মার্ভেলের সেরা ১০ সুপারহিরো ছবি
২০০৮ সালের ঘটনা,বক্স অফিসে মুক্তি পেল ‘আয়রন ম্যান’। সেই সঙ্গে, সিনেমা ব্যবসা আর জনপ্রিয়তার সমীকরণে তালগোল পাকিয়ে দিল একটি নাম,‘মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স’, এক ঝটকায় যেন দখলে নিয়ে নিল পুরো দুনিয়ার বক্স অফিস। এই ধারাবাহিকতায় গত আট বছরে মার্ভেল মুক্তি দিল ২০টি সিনেমার, যার প্রায় সবকটি ব্যবসায় ছাড়িয়ে গেছে ডিজনি বা টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সকেও। একইভাবে,গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেল ‘ডেডপুল’। এর পরের ঘটনা ইতিহাসই বলা চলে, যেখানে এখন পর্যন্ত সিনেমাটির আয় প্রায় ৭০ কোটি মার্কিন ডলার! সামনেই আসছে ‘ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা : সিভিল ওয়ার’ আর ‘এক্স মেন অ্যাপোক্যালিপস’, দর্শকদের আগ্রহ আর উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে মনে হচ্ছে মার্ভেলের দেখানোর এখনো অনেক কিছুই বাকি। বিজনেস ইনসাইডারের মতে সেরা ১০ মার্ভেল সুপারহিরোর ছবি নিয়ে এই আয়োজন।
১০. অ্যান্ট ম্যান (২০১৫)
সিনেমাটি নিয়ে এডগার রাইট থেকে শুরু করে জস ওয়েডন, সবারই প্রত্যাশা ছিল অ্যান্ট ম্যান হবে মার্ভেলের এ যাবতকালের সেরা সিনেমা। কিন্তু রাইট আর স্টুডিওর মতের মিল না হওয়ায় ছেড়ে গেলেন পরিচালক। নতুন পরিচালক হিসেবে আসলেন পেইটন রিড—যিনি গল্প ফাঁদলেন এমন এক সুপার হিরোর, যার থাকবে উৎপত্তির ইতিহাস আর সঙ্গে কিছু চটুলতা। পল রুড আর মাইকেল ডগলাসের অভিনয়ে চিন্তার ফলাফল কি বক্স অফিসের সাফল্য, সবই পেয়েছেন তিনি। যদিও এডগার রাইটের ‘অ্যান্ট ম্যান’ কেমন হতো তা জানা সম্ভব না কখনই, তবে এই পিঁপড়ে মানবের কাহিনী কিন্তু বেশ ভালোই আনন্দ দিয়েছে দর্শককে।
৯. দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক(২০০৮)
প্রথম কিস্তিতে দর্শক মন খুব একটা ভরাতে না পারলেও,’হাল্ক’ এর ‘সেমি-সিক্যুয়েল’, ‘সেমি-রিবুট’ দ্বিতীয় কিস্তি পূরণ করেছে সেই প্রত্যাশার অনেকটাই। কিছুটা মজা আর প্রথম থেকেই অ্যাকশনে পরিপূর্ণ ‘দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক’ এর অর্জনের পেছনে রয়েছেছে ‘ব্রুস ব্যানার’(এডওয়ার্ড নর্টন) এর অসাধারণ অভিনয়। নিকট ভবিষ্যতে আরেকটি ‘হাল্ক’-এর দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি না থাওলেও অন্তত একটি ভালো ‘হাল্ক’ সিনেমা তো আমাদের কাছে থেকে গেল ভবিষ্যতের জন্য।
৮. ক্যাপ্টেইন অ্যামেরিকা : দ্য উইন্টার সোলজার (২০১৪)
একটি ভালো সিক্যুয়েলের সবকটি ‘গুণ’ই আছে ‘উইন্টার সোলজার’-এ। নতুন হিরো আর সাথে নতুন ভিলেন নিয়ে আসা এই সিনেমাটির প্রশংসা করতে ‘হার্ডকোর’ মার্ভেল ভক্ত কিংবা বিশেষজ্ঞ কমিক রিডার হওয়া লাগে না। কারণ, নিজের কাজটি কীভাবে করতে হয় পরিচালক রুসো ব্রাদার্সের ভালোই জানা আছে সেটা! ছবি দেখে দর্শকও দ্বিমত করেননি, বক্স অফিসের সাফল্য তো তাই বলে!
৭. ডেডপুল (২০১৫)
‘ডেডপুল’ এক দুর্লভ ছবি বটে! সুপারহিরো মুভি হলেও এটি ‘আর-রেটেড সুপারহিরো সিনেমা’! অতিমাত্রার সংঘর্ষ আর গালাগালির মাঝেও সিনেমাটি অর্জন করে নিয়েছে তাঁর কাঙ্ক্ষিত জনপ্রিয়তা। মুখোশ পরিহিত নায়ক রায়ান রেনল্ডসের দীর্ঘ ১০ বছরের প্রচেষ্টার ফসল ‘ডেডপুল’। নামের ধারের তুলনায় ‘ডেডপুল’ কিঞ্চিত ভোঁতাই বটে, তবুও সিনেমাটি এমন কিছু করে দেখিয়েছে যা অন্য অনেক মার্ভেল সিনেমাই পারেনি। এ কারণে ডেডপুলের সাথে এক্স ম্যানের মিশ্রণ দৃষ্টিকটু তো নয়ই, বরং অনেকাংশে সহজাত মনে হয়েছে।
৬. ক্যাপ্টেইন অ্যামেরিকা : দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জার (২০১১)
‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’-এর সাথে ‘ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা (ক্রিস এভান্স) যুক্ত হওয়ার আগে অসাধারণ এই ‘অ্যাডভেঞ্চার সিনেমাটি উপহার দেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পটভূমির ‘দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জার’ দর্শকদের বার বার মনে করিয়ে দেয় ‘রেইডার্স অব দ্য লস্ট আর্ক’-এর কথা।
৫. আয়রন ম্যান (২০০৮)
মার্ভেলের সিনেমা ইতিহাসের ‘গেম চেঞ্জার’ বলা হয়ে থাকে ‘আয়রন ম্যান’কে। রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে পৃথিবীর কাছে ‘স্টার’ নয়, রীতিমতো সুপারহিরো হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল এই সিনেমা। সত্যি বলতে, তিনিই ‘আয়রন ম্যান’কে বড় পর্দার ‘সুপারহিরো’ করে তুলেছিলেন। এক বিজ্ঞ-অহংকারী সুপারহিরো যার কাছে দুনিয়া বাঁচানোটা ঠিক যতটা জরুরি, আবার ততটাই দরকারি নিজেকে দর্শকের কাছে ‘টনি স্টার্ক’ বানানো। ফলাফল তো জানেনই, লৌহমানবের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কী আর জো আছে!
৪. দ্য অ্যাভেঞ্জার্স (২০১২)
প্রথম ‘অ্যাভেঞ্জার্স’ ছিল একটি জুয়া। প্রথমবারের মতো যেখানে পর্দা ভাগাভাগি করলেন আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা আর থর। নিশ্চিতভাবেই জুয়া খেলায় সফলভাবেই উতরে গেল মার্ভেল, আর সেখানে যেন প্রাণ এনে দিয়েছিলেন জস ওয়েডন। প্রত্যকেটি সফল সুপারহিরো সিনেমার পেছনে ছিল একজন করে অসাধারণ ভিলেন। ‘অ্যাভেঞ্জার্স’-এর ক্ষেত্রে যেটা করে দিলেন টম হিডেলস্টোন—‘স্যাডিস্টিক্যালি চার্মিং’ লোকি!
৩. এক্স-মেন : ডেইজ অব ফিউচার পাস্ট (২০১৪)
‘ডেইজ অব ফিউচার পাস্ট’ ছিল একটি মধ্যমমানের ‘রিবুট’ যেটা হয়ে গেল এখন পর্যন্ত সেরা ‘এক্স-মেন’ সিনেমা। উলভারিনকে অতীতে পাঠিয়ে দিলেন ‘মেন’, দায়িত্ব ইতিহাস বদলানোর। যা বদলে দিতে প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট, ইয়ান ম্যাককেলেন আর হিউ জ্যাকম্যান ত্রয়ীর তেমন একটা বেগই পেতে হয়নি!
২. আয়রন ম্যান ৩ (২০১৩)
ভয়াবহ রকমের বাজে দ্বিতীয় কিস্তির পর হারানো গৌরবের অনেকটাই ফিরিয়ে এনে আয়রন ম্যান ট্রিলজির মর্যাদাকর সমাপ্তি হয় এই সিনেমাটির মাধ্যমে। এইবারে কিংবদন্তি ‘শেন ব্ল্যাক’কে আনা হয় লেখা আর পরিচালনার জন্য। শেষ কিস্তিতে, টনি স্টার্ক হারিয়ে ফেলে তাঁর চিরচেনা স্যূট আর নিরন্তর যুদ্ধ করে তাঁর বুদ্ধির সাথে। সঙ্গে যুক্ত হয় মজার এক ভিলেন, দুয়ে মিলিয়ে সিনেমাটিকে নিয়ে যায় সুপারহিরো সিনেমার জগতে অন্য এক উচ্চতায়।
১. গার্ডিয়ান্স অব দ্য গ্যালাক্সি (২০১৪)
আগেই বলে নেওয়া ভালো, ‘গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি’ কোনো সুপারহিরো সিনেমা নয়। স্বয়ং সিনেমার পরিচালকই বলে দিয়েছেন এ কথা। আর সিনেমাটির এই গুণই একে বানিয়েছে এ যাবতকালের সেরা মার্ভেল সিনেমা। ‘গার্ডিয়ান্স অব দ্য গ্যালাক্সি’ অন্যসব গড়পড়তা মার্ভেল সিনেমার মতো কারো ‘উৎস’ খুঁজতে গিয়ে কিংবা ‘শক্তির’ ব্যাখ্যা করতে গিয়েই শেষ হয়ে যায়নি। এর ভিন্নধর্মী গল্প যেমন টেনেছে ‘হার্ডকোর’ ভক্তদের, তেমনি আকর্ষণ করেছে সাধারণ দর্শকদেরও। ক্রিস প্যাট যে একজন সিনেমা তারকা আর ভিন ডিজেল যে ‘টকিং ট্রি’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেও বেমালুম কাঁদিয়ে দিতে পারে যে কাউকে, তা তো দর্শকরা দেখলেন এই সিনেমা দিয়েই।