এই শতকের সেরা পাঁচ কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্র
সিনেমার বয়সের প্রায় সমান বয়সীই বলা চলে কল্পবিজ্ঞানকে। ১৯০২ সালের জর্জ ম্যলিয়ের ‘আ ট্রিপ টু দ্য মুন’কে ধরা হয় প্রথম উদাহরণ হিসেবে। ‘স্টার ওয়ার্স' নির্মাণের পর থেকেই প্রবল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে এই ঘরানা। এই জনপ্রিয়তার কারণে নির্মিত হয় কিছু তথাকথিত কল্পবিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশন সংক্ষেপে সাইফাই ব্লকবাস্টার, যা আসলে অ্যাকশননির্ভর সিনেমা। এর পাশাপাশি আসল সাইফাই নির্মাণও। অ্যাকশন আর বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত হওয়া শুরু করল প্রেম, আবেগ কিংবা মানবতার মতো বিষয়গুলোও। চলতি শতককে শুরু থেকেই ধরা হয়েছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমার ভবিষ্যৎ হিসেবে আর বিগত ১৫ বছরের সাইফাই ইতিহাস- এই ধারণার বাস্তবতাকেই প্রতিফলন করে। এই শতকের সেরা পাঁচ সাইফাই ছবি নিয়ে থাকছে এই আয়োজন।
৫. মুন (২০০৯)
ডানকান জোনসের মেধাবী ধারণ আর নিখুঁত উপস্থাপন ‘মুন’। এক একাকী নভোচারী ঘুরপাক খাচ্ছে একটি মাইনিং স্টেশনের আশপাশে, সঙ্গী কেবলই চাঁদের মাটিতে থাকা এক কম্পিউটার। তবে কিছু পরই সেই কম্পিউটারের মধ্য দিয়ে ভেসে আসা একটি কণ্ঠ (কেভিন স্পেসি) জানান দিল যে সে ততটা একা নয় যতটা সে ভেবেছিল। সিনেমাটি দর্শকদের নিয়ে যায় একইসাথে অনেক অনুভূতির মধ্য দিয়ে। রকওয়েলের অভিনয়ের ঘূর্ণনের সাথে সাথে ঘুরতে থাকে দর্শকের আবেগ আর অনুভূতি।
৪. হার (২০১৩)
স্পাইক জোনযের এই সিনেমা একই সাথে একটি নিরেট ভালোবাসার গল্প আবার একটি পুরোদস্তুর সায়েন্স ফিকশন সিনেমা। জোয়াকুইন ফোনিক্সের ক্যারিয়ার সেরা অভিনয় আর অপারেটিং সিস্টেমের ভূমিকায় স্কারলেট জোহানসনের কণ্ঠের মায়া দর্শককে বুদ করে রাখার জন্য যথেষ্ট। যন্ত্রের সাথে আমাদের নিত্যদিনের ভালোবাসাকে অকাট্যভাবেই প্রমাণ করেছেন জোনয, সাথে ছিল তাঁর তীক্ষ্ম বুদ্ধির প্রয়োগ। আবার অন্যদিক দিয়ে ‘হার’ আমাদের দেখায় দিন দিন বেড়ে যাওয়া আমাদের যান্ত্রিকতা এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতাকে।
৩. ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড (২০০৪)
মাইকেল গন্ড্রি ‘ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড’ দিয়ে খুঁজে বের করেছেন ভালোবাসা, হাহাকার আর স্মৃতিকে। চার্লি কফম্যানের এই গল্পের মতো ফোকাস আর শক্তি খুব কম নির্মাতার ফিচারেই খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়ভাঙ্গা জিম ক্যারি প্রাণপণ ছুটে চলেছেন তাঁর স্মৃতিগুলোর পিছনে, যেখানে আছে তাঁর প্রেমিকা ক্লেমেন্টাইন (কেট উইন্সলেট)। কারণ একটু পরই তো মুছে যাবে তাদের সব স্মৃতি আর যেটাকে ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় ও নেই তাদের। জিম ক্যারি, কেট উইন্সলেট আর নির্মাতা মাইকেল গন্ড্রি—তিনজনের জন্যই এই সিনেমাটি ছিল ক্যারিয়ারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
২. আপস্ট্রিম কালার (২০১৩)
সাইফাই ঘরানার নির্মাতাদের মধ্য অন্যতম একজন ‘প্রাইমার’ এর স্রষ্টা শেন ক্যারাথ আর তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত আরেকটি মুগ্ধকর নির্মাণ ‘আপস্ট্রিম কালার’। ‘অফবিট’ এই ভালোবাসার গল্পটি একজন প্রেমিক (এই চরিত্রে ক্যারাথ নিজেই অভিনয় করেন) আর তাঁর প্রেমিকাকে (অ্যামি সিমেটজ) ঘিরে, যারা নিজেদের অজান্তেই প্রেমে পড়েন একে অপরের কিন্তু কিছুদিন পরেই আবিষ্কার করেন যে তাদের পারষ্পরিক এই প্রীতি পেছনে জড়িয়ে আছে একটি সাংকেতিক লিঙ্ক। এর সাথে সম্পৃক্ত একদল শূকর, ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা আর এক অদ্ভূত হিপনোটিস্ট। বিস্ময়, বিজ্ঞান,উৎসাহ আর ভালোবাসার প্রকৃতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন এক গণিত তৈরি করেছে ‘আপস্ট্রিম কালার’, যা করতে গিয়ে সুন্দর হয়ে উঠেছে গণিত নিজেই।
১. চিলড্রেন অব মেন (২০০৬)
‘চিল্ড্রেন অব মেন’কে ধরা হয়ে থাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা সিনেমাগুলোর একটি হিসেবে। আলফানসো ক্যুরনের এই ডিস্টোপিয়ান মাস্টারপিস যেমনটি কাঁপিয়েছে দর্শকদের হৃদয়, তেমনি করে মেক্সিক্যান হেলমারকে করে তুলেছে ‘তারকা’। পিডি জেমসের উপন্যাস অবলম্বনে এই সিনেমা দেখানো হয় এমন একটি পৃথিবীকে যেখানে বিগত দুই যুগে জন্ম নেয়নি কোনো শিশু, সেই সঙ্গে ধসে পড়েছে মানবতা, পৃথিবী যেখানে ধ্বংসের দারপ্রান্তে। থিও’র (ক্লিভ ওয়েন) হাতে বিশ্বাস করে তুলে দেওয়া হয় এক অল্পবয়স্ক অভিবাসী নারীকে (ক্লেয়ার হোপ আশিটে) যে কি না এই প্রজন্মের সর্বপ্রথম গর্ভবতী নারী। ইমানুয়েল লুবেজকির অসাধারণ ফটোগ্রাফি, নির্মাতার বিচক্ষণতা আর জুলিয়্যান মুর, মাইকেল কেইনদের অভিনয় সিনেমাটির নন্দনতত্ত্বকে করে তুলেছে সম্পূর্ণ। এই সিনেমা একইসাথে মজার, গভীর দুঃখের, কিছুটা রাজনৈতিক আর সম্পূর্ণটাই অভিনব। বিশিষ্ট এক চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ‘চিল্ড্রেন অব মেন’ সম্পর্কে বলেছেন, “এই সিনেমা হতাশার নয়, আশার আর এই একুশ শতকে এসে যত পারা যায় ‘আশা’ কুড়ানো দরকার আমাদের।”