জীবনী অবলম্বনে নির্মিত সেরা ১০ হলিউডি ছবি
‘বায়োপিক’ বলতে মূলত সিনেমার একটি আলাদা শাখাকে নির্দেশ করে, যেখানে এক বা একাধিক ব্যক্তির বাস্তব জীবনের ঘটনাগুলো উঠে আসে বড়পর্দায়।
বিখ্যাত মানুষের জীবনীনির্ভর এই সিনেমাগুলো কখনো কখনো হার মানায় যেকোনো কল্পিত গল্পকেও। কলাকুশলীদের মেধা, পরিশ্রম আর নির্মাতার প্রচেষ্টায় ইতিহাসজুড়ে অমর হয়ে আছে অনেক বায়োপিক।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ অবলম্বনে ব্যক্তিজীবনের সত্যিকারের গল্প নিয়ে নির্মিত সেরা ১০টি সিনেমার কথা থাকছে এই আয়োজনে।
১০. দ্য কিংস স্পিচ (২০১০)
সেরা বায়োপিক সিনেমার তালিকার দশম স্থানে রয়েছে ‘দ্য কিংস স্পিচ’। ২০১০ সালের এই ‘হিস্ট্রিক্যাল ড্রামা’ ঘরানার ছবিটির নির্মাতা টম হুপার। কিং ষষ্ঠ জর্জের জীবনী নিয়ে নির্মিত এই ছবিতে নামভূমিকায় অভিনয় করেন কলিন ফার্থ। দর্শকের কাছে সমাদৃতও হন তাঁর সাবলীল অভিনয়ের জন্য। সর্বমোট ২১২টি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায় ‘দ্য কিংস স্পিচ’। জয় করে নেয় ৭৮টি, যার মধ্যে রয়েছে ‘সেরা ছবি’সহ চারটি অস্কার, সাতটি বাফটা ও একটি গোল্ডেন গ্লোব।
৯. ফ্রিদা (২০০২)
২০০২ সালের এই সিনেমার পরিচালক জুলি ট্যেমর। সুররিয়ালিস্ট মেক্সিকান চিত্রকর ফ্রিদা কাহলোর জীবনকাহিনী নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি মন জয় করেছিল দুনিয়াজোড়া দর্শক-সমালোচকের। ‘ফ্রিদা’ অর্জন করে নেয় দুটি অস্কার, একটি গোল্ডেন গ্লোব, একটি ব্রিটিশ ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসহ সর্বমোট ১৭টি পুরস্কার। বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য ছবিটি মোট ৪৭টি মনোনয়ন পেয়েছিল।
৮. ক্যাপোট (২০০৫)
নির্মাতা বেনেট মিলারের এই অসাধারণ সৃষ্টি মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। মার্কিন লেখক ও অভিনেতা ট্রুম্যান ক্যাপোটের জীবনীনির্ভর সিনেমাটিতে ‘ক্যাপোট’-এর চরিত্রে অভিনয় করেন ফিলিপ স্যিমুর হফম্যান। একটি অস্কার, একটি গোল্ডেন গ্লোব, একটি বাফটাসহ ‘ক্যাপোট’ জিতে নেয় আরো অনেক পুরস্কার।
৭. দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক (২০১০)
প্রসিদ্ধ নির্মাতা ডেভিড ফিঞ্চার এই ছবি নির্মাণ করেন। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ফেসবুক’ আর এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, এডোয়ার্ডো স্যাভেরিন ও শন পার্কারদের পথচলার গল্পই এই সিনেমার উপজীব্য। বক্স-অফিসে জমজমাট ব্যবসা তো রয়েছেই, সঙ্গে ‘দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ অর্জন করে নেয় ২০২টি মনোনয়ন—যেখান থেকে জয় করেছে দুটি অস্কার, দুটি বাফটা, চারটি গোল্ডেন গ্লোবসহ সর্বমোট ১২২টি পুরস্কার।
৬. দ্য লাস্ট এম্পেরর (১৯৮৭)
তালিকার অন্যান্য সিনেমার তুলনায় ‘দ্য লাস্ট এম্পেরর’ কিছুটা পুরোনোই বটে। ইতালির প্রখ্যাত নির্মাতা বার্নার্দো বের্তোলুচ্চির অসাধারণ এই সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৮৭ সালে। চীনের সর্বশেষ ‘এম্পেরর’ পুয়্যির জীবনের গল্পকে সেলুলয়েডে নিয়ে আসেন এই নির্মাতা, যেখানে জন লোন অভিনয় করেন নামভূমিকায়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সিনেমার একটি হিসেবে ধরা হয় এই সিনেমাকে। সেরা ছবি, সেরা পরিচালকসহ নয়টি অস্কার জয়ের পাশাপাশি সিনেমাটি জয় করে নেয় আরো অনেক পুরস্কার।
৫. দি এভিয়েটর (২০০৪)
নির্মাতা মার্টিন স্করসেসি আর সদ্য অস্কারজয়ী অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও জুটির অনন্য উপহার এই সিনেমা মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। ‘হাওয়ার্ড হিউস’ নামের এক ব্যক্তির জীবনী ‘দি এভিয়েটর’। হিউসের চরিত্রে অভিনয় করেন ডিক্যাপ্রিও। ডিক্যাপ্রিও ছাড়াও পুরো সিনেমাটি ‘তারকা’য় পরিপূর্ণ। ক্যাথেরিন হেপবার্নের চরিত্রে কেট ব্ল্যাঞ্চেট আর আভা গার্ডেনারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কেট বেকিন্সেল। আরো অভিনয় করেন ইয়ান হোম, জন সি রেইলি, অ্যালেক ব্যাল্ডউইন, জুড ল-এর মতো অনেক সুপরিচিত নাম। ‘দি এভিয়েটর’-এর মতো সমালোচকদের প্রশংসা, পুরস্কার ও বাণিজ্যিক সফলতা খুব কম সিনেমারই আছে। সিনেমাটি জয় করে পাঁচটি অস্কার, তিনটি গোল্ডেন গ্লোব, চারটি ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার।
৪. লা ভি এন রোজ (২০০৭)
২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার পরিচালক অলিভিয়ার ডান। এডিথ পিয়াফের জীবনীনির্ভর এই সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ফরাসি অভিনেত্রী মারিয়ন কতিয়া। নজরকাড়া নির্মাণশৈলী আর মারিয়নের মুগ্ধকর অভিনয়ের কারণে সিনেমাটি পায় ‘বছরের সেরা সিনেমা’র সম্মান আর কতিয়া জিতে নেন সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।
৩. রেইজিং বুল (১৯৮০)
তালিকায় মার্টিন স্করসেসির দ্বিতীয় অবদান তাঁর ১৯৮০ সালের সিনেমা ‘রেইজিং বুলস’। সিনেমাটি নির্মাণ করা হয় একজন ইতালিয়ান-আমেরিকান মিডলওয়েট বক্সারের জীবনকাহিনী অবলম্বনে, যেখানে রবার্ট ডি’নিরো অভিনয় করেন সেই জেক লা মোট্টার চরিত্রে। গল্পে দেখা যায়, কীভাবে এই বক্সারের আত্মদম্ভ আর অনিয়ন্ত্রিত রাগ ধ্বংস করে দেয় তাঁর জীবন আর পারিবারিক সম্পর্ক। সিনেমাটি ইতিহাসের অন্যতম বহুল প্রশংসিত আর ওই বছরের ‘শ্রেষ্ঠ সিনেমা’।
২. শিন্ডলার্স লিস্ট (১৯৯৩)
প্রখ্যাত নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গের কালজয়ী নির্মাণ ১৯৯৩ সালের ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’। জার্মান ব্যবসায়ী ‘অস্কার শিন্ডলার’-এর চরিত্রে অভিনয় করা লিয়াম নেসন, যেখানে বাস্তবের শিন্ডলারের মতো করেই নিজের কারখানায় চাকরি দেওয়ার মাধ্যমে রক্ষা করেন হাজারখানেক পোলিশ ইহুদির জীবন। এই সিনেমাটিকে বিবেচনা করা হয় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সিনেমা হিসেবে। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ আমেরিকান সিনেমার তালিকায় এই ছবির অবস্থান অষ্টম।
১. দি আওয়ার্স (২০০২)
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বায়োপিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় নির্মাতা স্টিফেন ড্যাল্ড্রির ছবিকে। তিনজন নারীর জীবনকে ঘিরে গল্প ‘দি আওয়ার্স’-এর, যাঁদের একজন ভার্জিনিয়া উল্ফ; আর তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেন নিকোল কিডম্যান। ক্ল্যাসিক এই সিনেমা ৮৪টি মনোনয়ন পায় বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য, যার মধ্যে জয় করে ২৬টি। এর মধ্যে ছিল একটি অস্কার, দুটি ব্রিটিশ ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও দুটি গোল্ডেন গ্লোব।