দুয়োধ্বনি কেন দেয়?
কান চলচ্চিত্র উৎসবে অফিসিয়াল স্ক্রিনিং-এর সময় দর্শকরা প্রায়ই দুয়োধ্বনি দেন। এ নিয়ে সিনেমা পরিচালক প্রযোজকদের বেশ আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু কেন দর্শকরা দুয়োধ্বনি দেন?
সহজ বাংলায় বললে, এটাই কানের ঐতিহ্য। অর্থাৎ, অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে আপনার সিনেমা এখানে মনোনীত হলো। আপনি দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি পেলেন। সঙ্গে খ্যাতির বিড়ম্বনাটুকুও কিন্তু একটু বেশিই পোহাতে হবে এখানে। ধরুন আপনার সিনেমাটি দেখানো হচ্ছে গ্রান্ড থিয়েটার লুমিয়ের হলে, কিংবা ডেবুসি হলে। সিনেমা চলছে। হঠাৎ দেখবেন কোনো একটা বিষয় বা দৃশ্য দর্শকদের ভালো লাগলো না। তারা দুয়োধ্বনি দেয়া শুরু করেছেন। আপনি এতো কষ্ট করে ফিল্ম বানালেন। তা জায়গাও পেলো মূল পর্বে। কিন্তু বিধি বাম। ভাগ্য আপনার সহায় হলো না। শুনতে হলো কটুকথা।
যা বলছিলাম, এই হলো কানের ঐতিহ্য। এতটুকু শুনে যারা ভয় পাচ্ছেন, ভাবছেন গেলাম না কানে। কী হবে? তাদের জন্য সুখবর। কানে যাদের ছবি এযাবৎ দুয়োধ্বনি পেয়েছে, তাদের সবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলেও অনেকের হয়েছে। যেমন, কোয়েন্টিন টারান্টিনোর দুই বিখ্যাত ফিল্ম ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস এবং পাল্প ফিকশন কিন্তু দর্শকের দুয়োধ্বনি পেয়েছে এখানে। আর মার্টিন স্কোরসেসের মুভি ট্যাক্সি ড্রাইভার? একেও দুটো বাজে মন্তব্য করতে ছাড়েননি কানের দর্শকেরা।
কানের এই দুয়োধ্বনি এতোই বিখ্যাত যে এটাকেও আশীর্বাদ বলে মানেন কেউ কেউ। এই যেমন ২০১৩ সালের মে মাসে ব্রুকলিন একাডেমি অফ মিউজিক তো কানে দুয়োধ্বনি পাওয়া ছবিগুলো নিয়ে একটা পুরো আয়োজনই করে ফেললো। তাই ঘাবড়াবার কিছু নেই। হাতি মরলেও লাখ টাকা।
কানে সিনেমা প্রদর্শনী নিয়ে সবাই খুব রোমাঞ্চের মধ্যে থাকেন। এবার বাংলাদেশের সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর অংশ নিচ্ছে আঁ সার্তে রিগা পর্বে। তারাও জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে খুব রোমাঞ্চিত টিমের সবাই। হাততালি বা দুয়োধ্বনি যাই মেলে, ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে এমন প্রত্যাশা তাদের।
তবে একটা কথা কিন্তু সত্য যে, ফ্রেঞ্চরা সিনেমা নিয়ে কিন্তু খুব সিরিয়াস। এই যেমন আয়োজন যখন প্রায় শেষ দিকে তখন দেখি সারাদিন ধরে একদল বয়োজ্জ্যোষ্ঠ মানুষ বসে আছেন ভেন্যুর সামনে। তারা সবাই সিনেমা ভালোবাসেন, তাই আসেন। আর বলাই বাহুল্য, আর্ট অফ সিনেমায় ফ্রেঞ্চদের অবদান আছে বৈকি!