভিলেন। ‘ডাই হার্ড’ ছবিতে হ্যান্স গ্রুবারের চরিত্রে অভিনয় করে অ্যালান রিকম্যান নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ন উচ্চতায়। তবে অস্কার কখনোই ধরা দেয়নি এই অসামান্য অভিনেতার কাছে।
৮। ইসাবেলা রোসেলিন (১৯৫২-)
ইনগ্রিড বার্গম্যান তাঁর জীবনে অস্কার জিতেছিলেন তিনটি। অভিনয়ের মাঠ আর তারকাখ্যাতি মিলিয়ে মায়ের চেয়ে খুব পিছিয়ে না থাকলেও অস্কারের দৌড়ে ইসাবেলা রোসেলিনের অর্জন এখনো শূন্য। তবে এখনো আশা ছাড়েননি এই অভিনেত্রীর ভক্তরা।
৯। এমিলি ব্লান্ট (১৯৮৩-)
এই বছরের গোল্ডেন গ্লোবে চারটি মনোনয়ন পাওয়ার পরও এমিলি ব্লান্ট অভিনীত ‘সিকারিও’ অস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও স্থান পায়নি, পায়নি এর আগে কখনো—যা ছিল এমিলি ভক্তদের জন্য হতাশার। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর মেধা দিয়ে নিজেকে সময়ের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন অভিনেত্রী করে তুলেছেন এই অভিনেত্রী। ‘দ্য ডেভিল ওয়্যার্স প্রাডা’ আর ‘মাই সামার অব লাইফ’-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় এখনো জিইয়ে রাখছে ভক্তদের আশা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
১০। হিউ গ্রান্ট (১৯৬০-)
হিউ গ্রান্টকে বলা হয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম ‘সহজাত অভিনেতা’। জনি ডেপ আর ডি ক্যাপ্রিওদের অনেক আগেই যিনি নিজের মেধার প্রতিফলন দেখিয়েছিলেন বারবার ভিন্নধর্মী সব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। রোমান্টিক থেকে শুরু করে কমেডি—সব ক্ষেত্রেই সমান অনবদ্য কিংবদন্তি এই অভিনেতা। অর্জনের তালিকায় একটি অস্কার হিউ গ্রান্টের জন্য অসম্ভব কিছু ছিল না, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তালিকার অন্যদের মতো এই প্রতিভাবান অভিনেতাকেও বঞ্চিত করেছে একাডেমি।
গ্যালারি উঠবে