চাকরির পাশাপাশি অভিনয় করেছি : ফেরদৌসী মজুমদার
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন কিংবা টেলিভিশন জগতে তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ‘সংশপ্তক’ নাটকের ‘হুরমতি’ চরিত্রটিকে আজীবন মনে রাখবে দর্শক। যাপিত জীবন আর কাজে ফেরদৌসী মজুমদার বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে একই সঙ্গে এক বিস্ময় ও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত এক নাম।
আগামীকাল ২০ মে, বুধবার এই গুণী নাট্যজনকে আজীবন সম্মাননা জানাবে নাগরিক নাট্যাঙ্গন। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কেবল কাজ নয়, প্রতিদিনের জীবন আর বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার।
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর পশ্চিমবঙ্গের টেলিভিশন চ্যানেল তারা মিউজিকের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘আজ সকালের আমন্ত্রণ’ শোনেন তিনি। গান যে তাঁর ভালোলাগার অনেকটা জায়গাজুড়ে রয়েছে! এ ছাড়া প্রায় সময়ই সংগ্রহ করা সিডিতে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের পছন্দের গান শোনা হয়।
নাগরিক নাট্যাঙ্গনের দুই শতক পূর্তি হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে আগামীকাল ২০ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে আটদিনের উৎসব আয়োজন করেছে দলটি। সেখানেই তাঁকে সম্মানিত করা হবে আজীবন সম্মাননায়।
এ নিয়ে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘সম্মাননা একজন শিল্পীর জন্য গর্বের বিষয়।’
শুধু মঞ্চ ও টিভি অভিনয়ে সীমাবদ্ধ ছিলেন না গুণী এই শিল্পী। মাস্টার্স পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। এখনো শিক্ষকতা করছেন তিনি। ভালোলাগা থেকেই কাজটা করেন বলে জানালেন তিনি, ‘যে কাজটা করতে আমার ভালো লাগে, যা আমি ভালোবাসি—সে কাজটাই আমি করি। শিক্ষকতা এবং অভিনয় মন দিয়ে করি আমি। আমার শিক্ষার্থীরাও অনেক শ্রদ্ধা করে আমাকে। কিন্তু আমাকে যদি টক শোতে যেতে বলা হয়, আমি যাব না। কারণ, টক শো আমার ভালো লাগে না।’
ব্যস্ততা কিংবা সময়ের প্রয়োজনে এখন আর আগের মতো টেলিভিশনে অভিনয় করা হয়ে ওঠে না। এখনো মাঝেমধ্যে অভিনয় করেন বটে। তবে সেটা নাটকের চিত্রনাট্য ও নির্মাতা পছন্দ হলেই।
নাট্যশিল্পের বর্তমান অবস্থায় খুব একটা তৃপ্ত নন তিনি। পরিস্থিতির অবনতির জন্য অবশ্য বোধ করেন ভালো চিত্রনাট্য ও নাট্যকারের অভাব। তবে শিল্পীদের কাজ ও চেষ্টা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট তিনি, ‘অভিনয়শিল্পীরা এখন অনেক ভালো কাজ করছেন। কিন্তু ভালো চিত্রনাট্য বা পাণ্ডুলিপি নেই। নাট্যকারের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের সময় আবদুল্লাহ আল মামুন, সেলিম আল দীন ছিলেন। এখন তো তাঁরা নেই। নাটকে নাটকীয়তা ও বক্তব্য থাকতে হয়; কিন্তু এখন এ দুই জিনিসই হারিয়ে গেছে। অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন, যাঁরা একসঙ্গে অনেক নাটকে কাজ করেন। নাটকের এক সেটে কাজ শেষ করে হয়তো একটি ফোন পেয়ে আরেকটি সেটে গিয়ে শুটিং করেন।’
নাটকের পেছনে আগ্রহ কমে যাওয়ার জন্য মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কথাও বললেন তিনি। বিজ্ঞাপনের চাপে জেরবার হয়ে ঠিকমতো নাটকই দেখা হয়ে ওঠে না।
‘বিজ্ঞাপনের জন্য নাটক দেখা সম্ভব হয় না। একটু উৎসাহ নিয়ে দেখতে বসলেও শেষটায় আর শেষ করা হয়ে ওঠে না। কারণ, সংসারের অনেক কাজ থাকে। এত রাত পর্যন্ত কী আর একটা নাটক নিয়ে পড়ে থাকলে চলে? আর এখন অনেক চ্যানেল হয়ে গেছে তো! আমরা নিজেরাও জানি না, কখন কোন অনুষ্ঠান কোথায় প্রচার হয়। এটাও একটা সমস্যা,’ বলেন ফেরদৌসী মজুমদার।
আমাদের নাট্যশিল্প এখন কেমন চলছে? আপনি কী মনে করেন? প্রশ্ন শুনে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘আর্থিক বিষয়ের একটা বড় ব্যাপার আছে। আমাদের সময় আমরা টাকা-পয়সাকে বড় করে দেখিনি, শুধু শিল্পের কথা ভেবেছি। চাকরির পাশাপাশি আমরা অভিনয় করেছি। এখনো তাই করছি। কিন্তু এখনকার শিল্পীরা শুধু অভিনয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখন মনে হয়, টাকা উপার্জন করা অনেক সহজ হয়েছে। কারণ, দিনের পর দিন সবাই শুধু অভিনয় করে যাচ্ছেন। এতে নাটকের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু মানসম্মত শিল্প পাওয়া যাচ্ছে না।’
তবে এ নিয়ে বেশি শঙ্কিত নন শ্রদ্ধেয় এই নাট্যশিল্পী। তাঁর মতে, ‘ভালো কিছু পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। শিল্পীদের এত কিছু ভাবার অবকাশ নেই। কিছু কিছু ভালো নাটক তৈরি তো হচ্ছে!’