পরের ছবিতে ডিক্যাপ্রিও সিরিয়াল কিলার!

দীর্ঘ দুই দশকের প্রতীক্ষা আর আক্ষেপের পর্ব চুকিয়ে এবার ঠিকই ‘অস্কার’নিজের করে নিলেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। আর এই সাফল্যের পেছনে থাকা সিনেমা ‘দ্য রেভেন্যান্ট’-এর জন্য যে কী পরিমাণ ত্যাগ আর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে, তা তো এই ছবি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা সবাই টের পেয়েছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ডিক্যাপ্রিওর ‘অস্কার-ভাগ্য’ খোলার পেছনে বিশাল অবদান রয়েছে ‘দ্য রেভেন্যান্ট’-এর জন্য তাঁর এই ত্যাগ আর শারীরিক পরিশ্রমের। আর ঘটনা যদি তাই হয়ে থাকে, তবে ডি ক্যাপ্রিও ভক্তদের জন্য সম্ভবত অপেক্ষা করছে আরেকটি আগাম অস্কারের সুসংবাদ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফে পাওয়া গেল লিওর নতুন ছবির বিশদ ঘটনা।
১৮৯৩ সালের শিকাগো ওয়ার্ল্ডস ফেয়ারের ঘটনা। প্রধান আর্কিটেক্ট ড্যানিয়েল এইচ বার্নহ্যাম এবং আমেরিকার সর্বপ্রথম সিরিয়াল কিলার এইচ এইচ হোমস; এই দুই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ঘটে একইসাথে নিষ্ঠুর এবং ভয়ংকর কিছু ঘটনা। বাস্তব আর লোমহর্ষক এই কাহিনী নিয়ে পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালে একটি উপন্যাস লেখেন সাহিত্যিক এরিক লার্সন—পরবর্তী সময়ে যা আমেরিকায় ‘বেস্ট সেলার’ হয়। এবার এই বইকেই ‘দ্য ডেভিল ইন দ্য হোয়াইট সিটি’ নামে সিনেমায় রূপান্তর করতে যাচ্ছেন পরিচালক মার্টিন স্করসেসি, যেখানে সিরিয়াল কিলার হোমসের চরিত্রে অভিনয় করবেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। এই ছবি হতে যাচ্ছে স্করসেসি-ডিক্যাপ্রিও জুড়ির ষষ্ঠ ছবি।
এই সিনেমার গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র খুনি হোমসের জন্ম নিউ হ্যাম্পশায়ারের হার্মান ওয়েবস্টার মাজেট এলাকায়। পরবর্তী সময়ে মেডিক্যাল স্কুল অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে পড়াশোনা করে হোমস, যেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই শুরু হয় তাঁর অপরাধ যাত্রার। ল্যাব থেকে লাশ চুরি করতে শুরু করে হোমস, প্রয়োজনমতো কাটা-ছেঁড়া আর বিকৃত করে পরবর্তী সময়ে তাঁদের মৃত্যুকে ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ দাবি করে সে হাতিয়ে নিত ইনস্যুরেন্সের টাকা।
কুখ্যাত এই খুনির পরবর্তী জীবনের কাহিনী আরো ভয়াবহ। তীক্ষ্ম মেধা আর বিকৃত মানসিকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে, অপরাধে সে যেন ছাড়িয়ে যায় খোদ শয়তানকেও! ঘটনাক্রমে ১৮৯৩ সালের শিকাগো ওয়ার্ল্ডস ফেয়ারের পাশেই নিজের ‘হত্যাদূর্গ’ স্থাপন করে ভয়াবহ ঠান্ডা মাথার এই খুনি। যেখানে রাসায়নিক বিষক্রিয়া ঘটিয়ে অনায়াসে সে খুন করে দুই শতাধিক দর্শনার্থীকে, আর ফলাও করে প্রচার করে নিজের এই ‘অসুস্থ’ এবং সুচতুর হত্যাকাণ্ডের খবর।
হোমস ছিল একই সাথে ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ সিনেমার ‘কন আর্টিস্ট’ ‘ফ্রাঙ্ক অ্যাবেগনেল জুনিয়র’-এর মতো একজন নায়কোচিত প্রতারক আর জন ওয়েন গেসির মতো ভয়াবহ খুনি। যে কারণে লিও ভক্তরা ধরেই নিতে পারেন যে, নিজের স্বভাবজাত ক্যারিশমা আর মেধা দিয়ে এই চরিত্রকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাবেন বৈচিত্র্যময় এই অভিনেতা, যেমনটি তিনি বরাবরই দেখিয়েছেন বিভিন্ন ছবিতে।
নেতিবাচক চরিত্রে ডি ক্যাপ্রিওর মুন্সিয়ানা মোটামুটি সর্বজনবিদিত। জর্ডান বেলফোর্ট কিংবা জে এজার হুভারের মতো নেতিবাচক চরিত্রগুলোকে এমন নিখুঁতভাবে ক’জনই বা ফুটিয়ে তুলতে পারতেন! কিন্তু তারপরও বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, বাস্তবের হোমসকে নিখুঁতভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা এবং নতুন এই ‘সাইকো-কিলার’ ডিক্যাপ্রিওকে দর্শকদের হজম করানো—দুটিই খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। কিন্তু ক্যামেরার পেছনের হালটা যখন স্করসেসির হাতে, প্রত্যাশা খানিকটা বেশি তো করাই যায়। ইতিমধ্যেই হোমস চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন ক্যাপ্রিও।
এটুকু নিশ্চিত যে,‘দ্য ডেভিল ইন দ্য হোয়াইট সিটি’র ‘হোমস’ হতে যাচ্ছে লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিওর ক্যারিয়ারের সর্বপ্রথম বিশুদ্ধ,অবিকৃত, ভয়াবহ ও মনোমুগ্ধকর ভিলেনের চরিত্র।